ভারতের সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে নেই বাংলাদেশ ব্যাংক
ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করেছে মোদি সরকার। এতে ক্ষতির শিকার হয়েছেন অনেক বাংলাদেশি। কিন্তু, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ভারতের সিদ্ধান্তে যারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তাদের জন্য আপাতত কিছুই করার নেই।
ভারতে কালো টাকার আগ্রাসন ঠেকাতে গত মঙ্গলবার থেকে সেদেশের ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করা হয়। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী, বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, দেশে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট মজুদ রয়েছে। এসব নোটের বড় অংশই অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে আসা। ভারত ভ্রমণকারী, ব্যবসায়ী কিংবা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ থাকা এসব নোট এখন তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি নিবন্ধিত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোও অবৈধ পন্থায় মজুদ করা ভারতীয় রুপি নিয়ে পড়েছে আর্থিক ঝুঁকিতে। একইভাবে ১০০০ রুপি ও ৫০০ রুপির নোট বহনের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হচ্ছেন ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা।
জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৩ লাখের মতো মানুষ ব্যবসা, চিকিৎসা এবং পর্যটনের জন্য ভারতে যান। তাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা প্রায়ই ভারতে আসা-যাওয়া করেন। অনেকের কাছেই ৫০০ বা ১০০০ রুপির নোট জমা থাকে।
সাংবাদিক রেজাউল হক কৌশিক বলেন, ‘১০০০ রুপি ও ৫০০ রুপির নোট ভারতে কোনও দোকানদার নিচ্ছেন না। দেশটির গাড়ি বা ট্যাক্সিওয়ালারাও এই নোট নিচ্ছেন না। এমনকি ভারতের মানি এক্সচেঞ্জ এই মুদ্রা নিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে এসেছেন, তারা এখন চরম বিপাকে পড়েছেন। ভারতে এখন খাওয়া দাওয়া করতেও প্রবলেমে পড়ছেন অনেকে। কৌশিক আরও জানান, কিংশুকের এক ডিরেক্টর তাকে জানিয়েছেন, সে একঘণ্টা ঘুরেও ১০০০ রুপির নোট ভাঙাতে পারেনি। তবে যাদের ক্রেডিট কার্ড আছে, তারা একটু স্বস্তিতে আছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক বা বৈধভাবে ভারতীয় রুপি লেনদেনের ব্যবস্থা না থাকায় এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংকও। যদিও সীমান্ত হাটসংলগ্ন ব্যাংক শাখাগুলোতে বেশ কিছু রুপি জমা রয়েছে।
এদিকে দেশের বাজারে যারা হুন্ডিতে ভারতীয় মুদ্রা লেনদেন করতেন, তারা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপদে। বিশেষ করে দেশে ভোগ্যপণ্যে ও মসলাপণ্য ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জানা গেছে, মসলাজাতীয় অধিকাংশ পণ্য ভারত থেকে আমদানি করেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। পণ্য আমদানি সূত্রে ভারতে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় তাদের। ভারত ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করায় বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ীর মজুদ রুপি আটকে গেছে।
এছাড়া দেশীয় মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেও বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মুদ্রা আটকে গেছে। এর বাইরে ঢাকা, চট্টগ্রাম যশোর ও খুলনা অঞ্চলের একশ্রেণির ব্যবসায়ী আছেন, যাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট রয়েছে। এসব ব্যবসায়ী কমিশনের বিনিময়ে মুদ্রা কেনাবেচা করতেন এবং অবৈধভাবে পণ্য আমদানি-রফতানির লেনদেন কমিশনের বিনিময়ে পরিশোধ করতেন। ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বন্ধ হওয়ায় তারাও চরম বিপাকে পড়েছেন। বিপাকে পড়েছেন হিলি স্থলবন্দরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৫০-২০০ ট্রাক ভারত থেকে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসে। আর এসব ট্রাকচালক হিলি স্থলবন্দরে রাতযাপন করেন। এর সুবাদে তারা হিলি বাজারে চাল, ডাল, মাছ, মাংস থেকে বিভিন্ন ধরনের বাজার করে থাকেন, যা ভারতীয় রুপির মাধ্যমে লেনদেন করেন।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরা অঞ্চলের একজন ব্যবসায়ী জানান, প্রায়ই তারা অবৈধ পথে ভারত থেকে পণ্য আনেন। এখন তার কাছে ২ থেকে ৩ লাখ রুপি জমা আছে। এগুলোর মধ্যে এক লাখেরও বেশি ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট। এই নোট নিয়ে বর্তমানে বিপাকে পড়েছেন তিনি। শুধু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা নয়, যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে বসবাস করছে তারাও এখন পড়েছেন বিপাকে।
রবিবার মতিঝিলের একাধিক মানি চেঞ্জার এবং খোলাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিয়ে অনেকেই আসছেন। তবে বেশির ভাগই ফেরত দিচ্ছেন।
মন্তব্য চালু নেই