মাইগ্রেন থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে যে ৪টি খাদ্যাভ্যাস

মাইগ্রেনের নিদারুণ যন্ত্রণার কথা মাইগ্রেনে আক্রান্তরাই কেবল বুঝতে পারেন। মাইগ্রেনের মাথাব্যথা ও যন্ত্রণার পাশাপাশি বমি বমি ভাব, বমি এবং শব্দ ও আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা ইত্যাদি উপসর্গগুলোও দেখা যায়। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাইগ্রেন মস্তিষ্কের গঠনকে স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে। ডেনমার্ক এর ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেন এর গবেষকেরা দেখেছেন যে, যাদের দীর্ঘদিনের মাইগ্রেন থাকে তাদের, যাদের মাইগ্রেন নেই তাদের তুলনায় মস্তিষ্কের হোয়াইট ম্যাটার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকি ৬৮% বৃদ্ধি পায়।

বিরক্তকর মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করার জন্য অনেকেই ঔষধের উপর নির্ভর করেন। কিন্তু বেশীর ভাগ ঔষধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে যা সংকটকে আরো বাড়িয়ে তোলে। হেডেক নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায় যে, নির্ধারিত ঔষধ গ্রহণের ফলে মাইগ্রেনে আক্রান্ত দুই-তৃতীয়াংশের মধ্যেই নিদ্রালুতা, ক্লান্তি, হৃদস্পন্দনের দ্রুততা এবং চিন্তা করতে অসুবিধা হওয়ার মত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। তাই ঔষধের চেয়ে প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভর করাটাই অনেক বেশি কার্যকরী। মাইগ্রেন প্রতিরোধের জন্য প্রাকৃতিক সমাধানের শুরুতেই আসে খাদ্যের বিষয়। এজন্যই মাইগ্রেনের ব্যথা কমানো এবং প্রতিরোধের জন্য আপনি কি খাচ্ছেন তার প্রতি নজর দেয়া এবং আপনার লাইফস্টাইলের সামান্য কিছু পরিবর্তন করা প্রয়োজন। মাইগ্রেন থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে যে ৪টি খাদ্যাভ্যাস সে বিষয়েই জানবো এখন।

। হরমোনের সাথে সম্পর্কিত খাবারের বিষয়ে সতর্ক হোন

মাংস বিশেষ করে গরুর মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্যে হরমোন থাকে। অরগানিক ও তাজা মাংস বেছে নিন এবং ফসফোপ্রোটিন এড়িয়ে চলুন। দুধের ফসফোপ্রোটিনের গ্রুপকে ক্যাসেইন বলে। যা দুধের সব প্রোটিনের ৮০ শতাংশ। এটি মাইগ্রেন ও অন্যান্য মাথাব্যথা বৃদ্ধি করার প্রধান উপাদান। তাই চিকিৎসকরা মাইগ্রেনের রোগীদের সব ধরণের ক্যাসেইন সমৃদ্ধ খাবার বাদ দেয়ার পরামর্শ দেন।

২। শর্করা সমৃদ্ধ খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত চিনি এড়িয়ে চলুন

CNN Health এর মতে, “প্রতিক্রিয়াশীল হাইপার গ্লাইসেমিয়া অথবা রক্তস্রোতে গ্লুকোজের বৃদ্ধি মাইগ্রেনের বিস্ময়কর কারণ”। সাদা চিনি এবং পাস্তার মত সহজ শর্করা অত্যধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে মাইগ্রেন হতে পারে। সহজ শর্করা খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং তখন চিনিকে ভাঙ্গার জন্য শরীরকে অতিরিক্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে হয়। এর ফলে ব্লাড সুগার লেভেল খুব দ্রুত কমে যায়। রক্তের চিনির মাত্রার এই ওঠানামা মাথাব্যথা সৃষ্টির কারণ।

৩। হাইড্রেটেড থাকুন কিন্তু উত্তেজক পানীয় বর্জন করুন

ডিহাইড্রেশনের ফলে মাথাব্যথা হয় এবং যারা ঘন ঘন মাইগ্রেনের ব্যথায় ভোগেন তাদের অবস্থাকে আরো খারাপ করে দেয়। এজন্যই মাইগ্রেনের রোগীদেরকে অনেক বেশি তরল খাবার বিশেষ করে পানি পান করার পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়াও তাদের চা, কফি, সোডা এবং চিনি ও ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় এড়িয়ে চলার জন্য সতর্ক করা হয়।

৪। ঠান্ডা খাবার ধীরে ধীরে খান

প্রায় সব মানুষেরই ঠান্ডার মাথাব্যথা হয়ে থাকে। দ্রুত ঠান্ডা খাবার বা পানীয় পান করলে কপালের মাঝখানে ব্যথা হয় যা ৫ মিনিটের কম সময় স্থায়ী হয়। কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন যে, এই বিষয়টি মাইগ্রেনের ব্যথাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ঠান্ডা জিনিস আস্তে আস্তে খান।

এছাড়াও খাবার খাওয়া ও ঘুমের সময় ঠিক রাখুন, কোন বেলার খাবার বাদ দেয়া উচিৎ নয়, স্ট্রেস মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন ও রিলেক্স থাকার চেষ্টা করুন। খাদ্যাভ্যাসের সহজ কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে মাইগ্রেন এবং মস্তিষ্কের পরিবর্তন হওয়াকেও কমানো যায়।



মন্তব্য চালু নেই