জানেন কি, গোঁফ কেন নভেম্বরে না বাড়ালেই নয়?

হেড অফিসের বড়বাবুর গোঁফ নিয়ে বাড়াবাড়ি কি শুরু হয়েছিল এই নভেম্বর মাসেই? তার কোনও প্রমাণ যায় না! তবে বড়বাবুর না হলেও আন্তর্জাতিক দুনিয়া তো গোঁফ-দাড়ির উৎসব বলে হামেহাল দেগে দিল এই নভেম্বর মাসটাকেই!

এমনকী, সেখানেই থেমে থাকল না। আরও এক ধাপ এগিয়ে মাসটার নামটাই পাল্টে দিল বেমালুম! নভেম্বর থেকে করে দিল মভেম্বর! আসলে, চলতি অস্ট্রেলিয়ানে ‘মো’ মানে গোঁফ কিনা! তাই দুটোয় জুড়ে এমন নাম। সঙ্গে শুরু হল বিশ্বজোড়া আন্দোলন। মভেম্বর আন্দোলন। সৌজন্যে, মভেম্বর ফাউন্ডেশন!

মভেম্বরের এই গোঁফ-দাড়ির উৎসব হতে পারে হুজুগ, তবে বিষয়টাকে কিন্তু খাটো করে দেখলে চলবে না। ফাউন্ডেশন আদতে ভাল কাজই করছে। তারা এই গোঁফের তলায় তলায় শুরু করেছে রীতিমতো সমাজ সচেতনতার উৎসব।

সেই সচেতনতা অবশ্য গোঁফ নিয়ে নয়, পুরুষদের ক্যানসার নিয়ে্। যেমন, প্রস্টেট ক্যানসার! সেই ২০০৪ সালে শুরু হয়েছিল আন্দোলন, এখন তা যথেষ্ট জনপ্রিয় এক ব্যাপার! সারা বিশ্ব জুড়েই!
যার জেরে ভাসছে বলিউডও! গোঁফ লাগিয়ে ফ্যাশন শো-তে হাঁটছেন কন্যেরা, সোশ্যাল মিডিয়ায় নাকের নিচে একটা গোঁফ লাগিয়ে পোস্ট করছেন ছবি।

নিদেনপক্ষে, সুন্দর-ঘন চুলটা একটু সামনে টেনে এনে বসিয়ে রাখছেন নাকের তলায়। তবে, এ তো সুন্দরীদের ব্যাপার! নায়করা এমনিতেই গোঁফে তা দিচ্ছেন বছরভর! এই নভেম্বরে একটু বেশি যদিও!
তবে কি না, ইতিহাস বলছে, এই মভেম্বর নামটাই যা নতুন! আদতে নভেম্বরে গোঁফ-দাড়ি বড় করাটা অনেক দিন ধরেই চলে আসছে আন্তর্জাতিক মহলে যার সঙ্গে আবার জুড়েছে রাজনৈতিক অধিকারবোধের ব্যাপার-স্যাপারও!

সেই উনিশ শতক থেকেই! যে গল্পটা খোলসা করে বলছেন রাজনৈতিক ইতিহাসের দুনিয়ায় এক ডাকসাইটে নাম জন গ্রিনস্প্যান সাহেব। তো, জন সাহেবের বক্তব্য, সেই উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে একুশ বছরের ছেলে-ছোকরারা মুখিয়ে থাকত গোঁফ-দাড়ি বাড়ানোর জন্য।

বিশেষ করে নভেম্বর এলেই! তাদের বলা হত টুয়েন্টি-ওয়ানস্টার! মানে, একুশ বছরের ছোকরা! তা, একুশে পা দিয়ে, নভেম্বরে তারা কেন বাড়াতে শুরু করত গোঁফ-দাড়ি?ভোটের রাজনীতি আর কী! সেই সময়ে ভোট দেওয়ার বৈধ বয়স ছিল একুশ বছর। তাই ভোট দিতে যাওয়ার আগে নরম গাল ঢেকে যেত কচি দাড়িতে। নাকের তলাটায় দিব্যি বসে যেত গোঁফের কার্পেট। অতঃপর, সেজেগুজে ভোট দিতে যাওয়া। যাতে অল্পবয়স্ক বলে কেউ হ্যাটা না করে! যে দেশের স্বার্থে ভোট দিতে পারছে, তাকে কি আর অল্পবয়স্ক বলা যায়! সে তো তখন রীতিমতো দায়িত্ববান পুরুষ!

যে পুরুষের বহির্প্রকাশ ওই গোঁফ-দাড়িতেই! সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে! মভেম্বর ফাউন্ডেশন ধরেছে ওই ইতিহাসটাকেই! রাজনৈতিক সচেতনতাকে বদলে দিয়েছে সামাজিক সচেতনতায়। তাই নভেম্বর মাসে বেড়েছে গোঁফ রাখার হুজুগ! গোঁফের আমি, গোঁফের তুমি, গোঁফ দিয়ে যায় চেনা- কে সমাজসচেতন আর কে নয়! তাহলে কী ঠিক হল? গোঁফ রাখছেন, না রাখছেন না?-সংবাদ প্রতিদিন



মন্তব্য চালু নেই