মাগুরায় হতদরিদ্রের তালিকায় চেয়ারম্যানের বড়লোক শ্যালক, আবার জনপ্রতি ৫ কেজি নেই
মাগুরা প্রতিনিধি ॥ মাগুরা সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কুছুন্দী ই্উনিয়নের চেয়ারম্যানের একক হাতে করা ৬০ ভাগ কার্ড ভুয়া হিসেবে দাবী করেছে ওই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ পরিষদের সমস্ত সদস্য। অন্যদিকে কুচিয়ামোড়া ্ইনিয়নে চাল বিতরনে জন প্রতি ৪ থেকে ৫ কেজি কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে এ বিষয়টি জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
কুছুন্দী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমানসহ অন্যরা অভিযোগ করেন,হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণের জন্য সম্মিলিতভাবে একটি তালিকা করার কথা। কিন্তু কুছুন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কাশেম মোল্যা ইউনিয়নের কোন সদস্যের সাথে আলাপ না করে নিজের আতিœয়স্বজন ও ভুয়া লোকজনের নাম দিয়ে ২৩৫ জনের একটি তালিকা করে ডিলারের মাধ্যমে চাল দিচ্ছেন। এই তালিকায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কৃষ্ণপুর গ্রামের ওই ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি বিশ^জিৎ ভাদুড়ী ছাড়া আর কারো নাম নেই। একই অবস্থা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের। সেখানে শৈলডুবি ও খর্দ কুছুন্দী গ্রামের কোন হতদরিদ্রের নাম নেই। বরং ইউনিয়নের বাইরে পৌরসভার অন্তরর্ভুক্ত লক্ষিকান্দর ও বারাশিয়া গ্রামের ১০ জনকে ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব ভুয়া তালিকা ভুক্ত নামধারিদের চাল চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল হিমন কালো বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে।
চেয়ারম্যানের একক কতৃত্বে করা তালিকায় তার বড়লোক চাচাতো শ্যালক রানা, তার স্ত্রী পলি বেগম, অপর শ্যালক রিয়াজুল ইসলাম, তার স্ত্রী সাদিয়া পারভিন সহ কমপক্ষে ৬০ জন ধনী আতœীয় স্বজনের নাম আছে। এদিকে তালিকা করার বিষয়ে মিঠুন মজুমদার,আব্দুল মান্নানসহ কুছুন্দি ইউনিয়নের ১৩ জন সদস্যের কেউই জানেন না বলে জানিয়েছেন। এটি চেয়ারম্যান এককভাবে করেছেন বলে তারা দাবী করেন।
ইউনিয়নের নির্ধারিত ডিলার আব্দুর রহিম এ বিষয়ে বলেন, ‘আমার কাছে যে তালিকা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী যথাযথভাবে চাল বিতরণ করছি। এ বিষয়ে আমার আর কিছু জানা নেই’।
অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল হিমন বলেন, ‘ তালিকা নিয়ে একটু সমস্যা ছিল। পরে সেটি সমাধান করে ফেলেছি’।
এদিকে কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের অনিয়মের বিষয়ে ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাহেব আলি, জান্নাত হোসেনসহ আরো অনেকের অভিযোগ , ওই ওয়ার্ডের নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলার আলমগীর হোসেন গত মাসের ২৭ ও ৩০ তারিখ দরিদ্রদের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করেন। কিন্তু তারা ডিলারের কাছ থেকে চাল নিয়ে বাইরে নিয়ে ওজন করে ৩ থেকে ৪ কেজি করে কম পান।
জান্নাত হোসেন বলেন, ‘শুধু আমার নয় এই ডিলারের কাছ থেকে যারাই চাল নিয়েছেন তাদের প্রায় সকলকেই ৩০ কেজির পরিবর্তে ২৫ বা ২৬ কেজি করে চাল পেয়েছেন।
দিন মজুর সাহেব আলি বলেন, ‘আমার সন্দেহ হওয়া ডিলারের কাছ থেকে চাউল নেওয়ার পর বাজারের একটি দোকানে নিয়ে ওজন করার পর ২৭ কেজি দেখতে পাই। বিষয়টি ডিলার আলমগীরকে জানালে তিনি বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দেন।
জান্নাত হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তারা সোমবার মাগুরা জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন’।
তবে অভিযুক্ত ডিলার আলমগীর হোসেন বিষয়টিকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘মাগুরায় আওয়ামীলীগের দুটি গ্রুপ রয়েছে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় নৌকা মার্কা প্রতিকের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থি জাহাঙ্গীর হোসেন আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়েই তার পক্ষের লোকজনকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে আমি কাউকেই এক ছটাক চাল কম দেইনি’।
বিষয়টি নিয়ে কুচিয়ামোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডিলারের বক্তব্যকে অস্বীকার করে বলেন, ‘কে বা কারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই’।
সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আনোয়ারুল করিম বলেন, ‘কুচিয়মোড়া ইউনিয়নের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। ডিলারকে নোটিশ করে বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। অন্য কোন ইউনিয়নের বিষয়ে কোন অভিযোগ এখনো হাতে আসে নি’।
মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ারুল ইসলাম জানান,ওজনে চাল কম দেয়া সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পাওয়ার পর সব ডিলার, ইউপি সচিব, মেম্বরসহ সংশ্লিষ্টদের ডেকে সভা করে সর্তক করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, জেলায় মোট ৩৬ হাজার ৬শ’ ৪০ পরিবার ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। জেলায় ৬৭ জন ডিলারের মাধ্যমে এ চাল বিক্রি করা হচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই