মাশরাফি কি নিরাপত্তার দিকটি উপেক্ষা করেছিলেন?
রাজধানীর মিরপুর শেরে-বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের মধ্যেকার ম্যাচ চলাকালে মাঠে ঢুকে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে জড়িয়ে ধরা ছেলেটির সাথে তিনি যেভাবে আচরণ করেছেন সেটিকে অনেকেই বাহবা দিচ্ছেন।
সামাজিক গণমাধ্যেমে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ‘মানবিক আচরণের’ প্রশংসা করছেন অনেকে।
কিন্তু একইসাথে প্রশ্ন উঠছে- নিরাপত্তা নিয়ে যে ধরনের উদ্বেগ বাংলাদেশের ক্রিকেটে তৈরি হয়েছে, সে প্রেক্ষাপটে মাশরাফির আচরণ কতটা পেশাদার ছিল? তিনি কি নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করেছিলেন?
পুলিশ বলছে, মাঠে ঢুকে যে ছেলেটি মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরেছিল, সে নেহায়েতই একজন ‘মাশরাফি ভক্ত’। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের কোন ক্ষতি সাধন করা তার উদ্দেশ্য ছিল না।
কিন্তু এ ঘটনা একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে যে মাঠে নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ছিল। খেলোয়াড়দের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্য কেউ যদি মাঠে ঢুকে পড়তো তাহলে কী হতো?
বাংলাদেশে ক্রিকেট দলের সাবেক ম্যানেজার এবং বিসিবি’র সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ খান মনে করেন, ভক্তকে জড়িয়ে না ধরে মাশরাফির উচিত ছিল নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা।
তিনি আরও বলেন, ‘মাশরাফি তাকে জড়িয়ে ধরে যে আলিঙ্গন করলো এটা আমি মানব না। তার (ছেলেটির) যদি কোন ব্যাড ইনটেনশন (খারাপ উদ্দেশ্য) থাকতো, তার হাতে যদি একটা ছুরি থাকতো, হি কুড হ্যাভ ইনজিউরড হিম (তাকে আহত করতে পারতো)।’
তিনি মনে করেন, মাশরাফি যদি ‘মানবতা এবং উদারতা’ দেখাতে চাইতেন, তাহলে সেটি পরেও দেখানো যেত।
লতিফ খান বলছেন, ‘ওই মুহূর্তে, পরিস্থিতিকে প্রফেশনালি হ্যান্ডল করা উচিত ছিল নিরাপত্তা কর্মীদের দিয়ে।’
সম্প্রতি জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মাঠে নিরাপত্তা নিয়ে এমনিতেই অনেক দেশের উদ্বেগ আছে। খেলোয়াড়রাও যে কোনো ধরনের হামলার লক্ষ্য হতে পারে, এমন আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফির আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বলে অনেকে মনে করেন।
কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ মনে করেন ‘মাশরাফি ভক্ত’ যে কাজ করেছে সেটিকে দু’ভাবে দেখা যায়।
তিনি বলেন, ‘মাশরাফি হয়তো বা মাশরাফির মতোই কাজ করেছে। সে তার মতো করে বিষয়টাকে হ্যান্ডল করার চেষ্টা করেছে … হয়তো বা ছেলেটি যখন দৌড়ে এসেছিল, তখন মাশরাফি সরে যেতে পারতো।’
ক্রিকেটের মাঠে দর্শকদের ঢুকে পড়া একেবারে নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার মাঠগুলোতে খেলোয়াড় এবং দর্শকদের মাঝে জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। কোনো দর্শক চাইলেই গ্যালারি থেকে হুট করে মাঠে ঢুকতে পারে না।
তবে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট মাঠে তেমন জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার প্লেয়িং ক্যারিয়ারে আমি দেখেছি, ইংল্যান্ডে আমরা যখন পাকিস্তানকে হারালাম তখন মাঠে কমপক্ষে তিন হাজার দর্শক ঢুকে গিয়েছিল। আমরা মাঠ থেকে তখন বের হতেও পারিনি।’
মিরপুরের মাঠে মাশরাফির সেই ‘ভক্তকে’ নির্দোষ মনে করছে পুলিশ। কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘মাশরাফি ভক্ত’ সে ছেলেটি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মাশরাফির কাছাকাছি যাওয়াটাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বলে পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। সেজন্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
তবে এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে মাঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আবারো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের উপ-কমিশনার মাসুদ আহমেদ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে কোনো দর্শক যাতে মাঠে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে।
মাঠের চারপাশে এবং গ্যালারীর ভেতরে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানান মাসুদ আহমেদ।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।
মন্তব্য চালু নেই