এরা অন্যের প্রেমিকাকে চিঠি লেখেন কেন?

দিনে প্রায় গোটা দশেক প্রেমপত্র লেখেন তিনি৷ না তাঁর একাধিক প্রেমিকা আছে, না এসব প্রেমপত্র তিনি নিজের প্রেমিকাকে লেখেন৷ আশ্চর্যের এই যে, এত এত প্রেমপত্র তিনি লেখেন অন্যের প্রেমিকার জন্যই৷ অবাক লাগলেও প্রেমপত্র লেখাই যে পেশা অঙ্কিত অনুভবের৷

অনুভবের কথা জেনে শ্যাম বেনেগালের ছবি ‘ওয়েলকাম টু সজ্জনপুর’ ছবির মহাদেব-কমলার কথা মনে পড়ছে কি? স্বামীকে চিঠি লিখতে পারত না কমলা৷ বাল্যবন্ধু মহাদেবই সে চিঠি লিখে দিত৷ অন্যের চিঠি লিখে দিয়েই দু’পয়সা রোজগার করত মহাদেব৷ তবে সে তো অজ গ্রাম সজ্জনপুরের কথা৷ কিন্তু অনুভব এই প্রেমপত্র লেখাকে রীতিমতো কর্পোরেট বাণিজ্যের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন৷ তাঁর সংস্থা ‘দ্য ইন্ডিয়ান হ্যান্ডরিটেন লেটার কোম্পানি’র কাজই হল প্রেমপত্র লেখা৷

মেইল, ফেসবুক, হোয়্যাটসঅ্যাপের যুগে হাতে লেখার অভ্যাস ফিরিয়ে এনেছেন অনুভব৷ যশবন্ত চেরিপল্লিকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছেন এই সংস্থা৷ টাইপ করে পাঠানো চিঠিতে যে যান্ত্রিকতা থাকে তা ভাঙতে চেয়েছেন তাঁরা৷ আর তাই জারি রেখেছেন হাতে লেখার অভ্যাস৷ কিন্তু পুরোটাতে একটা বাণিজ্যিক কর্পোরেট মোড়ক দিতে পেরেছেন তাঁরা৷

চিঠি লেখার দাবি নিয়ে তাঁদের কাছে আসেন প্রেমিকরা৷ কেউ পুরোটা বলে দেন৷ তাঁদের কাজ সেটি হাতে লিখে পাঠানো৷ কেউবা আবার যা বলতে চান তা ভাষায় প্রকাশ করে উঠতে পারেন না৷ তখন কল্পনাশক্তির শরণ নিতে হয় অনুভবদের৷ অন্যের মনের কথা তাঁরাই লিখে দেন৷ এখানেই অবশ্য শেষ নয়৷

এবার সে চিঠি পাঠানোর দায়িত্বও নেয় সংস্থা৷ ঠিক যেভাবে জন্মদিনে ফুল বা কেক পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়, সেই কায়দাতেই পাঠিয়ে দেয়া হয় প্রেমপত্র৷ এভাবেই নিজের সংস্থাকে দিন দিনে বড় করে তুলেছেন অনুভব ও তাঁর সঙ্গী৷ প্রেমপত্র লিখে দেওয়ার দাবি নিয়ে আসা লোকের সংখ্যা যে কম তাও নয়৷ দিল্লি থেকেই বেশি অর্ডার আসে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা৷

এ কাজকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন তাঁরা৷ এক তো হাতের লেখা বাঁচিয়ে রাখা৷ দ্বিতীয়ত, অন্যের হয়ে অন্যের মনের কথা সঠিকভাবে প্রকাশ করাও চাট্টিখানি কথা নয়৷ তবে অনুভব জানাচ্ছেন, এরকম চিঠির জেরে যখন প্রেমিক-প্রেমিকার কোনও সমস্যা মিটে যায় তখনই সত্যিকার আনন্দ হয়৷

তবে অনুভব একাই নন, একই কাজ করে চলেছে ‘লেটারমেল’ নামে এক সংস্থা৷ কাজ একই, চ্যালেঞ্জও একই৷ তবে দুই সংস্থাকেই সবসময় যে প্রেমপত্র লিখতে হয় তা নয়, ব্যক্তিগত নানা চিঠি লেখার আর্জি আসে তাঁদের কাছে৷ আর প্রায় দক্ষ অভিনেতার মতোই নিজেকে ছাপিয়ে অন্য একটা মানুষ হয়ে উঠতে হয় তাঁদের৷

অন্যের দুঃখ, আবেগ, আনন্দ অনুভব করে ফুটিয়ে তুলতে হয় শব্দে৷ ঠিক যে কাজ শ্যাম বেনেগালের ছবিতে মহাদেব হয়ে করতেন শ্রেয়স তলপাড়ে৷ অনুভবদের পেশার কাছেই রিল আর রিয়েল তাই কখন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।-সংবাদ প্রতিদিন



মন্তব্য চালু নেই