জলি স্মরণে শোকসভায় সহকর্মী অধ্যাপক নিউটন :
‘প্রত্যেকটি আত্মহত্যাই হত্যাকাণ্ড’
ইয়াজিম ইসলাম পলাশ, রাবি প্রতিনিধি: ‘কী পরিস্থিতি হলে একটা মানুষ আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়? কী হয়েছিল জলির! তাকে একাকিত্ব বোধ করতে হয়েছিল কেন? সম্পূর্ণ একা না হয়ে পড়লে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে না। প্রত্যেকটি আত্মহত্যাই হত্যাকাণ্ড। আর প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডই একেকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।’
রবিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলির স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় এসব কথা বলেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন।
নিউটন বলেন, ‘জলির মৃত্যুর পেছনে আমার দায় আছে, দায়িত্ব আছে, আমারও অবদান আছে। আমি দেখতে চাই খুব সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের রিপোর্ট দেখতে চাই আমাদের বিভাগ কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকদের কাছে দাবি জানাবো তারা যেন তদন্ত কমিটি করে। জলি বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে মারা গেছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ার ভুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটি গঠন করেন নাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশি তদন্তের ওপর সম্ভবত আমাদের খুব বেশি আশা, আস্থার জায়গা কম। বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার যে পক্রিয়াগুলো আছে সে পক্রিয়াগুলো জলির মৃত্যুর পর যেন আরেকটা মৃত্যুর অভ্যাসে পরিণ করতে না পারে।’
রবিবার বেলা ১২টায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আয়োজনে বিভাগের ১২৩ নম্বর কক্ষে শোক সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় বিভাগের সামনে থেকে একটি শোক র্যালি বের করে বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। র্যালিটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে শোক সভায় মিলিত হয়।
সহকারী অধ্যাপক শাতিল সিরাজের সঞ্চালনায় বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, ‘আমরা কখনো ভাবতেই পারিনি জলি আপা এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। রাষ্ট্র আমাদের এ হত্যার বিচার করার ক্ষমতা দেয়নি। শুধুমাত্র আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে পারি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, ‘দু-একজন শিক্ষকের জন্য আমাদের সবাইকে কেন প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে? আমরা সত্যের সঙ্গে আছি। আমরা নিজেরাই কমিটি গঠন করে মামলার নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তারপরেও কেন সব ক্ষোভ আমাদের ওপর?’
শোকসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, জলি’র বড় বোন ইসরাত জাহান, ছোট ভাই কামরুল হাসান, বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিহুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু, মহিলা পরিষদের রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মাধবী রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেত্রী মাহবুবা কানিজ কেয়াসহ শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুল ‘আকতার জাহানের সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য’ শিরোনামে জলি’র জীবনী পাঠ করেন। এসময় বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ক্লাব জুবেরী ভবনে আকতার জাহান জলির নিজ কক্ষ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে জলির ছোট ভাই কামরুল হাসান রতন আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাতনামাদের নামে মামলা দায়ের করেন।
মন্তব্য চালু নেই