জাতীয় নির্বাচনে আবারো মাইনাস হতে পারে বিএনপি!

রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান এখন অনেকটাই নড়বড়ে। ঢিলে ঢালা অবস্থান নিয়ে যতটা না চিন্তিত দলের নেতাকর্মীরা এর বেশি দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন আগাম নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান কী হবে তা নিয়ে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বর্তমান অবস্থান নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। আবার অনেকেই বলছেন এসব নিয়ে ভাবছেন না তারা।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আশঙ্কা করছেন, সম্প্রতি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে সাজার রায় দিয়েছেন আদালত তার বিপক্ষে যদি তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে আপিল না করেন তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

এদিকে, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধেও বেশ কটি মামলা চলমান রয়েছে। খুব শিগগিরই সেগুলোর রায়ও আসবে। আর বিএনপির অন্যান্য জেষ্ঠ্য নেতারাও মামলা জটিলতার মধ্যে ডুবে আছেন। সব মিলে তারেক রহমান ও বেগম জিয়া সহ জেষ্ঠ্য অন্যান্য নেতাদের সাজা হয়ে গেলে আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে নিজেরাই ছিটকে পড়বে দলটি। নেতৃত্ব শুন্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া খুবই দুর্বিসহ হয়ে পড়বে বিএনপির জন্যে। তাই ঘটনার প্রেক্ষাপট যদি এভাবেই রচিত হয় তবে আবারো জতীয় নির্বাচন থেকে মাইনাস হয়ে পড়বে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেকোন রাজনৈতিক দলই সব সময় আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। আর আমরাও নির্বাচনের ব্যাপারে সব সময় প্রস্তুত আছি।

দলের শীর্ষ দুই নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলে বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে নিজেরাই মাইনাস হয়ে যাবে কী না এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, তারেক রহমানকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই সাজা দেওয়া হয়েছে। আর চেয়ারপারসনের মামলাগুলোও সব রাজনৈতিক। এগুলো সব সময় হয়ে থাকে। সিরিয়াস কিছু না। আর তাই বর্তমানে তাদের বাহিরে রেখে নির্বাচনে দল যাবে কি যাবে না এসব বিষয় নিয়ে বিএনপি ভাবছে না।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি এখন দল পুন:গঠনের দিকে মনোনিবেশ করছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সার্বিক পর্যায়ে গঠনমূলক কার্যক্রম চলছে। আর বিএনপি নির্বাচনে যাবে কী যাবে না, পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা সময় বলে দেবে।

তবে আগাম নির্বাচনে কে অংশ গ্রহণ করতে পরবে কে পারবে না তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এখন পর্যন্ত বিএনপির আশার বাণী হচ্ছে, বেগম জিয়ার সৌদি বাদশা সৌদ বিন আবদুল আজিজের আমন্ত্রণে হজ করতে সৌদি যাওয়া। কেননা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোয় বাড়তি মনস্তাত্ত্বিক চাপে পড়েছে বিএনপি। তাই এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির উচিত হবে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে তাদের পুরোনো সম্পর্ক আরো বেশি সুদৃঢ় করা।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে শীর্ষ দুই নেতাকে বাদ রেখে অংশ গ্রহণ করলে তা কখনোই পরিপূরক হবে না। কারণ দলীয় অন্য নেতাকর্মীরা মনোবল হারিয়ে ফেলবে। আবার বেশ কয়েকজন বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না সে বিষয়টিও বিবেচনার বিষয় হয়ে উঠবে।

ইতিমধ্যেই তারেক রহমানের সাজা হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না তিনি। আর বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা অন্যতম।

তবে আওয়ামী লীগের কট্টরপন্থী নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ আগামী নির্বাচনেও বিএনপিকে সংসদের বিরোধী দল হিসেবে দেখতে চান না। আবার কেউ কেউ বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরেও রাখতে চান না। তারা মনে করছেন, বিগত নির্বাচনে সরকারের রাজনৈতিক কৌশলের কারণে বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারেনি, যা দেশ-বিদেশে এখনো ব্যাপক সমালোচিত। তাই বিএনপিকে এবারো নির্বাচনের বাইরে রাখা হলে দেশ-বিদেশে আরো কঠোর সমালোচনার মুখে পড়বে সরকার। এ ছাড়া বিএনপির মতো একটি বড় দলকে বাইরে রেখে জাতীয় পার্টিকে আবারো বিরোধী দলের আসনে বসানো হলে দেশের সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেবে না।



মন্তব্য চালু নেই