প্রায়ই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুটি
বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার শিশু জান্নাতুল মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। তিনি বলেন, নির্যাতনের কারণে শারীরিক আঘাতের পাশাপাশি শিশুটির মানসিক আঘাত আরও গুরুতর। সে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং মাঝে মধ্যে কাউকে চিনতে পারে না।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে জান্নাতুলের। বিকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এবং অসংলগ্ন কথা বলছে। কাউকে দেখলেই চিৎকার দিয়ে উঠছে সে।
জান্নাতুলের চিকিৎসক বেলায়েত হোসেন খান বলেন, ‘এর আগেও অনেক নির্যাতিত শিশুকে চিকিৎসা করেছি। কিন্তু এ রকম কখনো দেখিনি। শিশুটি এতো বেশি নির্যাতিত হয়েছে যে, সুস্থ হতে তার অনেক সময় লাগবে।’
গত বৃহস্পতিবার জান্নাতুলের ওপর চালানো নির্মম নির্যাতনের খবর প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। এরপর থেকে নিন্দার ঝড় ওঠে। রাতেই আটক করা হয় তাকে নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত গৃহকর্তা ওমর ফারুকসহ দুইজনকে। তবে আরেক আসামি গৃহকর্ত্রী মনি বেগমকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।
শুক্রবার চাঁদপুর হাসপাতালে মেয়েটিকে দেখতে যান জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মণ্ডল। এ সময় শিশুটির চিকিৎসার জন্য কয়েকজন মিলে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘শিশুটিকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। দুই আসামিকের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে।’ মেয়েটির চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
পাঁচ সন্তানকে রেখে জান্নাতুলের বাবা মন্টু মাতাব্বর অন্যত্র চলে গেছেন। পরে অভাবের কারণে মা ফিরোজা বেগম শিশুটিকে অন্যের বাসায় কাজের জন্য দেন। এক বছর আগে হাইমচরের মোস্তফা সরদার নামের একজন শিশুটিকে গাজীপুরের জয়দেবপুরে জনৈক ওমর ফারুক ও মনি বেগম দম্পতির বাসায় নিয়ে যান। সম্প্রতি শিশুটি বাড়ি যাওয়ার জন্য গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর কাছে আবদার করে। এ কারণে তাঁরা শিশুটিকে প্রচ- মারধর ও নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
কেবল একবার নয়, বছর জুড়েই অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে দেয়া হয়েছে শিশুটির শরীর। সম্প্রতি শিশুটিকে তার গ্রামে নিয়ে আসার পর তাকে হাইমচর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ খবর পেয়ে চাঁদপুর পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
পুলিশ সুপারের নির্দেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটির প্রতিবেশী হাইমচরের শাহজাহান ভূঁইয়া বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন। এরপর আসামি ওমর ফারুক ও মোস্তফা সরদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার আরেক আসামি মনি বেগম পলাতক।
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার রেজাউল হাসান বলেন, ‘ঘটনাটি নৃশংস। একটি শিশুকে এভাবে নির্যাতন করার সাজা আসামিদেরকে পেতেই হবে।’
মামলায় হত্যা চেষ্টার অভিযোগ
জান্নাতুলকে নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলায় শিশুটিতে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বলা হয়, অভাবের তাড়নায় ভিকটিমের মা তার আপন খালাতো ভাই মোস্তফা সরদারের কথামতো মাসিক ৫০০ টাকা বেতনে গাজীপুরের ভুরুলিয়ায় ওমর ফারুকের বাড়িতে এক বছর আগে কাজ করতে দেন। এবার ঈদের আগে শিশুটি চাঁদপুরে মায়ের কাছে যেতে চাওয়ায় গৃহকর্তা তার হাত-পা বেঁধে লোহার খুন্তি গরম করে হত্যার উদ্দেশ্যে বুক, পেট, হাতে, পায়ে ছ্যাঁকা দেয়। গলায় চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টাও করে।
মন্তব্য চালু নেই