কী আশায় বসে আছে বিএনপি?
কোনো এক অজানা আশা নিয়ে হাঁটছে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। সেই অদেখা-অজানা আশা দলের নেতাকর্মীদের এখন অনেকটা চাঙ্গাও করে তুলছে! এবার কিছু একটা হবে, এমন ভাব আর আশা নিয়ে চলছে দলটির নেতাকর্মীরা। কিন্তু কী সেই আশা? বিএনপির স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য, দলের নেতাকর্মী ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেও এই অজানা আশাতে তাদের ‘জেগে থাকার’ বিষয়টি জানা গেছে। সবাই-ই অজানা আশাতে পথচলার কথা স্বীকার করলেও, কি সে-ই আশা তা স্পষ্ট করে বলছেন, তারা হয়ত জানেনও না।খবর পরিবর্তনের।
কেউ বলেন, সরকারের নির্যাতন-স্বৈরশাসনই এ সরকারের পতন ডেকে আনবে। কেউ বলেন, গণআন্দোলন এখন সময়ের ব্যাপার- মানুষ পথে নেমে আসবে, কেউ আছেন বিদেশিদের পথ চেয়ে, কেউ বলছেন, ‘আল্লাহ-ই এবার রক্ষা করবেন’।
কিসের আশায় আছে বিএনপি? সামনে কি কিছু হতে যাচ্ছে? জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ গত রোববার বলেন, মানুষ সবসময় নিজেই নিজের কাজ করতে চায়। এইটা নেচারাল। কিন্তু যখন মানুষ নিজে পারে না তখন আল্লাহতালা বা অন্য কোনো শক্তির উপর নির্ভর করে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু হবে, কিছু হবে ভাবভঙ্গি জেঁকে বসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ঝটিকা সফর এবং রামপাল ইস্যু সামনে আসার পর। তারা মনে করছেন, কেরির আকস্মিক সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদকে সময় না দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করাকেও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া আলাদা সম্মান বলে মনে করছে বিএনপি।
২০ দলীয় জোটের শরীক একটি দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপি নেতারা তাদের মেসেজ দিয়েছেন যে, প্রটোকল ভেঙে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক না করে খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেছেন কেরি। কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে তিনি খালেদার সঙ্গে কথা বলেছেন। বিএনপিসহ জোট নেতারা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সাথে রাজনৈতিক ইস্যুতে যেসব কথা বলেছেন তা পরে ভারত সফরে গিয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথেও আলোচনা করেছেন।
আ স ম হান্নান শাহ বলেন, সম্প্রতি ভারত যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত সামরিক চুক্তি হয়েছে। যাতে করে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সামরিক স্থাপনা ও বিমানঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে। এতে শক্তিধর রাষ্ট্র চীন চটেছে। হান্নান শাহ আরো বলেন, এদিক থেকে আমাদের কদরটা ভৌগোলিক কারণে আরো বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বাংলাদেশের ভেতরে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা চাইবে না বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
বিএনপি সূত্র জানায়, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাধাগুলো জন কেরির সামনে তুলে ধরেছে বিএনপি। খালেদা জিয়া ও জন কেরির প্রাথমিক আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। খালেদা-কেরি আলোচনায় নির্বাচন ইস্যু নিয়ে কি কথা হয়েছে জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী টেলিফোনে বলেন, নির্বাচন নিয়ে ইন্টারনাল (অভ্যন্তরীণ) আলোচনা হয়েছে। তবে কি কথা হয়েছে আমি তা বলতে পারব না।
বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, কেরির সফর পূব আকাশে নতুন সূর্য হয়ে দেখা দিয়েছে। তার মতে, ২০১৭ সালে একটি নতুন নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সে নির্বাচনে বিএনপির অন্তত দুই’শ নেতা যাতে অংশ নিতে না পারে সে উদ্দেশ্যে যা যা করার তা করছে সরকার। সরকারের উদ্দেশ্য কীভাবে ঠেকানো যায় তা ঠিক করতেও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে বিএনপি।
একইসঙ্গে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে যে জনমত আছে তাও বিএনপির সামনে আন্দোলন বা নির্বাচনে সহায়ক হবে বলেও মনে করে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আর এক সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, মানসিকভাবে দলের নেতাকর্মীদের এখন চাঙ্গা থাকা স্বাভাবিক। কী হবে বলাটা মুশকিল। তবে দলে সাংগঠনিক কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকবে। বাদবাকি সময়ই বলে দিবে কী করতে হবে।
বিএনপির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, একটি নির্বাচন দ্রুততম সময়ের মধ্যে হবে, এটি তারা প্রায় নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে সরকারের উপর চাপ রাখতে মাঠেও থাকতে চায় বিএনপি। স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা মাঠে আসব। দুর্গা পূজাটা পার হোক না, দেখেন, আমরা পারি কিনা।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা বা সংলাপের প্রস্তাব না দিয়ে এবার বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন ও দেশের অভ্যন্তরে সমমনাদের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচনের আশায় আছে বিএনপি। দলটি মনে করে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া মোটেও কঠিন হবে না।
জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনের শেষ দিন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল সংসদ সদস্যকে পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশকেই তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। তখনই তারা বুঝে নিয়েছেন যে আর দেরি নাই নির্বাচন হতে। ড. মোশাররফ বলেন, নেতাকর্মীরা মনে করছেন যে আওয়ামী লীগ শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে, দ্রুতই সরকারের পতন হবে।
মন্তব্য চালু নেই