যে কারণে হজে সেলফি নয়
মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ : নিজেকে প্রদর্শনেচ্ছার অপর নাম সেলফি। সেলফি নিয়ে মানুষের ভাবনার যেন শেষ নেই। মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে এ সেলফির ব্যবহার। সর্বোপরি যে জিনিসটি বর্তমানে বেশি আলোচিত, সমালোচিত তা হচ্ছে ইসলামের সর্ববৃহৎ ইবাদাত হজে সেলফির ব্যবহার। মুসলিম উম্মাহর জন্য সেলফিমুক্ত হজ আদায় করা জরুরি। সেলফিমুক্ত হজ আদায়ের দিকগুলো তুলে ধরা হলো-
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে সেলফির আগ্রাসন হজের ইহরাম বাঁধার স্থান (মিকাত) থেকে শুরু করে বিমানে, ইহরামে, বাইতুল্লাহ তাওয়াফে, ঝমঝমের পানি পানে, সাফা-মারওয়া সাঈতে, আরাফাতের ময়দানে, মিনার কংকর নিক্ষেপে, কুরবানিতে এমনকি মাথামুণ্ডনেও সেলফি তুলে তা ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের হিড়িক চলছে। হজের মতো আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ একটি ইবাদত কি পরিমাণ সেলফিমুখি হয়েছে। এটা ভাবতেও অবাক লাগে।
অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিকাতে পৌঁছা থেকে শুরু করে হজের কার্যক্রমে নিজেকে জাহির, আত্মগরিমা এবং লোক দেখানো থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তাছাড়া তিনি হজের প্রত্যেকটি রোকনে আল্লাহর তাসবিহ, দোয়া, জিকির-আজকার এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার শিক্ষা দিয়েছেন। এ থেকে বুঝা যায় বর্তমান সেলফি তোলা ও ভিডিও করা বিশ্বনবির হাদিসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বিষয়। সুতরাং হজের সময় হাজিদের সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকাই আবশ্যক।
হজের আহকাম পালনের অন্তরায় সেলফি
হজ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। যা শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনে মানুষ পালন করে থাকেন। তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের এ ব্যাকুলতাই হচ্ছে- হজের প্রাণ। লোক দেখানো যে কোনো ধরনে কার্যক্রমই ইবাদাত-বন্দেগির চেতনাকে বিনষ্ট করে দেয়। ইবাদাত-বন্দেগির প্রদর্শন হলো রিয়া। যা ইবাদাত-বন্দেগিকে জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। হাদিসে রিয়াকে শিরকে আসগার বা ছোট শিরক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। হাদিসের আলোকে এ সেলফিও রিয়ার অন্তর্ভূক্ত।
যারা প্রকৃতই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে গিয়েছেন। সারা জীবনে একটু একটু সঞ্চয় একত্রিত করে আল্লাহর দিদার লাভে বাইতুল্লায় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত করে নৈকট্য অর্জনে ব্যস্ত। তাদের জন্য সেলফির কার্যক্রম, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ তাদের ইবাদতের অন্তরায়। সেলফির কার্যক্রম মুমিন হৃদয়ের একনিষ্ঠতায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায়। হজের কার্যাবলী সুসম্পন্ন করতে বাধা হিসেবে কাজ করে। যা বর্জন করা অত্যন্ত জরুরি।
হজে যে জন্য সেলফিমুক্ত থাকবেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ ও ওমরার উদ্দেশ্যে মিকাতে পৌছে বলতেন- ‘হে আল্লাহ! এ হজে নিজেকে জাহির (প্রকাশ করা) ও অন্যকে শোনানোর চেষ্টার ঊর্ধ্বে রাখ।’
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজে গিয়ে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি এমন একটি হজ পালন করতে চাই, যা কোন দম্ভ প্রকাশ বা লোক দেখানো হবে না।’
সেলফি থেকে সতর্কতার কারণ-
যেখানে হজের কোনো রুকন সঠিকভাবে পালনে বিঘ্ন হলে মানুষের ওপর দম তথা কুরবানি আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়। যা না করলে হজ সম্পন্ন হবে। সেখানে সেলফি তুলে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পাশাপাশি অন্যের হজের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানোর মাধ্যমে কুরবানি ওয়াজিব করে দেয়া মস্তবড় অপরাধও বটে।
সুতরাং হজের সময় যে কোনো ধরনের ছবি তোলা বা ভিডিও করা থেকে বিরত থাকুন। হজের কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশ করুন।
পরিশেষে…
হজ ও ওমরার যাত্রীরা পর্যটক নন, তারা হলেন আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে প্রত্যাশী, পুণ্যার্থী। তাই হজের সময় সেলফি না তোলাই হবে হজযাত্রীদের ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে সঠিকভাবে হজের রুকনগুলো আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।
মন্তব্য চালু নেই