এই গ্রামে দেহব্যবসায় মেয়েদের প্রধান পেশা, ভাইয়েরা তাঁদের ‘দালাল’!

মেয়েরা কিশোরী হয়ে উঠলে পরিবারের তরফেই উৎসাহ দেওয়া হয় পতিতাবৃত্তিতে নামার ব্যাপারে। বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েরা আর থাকতে পারবেন না পতিতাবৃত্তিতে। তাই মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহ দেখান না পরিবারের সদস্যরাও।

দেশের রাজধানী থেকে এই গ্রামের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার। কিন্তু অবস্থানগত দূরত্ব তেমন বেশি না হলেও, আদপে এই গ্রাম আধুনিক ভারতবর্ষ থেকে কয়েকশ’ বছর পিছিয়ে রয়েছে। কারণ এই গ্রামের অধিকাংশ মেয়েই এখনও মধ্যযুগীয় ঐতিহ্য মেনে পতিতাবৃত্তিকেই তাঁদের প্রধান পেশা বলে মেনে নেন।

রাজস্থানের খাকরানাগলা গ্রামে প্রধানত বেদিয়া আর নট সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। আপাতদৃষ্টিতে এই গ্রামের কোনও বিশেষত্ব চোখে পড়বে না। সাদামাটা কুঁড়েঘর, বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রাইমারি স্কুল কিংবা অনুন্নত স্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখে ভারতের আর পাঁচটা গ্রামের সঙ্গে এর কোনও পার্থক্য হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু খাকরানাগলার আশেপাশের অঞ্চলে এই গ্রামের নিজস্ব পরিচিতি রয়েছে। এবং তা খুব সম্মানজনক পরিচিতি নয়।

এই গ্রাম পরিচিত ‘পতিতাদের গ্রাম’ হিসেবে। কারণ এই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারেই এখনও হাঁড়ি চড়ে বাড়ির মেয়েদের পতিতাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের সাহায্যে।

বেদিয়া ও নট মেয়েরা বংশপরম্পরায় নাচনির পেশায় কাজ করে এসেছেন। সামন্ততান্ত্রিক যুগে সামন্ত প্রভুদের বাড়িতে এঁরা বাঈজির কাজ করে উপার্জন করতেন। কালে কালে সামন্ত প্রভুরা অবলুপ্ত হয়েছেন। বেদিয়া আর নটরাও নাচনির কাজ ছেড়ে নেমেছেন পতিতাবৃত্তিতে। তাঁদের এই কাজকে আদৌ নিন্দাজনক মনে করেন না ওই মেয়েদের পরিবার, কিংবা গ্রামের অন্য বাসিন্দারা। বরং মেয়েরা কিশোরী হয়ে উঠলে পরিবারের তরফেই উৎসাহ দেওয়া হয় পতিতাবৃত্তিতে নামার ব্যাপারে।

বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েরা আর থাকতে পারবেন না পতিতাবৃত্তিতে। তাই মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহ দেখান না পরিবারের সদস্যরাও। নিজেদের বাড়ি, গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাইওয়ে কিংবা দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো বড় শহরকে কেন্দ্র করে বিস্তার পায় এইসব মেয়ের পেশা। অনেক সময়ে এই মেয়েদের দাদা বা ভাইরাই তাঁদের ‘দালাল’ হিসেবে কাজ করেন।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ সোশ্যাল ওয়ার্কের প্রাক্তন অধ্যাপক কে কে মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খাকরানাগলায় মোট ৯১টি পরিবারের বাস। তাদের মধ্যে নট, বেদিয়া আর গুজ্জর সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবারের সংখ্যা ৭৫টি। তাদের মধ্যে ৪৬টি পরিবার বাড়ির মেয়েদের পতিতাবৃত্তির উপর নির্ভরশীল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাকরানাগলার বাইরের চেহারাটা একটু একটু করে বদলাচ্ছে।

একটি-দু’টি করে হাইরাইজ দেখা দিচ্ছে খাকরানাগলার মাটিতে। কিন্তু পতিতাবৃত্তির এই আধিপত্য কমার কোনও লক্ষণ নেই।

কিন্তু কেন আসে না পরিবর্তন? সমাজবিদরা বলছেন, আসলে গ্রামের পুরুষরাই এই প্রথা ভাঙার ব্যাপারে তেমন উৎসাহী নন। তাঁরা বিষয়টিকে মোটা টাকা উপার্জনের সহজ রাস্তা হিসেবেই দেখছেন। আর কী বলছেন খাকরানাগলার বাসিন্দারা? তাঁরা দায়ী করছেন প্রশাসনের উদাসীনতাকে।

তাঁদের বক্তব্য, সামাজিকভাবে তাঁদের ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। গ্রামে পড়াশোনার তেমন বন্দোবস্ত নেই। সেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে যুবকরা চাকরির যোগ্যতা অর্জন করলেও, তাঁদের জাতিগত পরিচয় জানামাত্র কর্তৃপক্ষ তাঁদের আবেদনপত্র বাতিল করে দেয়। কিন্তু বেদিয়ারা তো তফশিলী জাতি বলে চিহ্নিত?

বেদিয়ারা বলছেন, সেই সংরক্ষণের বিন্দুমাত্র সুবিধাও তাঁরা পাচ্ছেন না। অবস্থা পরিবর্তনের জন্য একজন রাজনৈতিক প্রতিনিধির প্রয়োজন অনুভব করছেন বেদিয়া আর নটরা।

যিনি তাঁদের যন্ত্রণার কথা তুলে ধরতে পারবেন সংসদে। খাকরানাগলার মানুষের আশা, সরকার উদ্যোগী হলে এই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আসবে, আর পতিতাবৃত্তির শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাবেন খাকরানাগলার মেয়েরা।এবেলা



মন্তব্য চালু নেই