আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এখনও ঝুলছে পাকিস্তানের ফ্যান
আলাপ উঠেছিল গেল ফেব্রুয়ারিতে। বক্তাদের সবাই যখন পাকিস্তানের বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয় গরম করে তুলছিলেন, ঠিক তখনই একজন হাটে হাড়ি ভাঙলেন।
বললেন, ‘সবাই পাকিস্তানের অপকর্মের সমালোচনা করছি। খুবই যৌক্তিক কথা। কিন্তু মাথার উপর যে পাকিস্তানের তৈরি ফ্যান ঘুরছে, সে খরব কি কেউ রেখেছেন?’
অমন কথায় সবার চোখ তখন উপরের দিকে। অনেকেই যেন আকাশ থেকে পড়লেন। কানাঘুষা শুরু হল গোটা কার্যালয়ে। কেউ কেউ টিপ্পুনি কাটতে থাকলেন। কেউ আবার চড়া গলায় ফ্যানের সুইচ বন্ধ করতে বললেন। যেন নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা।
আলোচনা, সমালোচনা সবই চললো। তবুও পাক ফ্যানগুলো বন্ধ হলো না। গরমাগরমির খানিক পর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আবারো পাকিস্তানের সমালোচনা করে বক্তব্য দিতে থাকলেন বক্তারা। একই তালে ঘুরতে থাকল পাকিস্তানের তৈরি জিএসপি ব্র্যান্ডের ফ্যানগুলো।
ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয়ে জিএসপি ব্র্যান্ডের ফ্যানগুলো এখনও ঘুরছে। আওয়ামী লীগের সভাপতির এ কার্যালয়ে কোনো নিউজ কাভার করতে এলেই সাংবাদিকরা এ নিয়ে আলাপ তোলেন। সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও। তবে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আটকে থাকলেও ফ্যানগুলো ঘোরা বন্ধ হয়নি।
যুবলীগের এক নেতা বলেন, ‘যেদিন এ নিয়ে প্রথম কথা হয় সেদিন আমিও ছিলাম। সবই শুনলাম। পাকিস্তানের তৈরি ফ্যানের বাতাস নিয়ে যদি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিই, তাহলে মানুষ হাসাহাসি করবেই্। কথা আর কাজের অসঙ্গতি থাকলে মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়।’
প্রথম সারির দৈনিকের এক সাংবাদিক বলেন, ‘গুরুত্বহীন কথায় অধিক গুরুত্ব দিয়েই আজ সব রাজনীতি। রাজনীতির শেষ কথা নেই বলেই এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলে না। রাজনীতির স্বার্থেই রাজনীতি।’
ঘটনা ১১ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানের প্রতিবাদ উপলক্ষে বৈঠকে মিলিত হন ১৪ দল ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
বক্তারা সবাই পাকিস্তানবিরোধী বক্তব্য দেন। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছেন সবাই বেশ জোরালোভাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে সকল একাডেমিক কার্যক্রম বাতিল করায় প্রশংসাও করেন কেউ কেউ। আরেকজন খেলাধুলা-সাংস্কৃতিকসহ পাকিস্তানের সঙ্গে সকল কর্মকাণ্ড স্থগিত করার দাবি জানান। এমন দাবিতে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয় রীতিমত পাকিস্তানবিরোধী হয়ে ওঠে।
বৈঠকের একপর্যায়ে বাংলাদেশ সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক তার বক্তব্যে বলেন, ‘সবাই পাকিস্তানবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছি, ভালো কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যেখানে বৈঠক করছি, সেখানে মাথার উপরে ঘুরছে পাকিস্তানের তৈরি ফ্যান।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাকিস্তানের সব কিছু ত্যাগ করতে হবে। পাকিস্তানের তৈরি পাক এবং জিএফসি ফ্যানে বাংলাদেশ ভরে গেছে। তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ত্যাগ করা সময়ের দাবি।’
পাকিস্তানের তৈরি ফ্যান নিয়ে ওমর ফারুকের করা এমন মন্তব্যে সবাই উপরের দিকে তাকিয়ে ঘূর্ণীয়মান তিনটি ফ্যানকে প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় কেউ কেউ হাসাহাসি করেন, কেউ টিপ্পনি কাটেন, আবার কেউ কেউ ফ্যান তিনটি বন্ধ করার আহ্বানও জানান।
এছাড়া ফ্যানের সুইচ বন্ধ করার দাবি জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ।
কিন্তু বক্তব্যের আড়ালে সবাই ভুলে যান ফ্যানের সুইচ বন্ধ করার কথা। বৈঠক শেষ হলেও ঘুরতে থাকে ফ্যান তিনটি, যা আজও বন্ধ হয়নি। তবে শুধু এই তিনটিই নয়, কার্যালয়টির প্রতিটি কক্ষেই পাকিস্তানের তৈরি ফ্যান রয়েছে বলে জানা গেছে।-জাগো নিউজ।
মন্তব্য চালু নেই