ফিরে আসছে জিয়ার যুব মহিলা দল

জাতীয়তাবাদী যুব মহিলা দলকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তুতি চলছে বিএনপিতে। দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা না থাকার কারণে পুরুষদের ভিড়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা অঙ্গ সংগঠনের পদে নারীদের স্থান না পাওয়া এবং বিদ্যমান মহিলা দল নিয়ে অব্যাহত ক্ষোভ প্রশমিত করতে এবং দলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, দলের প্রতিষ্ঠালগ্নে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ১৯৭৯ সালে যুব মহিলা দল গঠন করেছিলেন। তখন নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বেগম আহসানুল্লাহ। কিন্তু সেসময় নারীরা রাজনীতিতে তেমন আগ্রহী না থাকার কারণে সংগঠনটির গুরুত্ব কমে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠার এক বছর পরই বিলুপ্ত হয়ে যায় যুব মহিলা দল।
এ ব্যাপারে আলাপকালে দলের একাধিক নারী নেত্রী বলেন, বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে নারীদের অবদান কম নয়। তারপরও পদ সঙ্কট ও সুযোগের অভাবে পিছিয়ে রয়েছেন বিএনপির নারী নেত্রীরা। একমাত্র জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ছাড়া দলের প্রত্যেকটি কমিটিতে নির্দিষ্ট কিছু পদ ছাড়া কোথাও জায়গা নেই তাদের। এমনকি মহিলা দলেও যোগ্যতা অনুযায়ী সবার জায়গা হয় না। ফলে দলের নারী নেত্রীদের মাঝে পদ পাওয়া এবং তা দখলের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা চলে। এজন্য অভ্যন্তরীণ কোন্দল জিয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা ছাত্র রাজনীতি থেকে আসেন তাদের অনেকেই মহিলা দলে সুযোগ পান না। এই বঞ্চনার ক্ষোভে অনেকেই রাজনীতি ছেড়ে দেন।
নারী নেত্রীরা আরো বলেন, বিএনপিতে নারী বিষয়ক পদ ছাড়া অন্য পদ পাওয়া যেন আকাশকুসুম ব্যাপার। অথচ দলে নারী নেত্রীদের অবদান কম নয়। এছাড়া শীর্ষ নেতাও নারী। কিন্তু দলের অঙ্গ সংগঠন মহিলা দল ছাড়া কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তাদের।
এজন্য নেত্রীরা মনে করেন, যুব মহিলা দলকে বিলুপ্ত হতে দেয়া ঠিক হয়নি। তাহলে আজকের পরিস্থিতি হতো না। মহিলা দলের মতো এ সংগঠনও শক্তিশালী হতো। আরো বেশি নারী রাজনীতিতে আসার সুযোগ পেতো। সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারতো। যুব মহিলা দল বিলুপ্ত হওয়ায় নারীদের পাশাপাশি বিএনপিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
তুলনামূলক বিচারে নেত্রীরা বলেন, নারীদের জন্য পদ-পদবীর সঙ্কটের কারণে অনেক ভালো নেতৃত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। নতুনরা আসতেও উৎসাহ পায় না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগে মহিলা লীগের পাশাপাশি যুব মহিলা লীগ রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা নেতৃত্বকে সরাসরি যুব মহিলা লীগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ কারণে বিএনপির মতো তাদের নেতৃত্বের প্রবল প্রতিযোগিতায় নেমে নোংরামী কিংবা সেশনজটে পড়তে হয় না। আমরা যারা ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা সরাসরি মহিলা দলের রাজনীতিতে যোগ্যতা অনুযায়ী যেতে পারি না। ফলে ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে আমরা সবসময় শঙ্কিত।
এ ব্যাপারে ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা বলেন, ‘যুব মহিলা দল গঠন করলে আরো অনেক বেশি নারী নেতৃত্বে আসার সুযোগ পাবে। ছাত্রদল করার পর অনকে নারী নেত্রীকেই মহিলা দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়। তখন অনেকে হতাশায় ভোগে। যুব মহিলা দল গঠন হলে নারীদের রাজনীতি করা আরো সহজ হবে।’
কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাহী কমিটিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা থাকলেও আশান্বিত হতে পারছেন না নারীরা।
কারণ হিসেবে নেত্রীরা বলেন, দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের আগে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে নারী নেত্রীরা ভালো অবস্থানে ছিলেন। দলের নেতারা বিভিন্ন মামলার কারণে নির্বাচন থেকে দূরে থাকার সুযোগে অনেক ক্ষেত্রে নারীরা নির্বাচনে অংশ নেন। ফলে তাদেরকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও স্থান পেতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু আগামীতে সেরকম পরিস্থিতির সুযোগ না থাকায় দলে নারীদের নিয়ে ভিশন ব্যর্থ হতে পারে। হেভিওয়েট নেতাদের দাপটে নারীরা তেমন শক্ত অবস্থানে যেতে পারবে না বলে তাদের আশঙ্কা। এছাড়া নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলের কোনো কমিটিতে নারীদের ব্যাপক হারে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আশানুরূপ ফল আসেনি।
এ বিষয়ে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় এক নেত্রী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে নারী নেত্রীদের যথাযাথ স্থানে জায়গা দিতে পারেন না। আবার মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও অনেক ত্যাগী নারী রাজনীতিককে স্থান দেয়া সম্ভব হয় না। এ নিয়ে সংগঠনের অভ্যন্তরে কোন্দল আর গ্রুপিংয়ের সঙ্কট সৃষ্টি হয়। এসব কারণে নারীদের জন্য নেতৃত্ব সৃষ্টি করতেই আমরা যুব মহিলা দল তৈরি করতে চাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুব মহিলা দল গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরে সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরিন বলেন, ‘দলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে যুব মহিলা দল গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে যারা ছাত্রদল করেন পরবর্তীতে তাদেরকে দলের অন্যকোন পদ পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তারা সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। ছাত্রদল করার পর আমাকেই বিএনপিতে পদ পেতে ১১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাহলে অন্যদের অবস্থাতো আরো শোচনীয়।’
যুব মহিলা দল গঠন করা হলে আরো বেশি করে মেয়েরা রাজনীতিতে সক্রিয় হবে বলে বলে তার ধারণা। যুব মহিলা দলের নেতৃত্বে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও ছাত্র রাজনীতি করা মেয়েদের স্থান দেয়া উচিৎ বলেও মনে করেন তিনি।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে মহিলা দলের সাহসী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ছাত্র নেতৃত্ব থেকে উঠে আসা যারা বর্তমানে বিএনপির শীর্ষ পদে আছেন তারা একধিকবার তাদের সঙ্গে যুব মহিলা দল গঠনের বিষয়ে বৈঠক করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ম্যাডামের সঙ্গেও আলাপ করেছেন। সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
যুব মহিলা দল গঠনে আগ্রহী সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদা বিগম হীরা জানান, এই সংগঠন আবার সংগঠিত করতে পারলে দলের মহিলা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও পদ পাওয়ার প্রতিযোগিতার অনেকটা নিরসন হবে। এছাড়া সারাদেশে এ সংগঠনকে শক্তিশালী করতে পারলে দলের সাংগঠনিক ভিত্তিও অনেক শক্ত হবে।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আমি ম্যাডামের সাথে কথা বলেছি। যুব মহিলা দল পুনর্গঠনের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেছেন প্রস্তুতি নিতে। কিছু প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই ম্যাডামের সাথে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলবো। ম্যাডাম গ্রিন সিগন্যাল দিলেই খুব দ্রুততম সময়ে যুব মহিলা দল পুনর্গঠন করা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই