মুছাকে গ্রেফতার নিয়ে পুলিশ লুকোচুরি করছে: স্ত্রী পান্না আক্তার

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ওরফে মিতু ‍আক্তারকে হত্যার ঘটনায় কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছাকে পুলিশ ২২জুন গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী পান্না আক্তার। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি স্বীকার না করায় মুছার বর্তমান অবস্থান নিয়ে শঙ্কায় আছেন তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। স্ত্রী পান্না আক্তারের বলছেন, পুলিশ মুসাকে গ্রেফতার নিয়ে লুকোচুরি করছে।

গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মুসার স্ত্রী বলেন, গত ২২ জুন নগরীর বন্দর এলাকায় এক বন্ধুর বাসা থেকে মুসা ও তার ভাই সাইদুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর সাইদুলকে গ্রেপ্তার দেখান হলেও মুসার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। মুসাকে গ্রেপ্তারের সময় অনেক পুলিশ সদস্য ওই বাসায় গেলেও তাদের মধ্যে দু’জনকে সনাক্ত করতে পেরেছিলেন পান্না। এরা হলেন: বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ ও পরিদর্শক নেজামউদ্দিন (বতর্মানে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে কর্মরত)। পান্না জানান, পুলিশের কথোপকথনে মহিউদ্দিন সেলিম এবং গ্রেপ্তার ওয়াসিম ও আনোয়ারকে আদালতে নেওয়ার ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর নেজামউদ্দিনের পরিচয় সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। মুসাকে গ্রেপ্তারের আগে পুলিশ পুরো পরিবারকে তিনঘন্টা বাসার মধ্যে আটকে রাখে বলেও পান্না আক্তার অভিযোগ করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে পান্না আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারের পর মুসা ছাড়াও ওয়াসিম, আনোয়ার এবং আরো একজনকে ঢাকায় নিয়ে বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চারজনের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রামে ফিরিয়ে আনা হলেও মুসাকে আনা হয়নি। খবর: ইত্তেফাক

এরপর থেকে মুসার আর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। মুসার কোনো খবর না পেয়ে রাঙ্গুনিয়া থানায় জিডি করতে গেলে তা নেয়া হয়নি বলে পান্না অভিযোগ করেন। মুসার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই দাবি করে পান্না আক্তার বলেন, আমার মনে হয় মুসার একটাই দোষ সে বিএনপি করে। বিএনপি করার ‘অপরাধে’ই তাকে এই মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। মুসা যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন কিনা, এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে পান্না বলেন, মুসা বিএনপি করে, এটাই তার একমাত্র দোষ। আমার স্বামীকে আটকের পর থেকে আর কোনো খবর পাচ্ছি না। সরকারের কাছে দাবি, আমার স্বামীকে জীবিত চাই। তাকে আদালতে হাজির করা হোক, কোনো দোষ করলে আদালত তার বিচার করবে। পান্না আক্তার দাবি করেন, ৫ জুন মিতু হত্যাকাণ্ডের সময় মুসা বাসায় ছিল। সে বসে টিভি দেখছিল। আমি রমজানের বাজার গুছিয়ে রাখছিলাম। সে খুব নরমাল ছিল। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে মুসাকে সনাক্ত করার পুলিশের দাবি প্রসঙ্গে পান্না বলেন, ভিডিও ফুটেজ সন্দেহজনক। মুসার মত দেখতে কাউকে হেলমেট পরানো হয়ে থাকতে পারে। আবার পুরনো ভিডিও ফুটেজও হতে পারে। মিতু হত্যার আগের রাতে মুসার বাসায় খুনিদের কোনো বৈঠক হয়নি দাবি করে পান্না আক্তার বলেন, আমরা ফ্যামিলি বাসায় থাকি। তিন রুমের বাসার এক রুমে দুই ছেলে, এক রুমে আমরা এবং একসাথে ড্রইং ও ডাইনিং রুম। সেখানে বাইরের কোনো লোক গিয়ে থাকার অবস্থা নেই।

তিনি বলেন, মুসা আগে গাছের ব্যবসা করলেও এখন বালুর ব্যবসায় সম্পৃক্ত। তিনি ২০০২ সালে সৌদি আরব থেকে ফেরেন। ২০০৩ সাল থেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করছিলেন। কোন্ পুলিশ কর্মকর্তার সোর্স হিসেবে মুসা কাজ করতেন- জানতে চাইলে পান্না বলেন, বিএনপি সরকারের আমলেও মুসা সোর্স হিসেবে কাজ করত, বর্তমান সরকারের আমলেও করে। আমি বাবুল আক্তারকে চিনি না। কখনো তার নাম শুনিনি। তার সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। বাবুল আক্তারের বিষয়ে কখনো আমার স্বামী আমাকে কিছু বলেনি। ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বাবুল আক্তার মুসার বাসায় অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঘরোয়াভাবে জন্মদিন করেছি। ভালভাবে আত্মীয়-স্বজনদেরও বলিনি। প্রশাসনের কাউকে বলার প্রশ্নই আসে না। বাবুল আক্তারের সঙ্গে যদি আমার স্বামীর ভাল সম্পর্কই থাকে তাহলে তার স্ত্রীকে সে মারবে কেন। অনেক অফিসারের সঙ্গেই মুসার ভাল সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বাবুল আক্তারের কথা আমি তার মুখে কখনও শুনিনি। সংবাদ সম্মেলনে মুসার দুই ছেলে শামসুদ্দোহা সিকদার সানি (১০) ও নূরুদ্দোহা সিকদার সানজু (৭) এবং শ্বশুর ফারুক সিকদার উপস্থিত ছিলেন।

গত ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় পুলিশ এপর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরা হলেন- ওয়াসিম, আনোয়ার, ভোলা, মনির, শাহজাহান ও সাইদুল। এদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার হত্যায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে গত ২৬ জুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে তারা বলেন, মুসা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মুসার বাসায় এই পরিকল্পনা হয়েছিল। কিলিং মিশনে মোট সাতজন অংশ নিয়েছিল বলে তারা জানান। আর অস্ত্র সরবরাহ করেছিল ভোলা নামের একজন। মিতু হত্যায় জড়িত সন্দেহে যে পাঁচজনের ওপর দেশ ছাড়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ তাদের মধ্যে মুসাও আছে। অপর চারজন হলেন- রাশেদ, নবী, শাহজাহান ও কালু।



মন্তব্য চালু নেই