শিশুর স্থূলতা প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
শিশুর ওজন বৃদ্ধি পাওয়া শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করে যা তার সামাজিক ও সার্বিক উন্নয়নকেও প্রভাবিত করে। গবেষণায় জানা যায় যে, অ্যাজমা, হাইপারটেনশন, হাই কোলেস্টেরল, হাড় বা জয়েন্টের সমস্যা, নিদ্রাহীনতা এবং ক্যান্সারের মত দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকিতে থাকে স্থূলকায় শিশু-কিশোরেরা। এছাড়াও স্থূল শিশুদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায় এবং তারা অন্যদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পছন্দ করে। তাদের মধ্যে একাকীত্ব, বিষণ্ণতা ও নার্ভাসনেস বৃদ্ধি পায়। সন্তান যেন অতিরিক্ত স্থূলকায় না হয় সে জন্য পিতামাতার করণীয় কাজগুলো হচ্ছে-
১। মায়ের দুধ পান করে বড় হয় যে শিশুরা তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্রেস্টফিডিং স্থূলতা প্রতিরোধ করে। মায়ের দুধে এমন কিছু উপাদান থাকে যা শিশুর ক্ষুধা ও বিপাক প্রক্রিয়াকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আপনার সন্তানকে বোতলের দুধ না দিয়ে বুকের দুধ পান করান।
২। শিশু যখন শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করবে তখন তার পুষ্টির দিকে খেয়াল করুন। শিশুকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার শিশুর প্রতিদিনের খাবারে চর্বিহীন প্রোটিন, মাছ, শাকসবজি, ফল, বীজ ও বাদাম রাখুন। যাতে তার শরীরের স্বাভাবিক গঠনের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি সে পেতে পারে।
৩। শস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিশুকে আস্ত শস্যদানার তৈরি খাবার খাওয়ান। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত ও জাঙ্ক ফুড খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
৪। কোমল পানীয়, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবারগুলো থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। যেহেতু এই খাবারগুলো ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক তাই এগুলো নিয়মিত খাওয়া যেন শিশুর অভ্যাস হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য প্রায়ই খেতে না দিয়ে মাসে একবার খেতে দিন।
৫। শিশুর জন্য প্রোটিনের পরিমাণ নির্ধারণ করাটাও অত্যন্ত জরুরী। এক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন যে, আপনার সন্তানের জন্য কী পরিমাণ প্রোটিন প্রয়োজন। শিশুকে প্রয়োজনাতিরিক্ত খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
৬। আপনার শিশুকে সব সময় ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। প্রসেসড ফুড খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
৭। শিশুকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখার জন্য বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন। তবে শিশুকে সবসময় আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রয়োজন নেই যা বয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য। ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে খুব বেশি কড়াকড়ি করা হলে শিশুর উৎসাহ কমে যেতে পারে। তার শারীরিক সক্রিয়তার কাজগুলোকে তার জন্য আনন্দময় ও নিরাপদ করে উপস্থাপন করুন। যদি কোন প্রশিক্ষকের সাহায্য নিতে হয় তাহলে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে আপনার শিশুর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিন।
৮। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে শিশুরা হয়ে উঠছে আত্মকেন্দ্রীক। কম্পিউটার, প্লে ষ্টেশন বা মোবাইলে গেম খেলেই বেশিরভাগ সময় কাটে শিশুদের। তাই স্থূলতার সমস্যারও সৃষ্টি হয়। এজন্যই আপনার শিশু সন্তানকে ঘরের বাহিরের খেলাধুলায় ও বিভিন্ন ধরণের কাজে উদ্বুদ্ধ করুন যেমন- সাইকেল চালানো, হাঁটা, সাঁতার কাঁটা বা খেলার মাঠে গিয়ে খেলা। বিশেষ করে বন্ধুদের সাথে খেলতে দিন। এতে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভ্যাস তৈরি হবে।
মন্তব্য চালু নেই