পুলিশি নির্যাতনে ‘ভারসাম্য’ হারাতে বসেছে স্কুলছাত্র
ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তার চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধারের নামে যশোরের উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বিপ্লব দশম শ্রেণির ছাত্র আইনুল হক রহিতকে ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছেন। বুট জুতা পরে ওই ছাত্রের শরীরের উপর উঠেছেন পুলিশ কর্মকর্তা। আর লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেদম প্রহর করেছেন।
চুরির কথা স্বীকার করাতে প্রথম দফায় এমন নির্যাতন করার পর ২৪ জুন দ্বিতীয় দফায় আবারও ওই ছাত্রকে বাড়ি থেকে নিয়ে মারপিট করা হয়েছে। আইনুল হক রহিত যশোরের উপশহর বাদশাহ ফয়সাল ইসলামি ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ছাত্র ও উপশহর ১নং সেক্টরের সেন্টুর ছেলে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইসলামী ব্যাংকের ঝিকরগাছার শাখার কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের মোটরসাইকেল গত ১৮ মে উপশহর ডি-ব্ল থেকে চুরি হয়। এ অভিযোগে ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে গত ৮ জুন দুপুরে উপশহর ফাঁড়ির এসআই বিপ্লব ছাত্র রহিতকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। অথচ ওই ভিডিও ফুটেজের সাথে রহিতের কোনো মিল নেই।
এরপর ৮ জুন রাতে কোতোয়ালি থানায় রেখে রহিতের উপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। এসআই বিপ্লব স্কুলছাত্র রহিতের বুকের উপর উঠে বুট জুতা দিয়ে পাড়ায়। এছাড়াও তাকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেদম প্রহর করা হয়।
রহিতের মা জুলি বেগম জানান, তার ছেলে ৮ জুন রোজা ছিল। এ অবস্থায় এসআই বিপ্লব তার ছেলেকে থানায় নিয়ে নির্যাতন করেছে। ৯ জুন ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে রহিতকে ছেড়ে দেয়া হয়। আর এই টাকার লেনদেন হয় যশোর শহরের দড়াটানার বনফুল মিষ্টির দোকানে। পরে ১৮ জুন ডিবি পুলিশের এক দারোগাও রহিতকে এসপি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানেও ভিডিও ফুটেজ মিলিয়ে দেখা যায় রহিতের সাথে মোটরসাইকেল চোরদের মিল নেই। এসপি অফিস থেকে রহিতকে ভালভাবেই ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানায় রহিতের পরিবার।
২৪ জুন আবারো উপশহর ফাঁড়ির এস আই বিপ্লব ভিডিও ফুটেজ মিলানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় রহিতকে। দফায় দফায় পুলিশি হয়রানি ও নির্যাতনে বর্তমানে রহিত মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছে। বিভিন্ন সময় সে একা বসে বিড় বিড় করে কী যেন বলছে। রহিতের পরিবারও পুলিশি হয়রানি ও নির্যাতনে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। রহিতের বাবা সেন্টু শহরের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। তার ওপর রহিতের বিষয়টি নিয়ে তিনিও প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে এসআই বিপ্লব বলেন, মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে রহিতের ওপর নির্যাতন ও টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। অথচ টাকা নেয়ার কথোপকথন রেকর্ড রয়েছে বলে দাবি করেন রহিতের পরিবারের সদস্যরা।
মন্তব্য চালু নেই