সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী শ্রমিক পেয়েছে ৬ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ

রাশিদুল ইসলাম জুয়েল, সিঙ্গাপুর থেকেঃ সিঙ্গাপুরে কাজ করতে গিয়ে প্যারাইলাইসিস হয়ে যাওয়া বাংলাদেশী শ্রমিক তরুণ কুমার সাহা (৩২)কে ৬ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিঙ্গাপুরের আদালত। এ খবর জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইটস টাইমস পত্রিকা।

এতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় তার ওপর একপি ফর্কলিফট ছিড়ে পড়ে। এতে তরুণ কুমার মেরুদন্ডে মারাত্মক আঘাত পান। তিনি তখন গ্রান্ড হায়াত হোটেলের সংস্কার কাজ করছিলেন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তান টোক সেং হাসপাতালে। সেখানে অপারেশনের পর তিনি স্থিতিশীল পর্যায়ে আসেন। কিন্তু তার মেরুদন্ড ও ডান পায়ের হাঁটুতে ফ্রাকচার বা ফাটল রয়েই যায়। ওই হাসপাতালে তাকে মানসিক চিকিৎসাও দেয়া হয়। এরপর তাকে প্রায় দু’মাস পরে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে পাঠানো হয়। তার প্রতি অবহেলার জন্য তিনি তার নিয়োগকারী, সাব কন্ট্রাক্টর চুন কন্সট্রাকশন, প্রধান সাইট কন্ট্রাক্টর হুপ ইউ সেন কন্সট্রাকশনের বিরুদ্ধে আইনজীবী প্রিতম সিং গিলের মাধ্যমে মামলা করেন।

মামলার বিবাদী প্রথমে যুুক্তি দেখান দুর্ঘটনার জন্য তরুণও অংশত দায়ী। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে দুই কন্ট্রাক্টরই শতকরা ৮৫ ভাগ দায় মেনে নেন। এ নিয়ে দু’দিন শুনানি হয়। সেই শুনানি শেষ হয় শুক্রবার। জুডিশিয়াল কমিশনার ভ্যালেরি টিয়েন নির্দেশ দেন যে, তরুণ যে কষ্ট পেয়েছেন তার জন্য ৩ লাখ ২৩ হাজার ৭০০ ডলার, দুর্ভোগ ও ভবিষ্যতে উপার্জনের পথ নষ্ট হওয়ায় ও চিকিৎসা খাতে তাকে আরও ২ লাখ ২৫ হাজার ৭২১ ডলার দিতে হবে। এ ছাড়া আইনী লড়াই বাবদ তাকে আরও ৫০ হাজার ডলার দেয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। এই অর্থে তরুণ খুব স্বস্তিতে থাকবেন না। তিনি বলেছেন, আমি তো অর্থ পাবো। কিন্তু জীবনে তো কিছু করতে পারবো না। তিনি ২০১০ সালে সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে তিনি সাইট সুপারভাইজারের অধীনে একজন সহকারী কনস্ট্রাকশন শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি খেলাধুলায় সক্রিয় ছিলেন। বিয়ে করার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু পঙ্গু হয়ে পড়ায় তার সেই মনের মানুষ তাকে ছেড়ে গেছেন।

তরুণ বলেন, চিকিৎসকরা যখন আমাকে প্রথম বললেন যে, আমি স্থায়ীভাবে প্যারালাইজড তখন সারা পৃথিবী আমার কাছে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। আমি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলাম। তিনি তার পরিবারের একমাত্র ছেলে ও উপার্জনক্ষম। বর্তমানে ৭৫ বছর বয়সী পিতা ও ৭০ বছর বয়সী মাকে নিয়ে বসবাস করেন বাংলাদেশেই। ঢাকা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে তাদের বাড়ি। ওই রিপোর্টে তার গ্রামের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

তিনি বলেন, আমাকে হুইলচেয়ারে দেখতে পেয়ে আমার পিতা-মামা ভেঙে পড়েছিলেন। আমিও ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু সেটা প্রকাশ করিনি। আমি তাদেরকে সেটা বুঝতে দিইনি। কারণ, তারা আমার হতাশার কথা বুঝতে পারলে আরও ভেঙে পড়বেন। অসুস্থ হয়ে পড়বেন। এখন তরুণ একা চলতে পারেন না। তাকে দেখাশোনার জন্য প্রয়োজন সার্বক্ষণিক একজন পুরুষ সেবক। গত শুক্রবার রাতে তিনি ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি ছেড়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই