‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত শরীফ অভিজিৎ হত্যার ‘মূল হোতা’
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেড়াদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবক বিজ্ঞানলেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলার আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে ওই যুবককে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ বললেও ১১টার দিকে পুলিশ তার পরিচয় প্রকাশ করে। নিহত ওই যুবক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার উল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য শরীফ ওরফে হাদি।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক ও প্রকাশক হত্যায় জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহর যে ছয় সদস্যকে ধরতে পুলিশ ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, শরীফ তাদের মধ্যে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’।
গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মাসরুকুর রহমান খালিদ এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘শরীফ বিভিন্ন সময়ে সাকিব, সালেহ, আরিফ ও হাদি নাম ব্যবহার করে পরিচয় গোপন করে আসছিল। সে অভিজিৎ রায় হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়।’
ডিবি সূত্রে জানা যায়, আনসারুল্লাহ ৬ সদস্যের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক খুলনার শরীফ। সে জাগৃতি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, তেজগাঁওয়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবু, সূত্রাপুরে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমউদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। সিসিটিভি ফুটেজে অভিজিৎ রায় হত্যায় শরীফের উপস্থিতিরও প্রমাণ পেয়েছে ডিবি।
শনিবার রাত ২টার দিকে খিলগাঁও মেড়াদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘সন্ত্রাসীদের’ গোলাগুলিতে ওই যুবক নিহত হন বলে জানিয়েছিল পুলিশ।
খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মঈনুল ইসলাম সংবাদকর্মীদের জানিয়েছিলেন, খিলগাঁও থানার পুলিশ তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ খবর দেয়ার সময় পুলিশ জানিয়েছিল, নিহতের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তবে তার নাম-পরিচয় সে সময় জানাতে পারেনি তারা।
নিহতের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘অভিজিৎ রায় হত্যার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে তাকে (শরীফ) দেখা গেছে। এর আগে গ্রেপ্তার আনসারুল্লা সদস্যদের কাছ থেকেও শরীফের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।’
গত ১৫ জুন একই দলের সদস্য সুমন হোসেন পাটোয়ারি ওরফে সিহাব ওরফে সাকিব ওরফে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গত ১৯ মে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেড ছয় জঙ্গির নাম-ঠিকানা ও ছবি প্রকাশ করে। তারা হল— শরীফ, সেলিম, সিফাত, রাজু, শিহাব ও সাজ্জাদ। ওই ছয় জঙ্গির প্রথমেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত শরীফের নাম ছিল।
ডিএমপির ওয়েবসাইটে শরীফকে এবিটির গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সংগঠক উল্লেখ করে বলা হয়, সে সংগঠনে শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ নামে পরিচিত। তার বাড়ি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে। সে সংগঠনের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াও আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ধরনের ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে আসছে।
শনিবার সকালে মাদারীপুরে শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর উপর হামলার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার ‘শিবিরকর্মী’ গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমও কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
ওই ঘটনায় ‘বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা’ করে সরকার প্রকৃত ঘটনা ‘আড়ালের’ চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘হত্যা করার মানে হচ্ছে, একটা জিনিসকে তিনি (সরকার) আড়াল করলেন। তিনি এটাকে সামনে আসতে দিলেন না।’
মন্তব্য চালু নেই