একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে জাবি ছাত্রলীগ
শাহাদত হোসাইন স্বাধীন, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে। কখনো নিজেদের প্রভাব ধরে রাখার স্বার্থে প্রতিপক্ষকে মেরে রক্তাক্ত করছে, কখনো বা মেয়ে বন্ধুর সামনে নিজেকে বাহাদুর প্রমাণ করতে অন্যকে মেরে অজ্ঞান করছে।
আবার কখনো ক্যাম্পাসে নিজের আধিপত্য দেখাতে ঠুনকো অভিযোগে হোটেল বয়, রিকশাওয়ালাদেরও পেটাচ্ছে। ছাত্রলীগের এই বেপরোয়া আচরণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাংবাদিকরা পর্যন্ত। ফলে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে নিজেদের ক্লিন ইমেজ ধরে রাখতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।
জানা যায়, অতি দ্রুত ক্যাম্পাসে কমিটি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংগঠন। ফলে নেতাকর্মীরা সবাই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। অন্যদিকে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কমিটি নিজেদের প্যানেল নিয়ে তৎপর।
ফলে শাখা ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানের অভাবে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। যার কারণে বর্তমান কমিটির নেতৃত্বের বলয়ের বাইরে নতুন নতুন বলয়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নিজের বলয়কে ভারী করতে ছাত্রলীগের তকমা লাগিয়ে যাকে পাচ্ছে তাকেই টেনে নিচ্ছে। এমনকি জাবির ছাত্র না হয়েও অনেকেই ছাত্রলীগের কর্মী হয়েছেন। ফলে ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর ঘটনার পরিমাণ বাড়ছে।
সর্বশেষ গতকাল রোববার বিডি প্রেসের জাবি প্রতিনিধি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সদস্য আবু রায়হান (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, ৪১ তম আবর্তন) ছাত্রলীগের শিকার হন।
জানা যায়, আবু রায়হান শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় কম্পিউটার কোর্স শেখার জন্য ক্যাম্পাস থেকে সেনওয়ালিয়া যাওয়ার পথে বিশমাইল গেটের পানির ট্যাঙ্কির কাছে তার উপর পিছন থেকে অতর্কিত হামলা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
হামলাকরীরা হলেন শরীফ হোসেন লস্কর (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ৪২ তম আবর্তন), রিয়াজুল ইসলাম (বাংলা বিভাগ, ৪৪ তম আবর্তন) ও কয়েকজন বহিরাগত।
হামলাকারীরা রায়হানকে রড স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকলে তার চিৎকার শুনে কবির (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, ৩৪ আবর্তন), সায়েমসহ (সরকার ও রাজনীতি, ৪০ তম আবর্তন) কয়েকজন হামলাকারীদেরকে থামাতে গেলে লস্কর তাদের উপরও চড়াও হন।
পরবর্তীতে বিশ^বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা অফিসার সজল এবং প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য সহকারী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তর করে।
হামলাকারী লষ্কর শহীদ রফিক জব্বার হল শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নওশাদ আলম অনিকের সহচর। বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের চলমান কমিটির বিপরীতে একটি বিদ্রোহী গ্রুপ তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। পোষ্য হওয়া সত্ত্বেও লষ্কর শহীদ রফিক জব্বার হলে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ অবস্থান করছে।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের স্বাধীনতা দিবসে হলের ডাইনিং ভাংচুর, ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, মাদকবিক্রিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
হামলার শিকার আবু রায়হান বলেন, আমি বিশমাইল দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো কারণ ছাড়াই অতর্কিতভাবে লষ্কর, রিয়াজুলসহ কয়েকজন রড, স্ট্যাম্প নিয়ে আমার উপর হামলা করে। পরে ক্যাম্পাসের বড় ভাই ও প্রক্টরিয়াল বডি আমাকে উদ্ধার করে। অফিস বন্ধ থাকায় আমি অভিযোগ দিতে পারিনি। তাদের সাথে আমার কোনো শত্রুতা ছিল না। সোমবার প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিবো।
মন্তব্য চালু নেই