বাংলাদেশে নাগরিকত্ব এবং জমি পেয়েছিলেন মোহাম্মদ আলি
‘ইফ আই গেট কিকড আউট অব আমেরিকা, আই হ্যাভ অ্যানাদার হোম।’- বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর এই মন্তব্য করেছিলেন কিংবদন্তী বক্সার মোহাম্মদ আলি। ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এসেছিলেন বিশ্বখ্যাত এই ক্রীড়াবীদ। তখন মোহাম্মদ আলিকে বাংলাদেশে সম্মাসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় এবং নাগরিকত্বের সনদ ও পাসপোর্টও তার হাতে তুলে দেয়া হয়।
সেবার বাংলাদেশের বেশ কিছু জায়গা সফর করেন মোহাম্মদ আলি। কক্সবাজার সমূদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়ার পর সেখানে একখণ্ড জমিও তাকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়। মোহাম্মদ আলি যখন বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন তিনি আবারও এখানে ফিরে আসার এবং একটি বাড়ি নির্মাণের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের রূপ-সৌন্দয্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘যদি আপনি স্বর্গে যেতে চান, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশে আসুন।’
ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সামর্থ্যবান সব তরুণকেই পাঠাতে বাধ্য করছিলেন তখনকার আমেরিকান সরকার; কিন্তু মোহাম্মদ আলি যুদ্ধে যেতে তো অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেনই, সঙ্গে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যাপক বিরোধিতা শুরু করেছিলেন। ফলে মার্কিন সরকারের বেশ বিরাগভাজন হন আলি। তবে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে অবস্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে শক্তি, বাগ্মিতা, বিবেক এবং সাহসের প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি।
মোহাম্মদ আলির ডকুমেন্টারি- যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘মোহাম্মদ আলি গোজ ইস্ট: বাংলাদেশ, আই লাভ ইউ’ থেকে জানা যায়, তিনি বহির্বিশ্ব ভ্রমণে বের হবেন। সর্বশেষ পরাজয়ের কারণে পাগলাটে ভক্ত-সমর্থকদের সম্ভাব্য আক্রমণের ভয় থাকা সত্ত্বেও তিনি বের হয়েছিলেন এই সফরে। ঢাকায় তিনি যখন পা রাখেন, তাকে অভ্যর্থণা জানাতে প্রায় (ডকুমেন্টারির হিসাব মতে) ২০ লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছিল।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি সুন্দরবন, সিলেটের চা-বাগান, রাঙামাটি এবং উপকুলীয় শহর কক্সবাজার সফর করেন। কক্সবাজারে যাওয়ার পর তাকে একটি জমি উপহার দেয়া হয়।
ঢাকায় আসার পরপরই অবশ্য পল্টন ময়দানে হাজার হাজার ভক্তের সামনে উপস্থিত হন মোহাম্মদ আলি। এখানে তার নামে স্থাপনকরা একটি বক্সিং স্টেডিয়ামেরও উদ্বোধণ ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয়, ১২ বছর বয়সী এক বালকের সঙ্গে প্রীতি বক্সিং লড়াইয়েও অংশ নেন তিনি। যেখানে সেই ১২ বছর বয়সী বক্সারের হাতে নকআউট হয়েছিলেন তিনি।
১৯৭০ সালে ক্যারিয়ার শেষ করে দিলেও মোহাম্মদ আলি ছিলেন সারা বিশ্বের কাছে সম্মানিত একজন ব্যাক্তি। বক্সিং রিংয়ের বাইরেও তিনি ছিলেন সরব কন্ঠস্বর। ধর্ম পরিবর্তণ করা কিংবা ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করে মোহাম্মদ আলি আমেরিকান সরকারের কাছে একজন নিন্দিত ব্যাক্তি হলেও সারা বিশ্বের কাছে তিনি ছিলেন বেশ আকর্ষণীয়। ইসলাম গ্রহণ করার কারণে মুসলিম বিশ্বের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হন আলি।
মন্তব্য চালু নেই