কী বলছেন কুষ্টিয়ায় নিহত হোমিও চিকিৎসকের ভাই?
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে কুষ্টিয়ায় দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক মীর সানাউর রহমানের বড় ভাই বলছেন তাঁর আশঙ্কা মি: রহমান বাউল-ভক্ত ছিলেন বলে তাকে মারা হয়ে থাকতে পারে।
তবে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার বলছেন ওই চিকিৎসকের কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল কীনা এবং সে কারণে তাকে মারা হয়েছে কীনা সে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তারা তদন্ত করছেন।
মীর সানাউর রহমানের ভাই মীর আনিসুর রহমান বলেছেন, পুলিশের এই বক্তব্য তিনি মানতে রাজি নন।
“ওর কোনো ব্যক্তিগত শত্রু নেই। তিনি বাউল ভক্ত ছিলেন, সে কারণে এই হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে।”
“বাগানবাড়িতে উনি ডাক্তারি করতেন। আর মাঝে মাঝে বাউলরা সেখানে এসে গান করতো।”
মীর আনিসুর রহমান বলছেন ভোরে তিনি তার ভাইয়ের বাগানবাড়িতে গিয়েছিলেন।
কুষ্টিয়া শহর থেকে ছয় সাত কিলোমিটার দূরত্বে বটতৈল ইউনিয়নের শিশিরপাড়া মাঠ এলাকায় মীর সানাউর রহমান তার বাগানবাড়িতে প্রতি শুক্রবার গ্রামের গরিব মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন।
সকাল আটটার দিকে তিনি সেখানে দেখেন, তার ভাইয়ের কাছে চিকিৎসা নেয়ার জন্য অনেক রোগী জড়ো হয়েছেন। তখন সেখান থেকে তিনি তাঁদের শহরের বাসায় ফোন করে তাঁর ভাইয়ের বাগানবাড়িতে আসার সময় জানতে চেয়েছিলেন। তাঁকে জানানো হয়েছিল, তাঁর ভাই চা খেয়েই রওয়ানা দিচ্ছেন। এই তথ্য উপস্থিত রোগীদের জানিয়ে দিয়ে মীর আনিসুর রহমান বাগানবাড়ি থেকে বেড়িয়ে গ্রামে নিজের কাজ সেরে শহরে ফেরত আসেন।
এই সময়ের মধ্যে তাঁর ভাই মীর সানাউর রহমানকে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মীর আনিসুর রহমান শহরে বাসার কাছে এসে খবরটি পান।
তাঁকে আরও জানানো হয়েছিল, তাঁর ভাইয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ ঘটনাস্থলেই পড়ে আছে। সাথে সাথেই তাঁরা পরিবারের কয়েকজন সদস্য সেখানে গিয়ে দেখেন, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ হাসপাতালে নিচ্ছে। আর মীর সানাউর রহমানের বন্ধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো: সাইফুজ্জামানকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।
হোমিও চিকিৎসক মীর সানাউর রহমান শহরের বাসা থেকে তাঁর বন্ধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক মো: সাইফুজ্জামান সহ মোটরসাইকেলে করে বাগানবাড়ি যাচ্ছিলেন। দুর্বৃত্তরাও মোটরসাইকেলেই এসে বাগানবাড়ির কাছে আগে থেকে ওঁৎ পেতে ছিল।
ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় একজন সাংবাদিক তারিকুল হক জানিয়েছেন, হোমিও চিকিৎসক মীর সানাউর রহমানকে বন্ধুসহ মোটরসাইকেলে থাকা অবস্থায়ই দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কোপানো শুরু করে।
মীর আনিসুর রহমান বলেছেন, সেখানকার মানুষ তাঁর ভাইকে ভালবাসে। ফলে তাঁকে সেখানে কেউ হত্যা করতে পারে, এটি তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
তবে কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম বলেছেন, বাগানবাড়িকে ঘিরে বা চিকিৎসার বিষয়ে হোমিও চিকিৎসকের ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল কিনা, সে বিষয়কেই পুলিশ তাদের তদন্তে গুরুত্ব দিচ্ছে।
ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ অবশ্য এখনও কাউকে সনাক্ত করতে পারে নি। তবে তাদের তদন্তকারীরা ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছেন।
কেমন মানুষ ছিলেন এই হোমিও চিকিৎসক?
আহত শিক্ষকের একজন সহকর্মী, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষক মঞ্জুর রহমান জানিয়েছেন নিহত চিকিৎসক এলাকায় খুব ভাল মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন এবং উনি সমাজসেবামূলক অনেক কাজ করতেন।
“প্রায় তিন চারশ রোগী প্রতি শুক্রবার ওনার কাছে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিত। এই কাজটি উনি প্রায় দশ বারো বছর ধরে করে আসছেন।”
তবে তিনি জানান যে এলাকায় উনি চিকিৎসা দিতেন জানা গিয়েছিল যে সেখানে বখাটে কিছু তরুণ নেশা করতেন এবং চিকিৎসার সময় কিছু লোকের সেখানে সমাগম হওয়ায় নেশাখোরদের কিছুটা অসুবিধা হয়ে যায়।
“আমি যতটুকু শুনেছি ওই নেশাখোরদের ডাক্তার মোটামুটি চিনেন এবং ওদেরকে এই নেশা থেকে বিরত রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে বলে শোনা গেছে।”
“ডাক্তার লালনের ভক্ত ছিলেন। আমার সহকর্মী সাইফুজ্জামান – উনিও লালনভক্ত হয়ে ওঠেন – কারণ উনি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করে এসেছেন।”
মি: বলছেন তার ধারণা বাউল ভক্ত হওয়ার কারণে মীর সানাউর রহমানকে মারা হয়ে থাকতে পারে, কারণ বাউল চর্চ্চার বিরোধী গোষ্ঠি যে এলাকায় রয়েছে সে প্রমাণ এলাকাবাসী আগে পেয়েছে বলে সাক্ষাৎকারে তিনি মত প্রকাশ করেন।
কয়েকমাস আগে দক্ষিণ-পশ্চিমের আরেক জেলা ঝিনাইদহে একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল এবং সেই ঘটনায় আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করেছিল।-বিবিসি
মন্তব্য চালু নেই