১০০ গ্যাস কূপ খননে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ থাকবে

দেশে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদাপূরণে সরকার ১০০টি নতুন গ্যাস কূপ খনন এবং একটি এলএনজি গ্যাস টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হবে।

এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে আরো শক্তিশালী করতে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হবে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, দেশে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে ৫৭টি অনুসন্ধান কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছিল জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এখন এ সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এসব কূপ থেকে আনুমানিক দৈনিক ১০৭৮ থেকে ১২৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে।

গ্যাসের মজুদ বৃদ্ধির জন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অনুসন্ধান কার্যক্রমের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কারিগরিভাবে অধিকতর শক্তিশালী করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। আগামী অর্থবছরে বাপেক্সকে আরো বরাদ্দ দেওয়া হবে।

সূত্র জানান, নতুন গ্যাসক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য বাপেক্স কর্তৃপক্ষ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২-ডি সাইসমিক সার্ভে কার্যক্রম, বিদ্যমান গ্যাস ক্ষেত্রের মজুদ পুনর্মূল্যায়নের জন্য ৩-ডি সাইসমিক সার্ভে কার্যক্রম এবং তেল/গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে অনুসন্ধান কূপ খনন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য আগামী ৫ বছরে ১০০ অনুসন্ধান কূপ খনন করবে বাপেক্স। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাপেক্সের একার পক্ষে এতো কূপ খনন করা সম্ভব নয়।

দেশের ২৭টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র থেকে শিল্পের জন্য প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু, শিল্পে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ মুহূর্তে তা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিবছর ২০টি করে কূপ খনন করার চেষ্টা করা হবে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইলস মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস সঙ্কটের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে ৮৭০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ। বন্ধ হয়ে আছে ২৮টি টেক্সটাইল মিল আর আটকে আছে দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। এ সব কারখানায় জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগের দাবি জানিয়েছে বিটিএমএ। তবে দুই বছর পর গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে সরকার। বর্তমান চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় স্বাভাবিক থাকলেও এখনো প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ মিলিযন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি রয়েছে।

দুই বছরে ১০টি নতুন কূপ খনন করে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং এলএনজি আমদানি করে আরো ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বাড়ালে সংকট কমে যাবে। এ লক্ষ্যে সরকার মহেশখালীতে দেশের প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি) টার্মিনাল (এসএসআরইউ) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে এই টার্মিনালের মাধ্যমে তা পুনরায় গ্যাসে রূপান্তরিত করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।

এ ছাড়া আরো দুটি এলএনজি গ্যাস টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আসন্ন বাজেটে এ খাতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই