৯৬ বছর বয়সে গ্র্যাজুয়েট
তার ষাট বছরেরও বেশি সময় লেগেছে ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি পেতে। তবুও তিনি হাল ছেড়ে দেননি। অবশেষে সফল হয়েছেন ৯৬ বছরে এসে। নাম আলফোনসো গনজালেজ। গত শুক্রবার ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তিনি দীর্ঘ কাঙ্খিত ডিগ্রি পেয়েছেন।
ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে বয়স্ক গ্র্যাজুয়েট এখন তিনি। গনজালেজ জুওলজিতে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়া গনজালেজ ১৯৫৩ সালে পেশাগত কারণে ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন, গ্র্যাজুয়েট হয়ে গেছেন। কিন্তু কিছুদিন আগে বিশেষ একটি কাজে তার আত্মীয়রা ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় গেলে জানতে পারেন গ্র্যাজুয়েট হননি গনজালেজ। এ জন্য নতুন করে পড়াশোনায় বসতে হবে তাকে।
যদিও এরই মধ্যে ইউনিভার্সিটি থেকে জুওলজি বিষয়টি আর আলাদা করে পড়ানো হচ্ছিল না। তখন গনজালেজের জন্য বিশেষ এক ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। নতুন এক বিষয় ‘জেরোনটোলজি’ (বার্ধক্যবিদ্যা) শুধু মাত্র তার জন্য চালু করা হয়। তার কোর্সটা ছিলো অটো বায়োগ্রাফি নিয়ে স্বাধীন এক গবেষণা। তাকে পড়া ও ভিডিও এসাইনমেন্ট দেয়া হয়। আর তার নিজের জীবনের টার্নিং পয়েন্টগুলো নিয়ে একটি থিসিস পেপার করে দিতে বলা হয়।
এ জন্য গনজালেজকে বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে তার চেয়ে অন্তত ৭০ বছরের ছোট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসাইনমেন্ট তৈরি করতে হয়। সে সময় তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে একটি বড় ভুল করেছি, প্রচুর ধূমপান করতাম। আমার উপদেশ হলো তোমরা তা করো না।’ এ সময় ১৯৪৭ সালে তিনি ক্যাম্পাসে যে চামড়ার ব্যাগ নিয়ে যেতেন, সেই ব্যাগে কোর্সের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতেন তিনি।
ক্যালিফোর্নিয়ার হারমোসা বিচের অধিবাসী গনজালেজ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মেরিন সেনা হিসেবে কাজ করেন জাপানে। এরপর সয়েল কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন। ৮৮ বছর বয়সে অবসর নেন। তবে জীবন সায়াহ্নে এসেও লেখাপড়া, ডিগ্রি নেয়ার ব্যাপারে দারুণ আগ্রহ তার। এ প্রসঙ্গে তার ভাতিজা মারিও গনজালেজ বলেন, ‘ডিগ্রিটা নেয়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ যা করতে বলেছে আঙ্কেল তাই করেছে।’
গত শুক্রবার যখন তিনি ১৭ হাজার গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে বসেছিলেন, তখন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট নিকিয়াস তার সম্পর্কে বলেন, ‘একজন সত্যিকারের পরিশ্রমী হিসেবে পড়াশোনা শেষ করার দৃঢ় সংকল্প ছিলো তার। তাই আজ ৯৬ বছর বয়সে ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে বয়স্ক গ্র্যাজুয়েট হলেন তিনি।’
ডিগ্রি পেয়ে গনজালেজের বক্তব্য হলো- ‘এই ইউনিভার্সিটিতে আবারো আসতে পেরে, জ্ঞানের পরিবেশে প্রবেশ করে ভালো লাগছে আমার। জ্ঞান অন্তর্নিহিত বিষয়। এটা আপনার কাছ থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’
ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এক সময় নীল আর্মস্ট্রং, জর্জ লুকাসের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিরা গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। সেখানে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পেরে গনজালেজ দারুণ খুশি।
মন্তব্য চালু নেই