যেসব শারীরিক লক্ষণ দেখলে বুঝবেন সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে
আমাদের শরীর প্রকৃতির বড় একটি বিস্ময়। অনেক সময়ে বড় কোনো অসুখ শরীরে বাসা বাধা শুরু করে। আমাদের বোঝার ক্ষমতা না থাকলেও শরীর কিন্তু ছোট ছোট বিপদ সংকেতের মাধ্যমে আমাদের ঠিকই বোঝানোর চেষ্টা করে যে আমাদের স্বাস্থ্যের বড় কোনো বিপর্যয় ঘটতে চলেছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো কাজ, হাতের লেখা, নাক ডাকা এগুলোও হতে পারে বিপদ সংকেত। চলুন দেখে নেই এমনই কিছু উপসর্গ আর নিজেকে রাখি বিপদ থেকে নিরাপদ-
১) অকারণে ওজন কমে যাওয়া
খাওয়া বা ব্যায়ামে কোনো পরিবর্তন না এনেও যদি আপনার ওজন দ্রুত পাঁচ কেজি বা তারও বেশি কমে যায়, তাহলে এটা হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ। প্যানক্রিয়াটিক, ইসোফ্যাগাল, স্টমাক বা লাং ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা যায়।
২) দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি
দাঁতের এনামেল কোনো কারণ ছাড়াই যদি ক্ষয়ে যায়, তাহলে চিন্তিত হতে হয় বই কী। গ্যাস্ট্রিক, হার্টবার্নের রোগীদের এমন হতে পারে। তারা হয়তো মোটেই বোঝেন না পেটে কোন সমস্যা হয়েছে। হয়তো পেট বা গলা জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যাগুলোও নেই। কিন্তু এমন সমস্যা থাকলে আপনার ইসোফ্যাগাল ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। তাই অ্যাসিড রিফ্লাক্স (আমরা যাকে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি বলে চিনি) তার সমস্যা থাকলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে ট্রিটমেন্ট নিন। এছাড়া কিছু ব্যাকটেরিয়া যারা দাঁতের মাড়ি ফুলে যাবার জন্য দায়ী, তারা হৃদরোগের জন্যও দায়ী হতে পারে। এ কারণে মাড়ির এই প্রদাহ সারিয়ে তোলা জরুরী।
৩) ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং র্যাশ
একজিমার মতো দেখতে এমন র্যাশ হতে পারে কনুই, হাঁটু, পশ্চাৎদেশ, পিঠ অথবা মাথার তালুতে। কিন্তু এটা হতে পারে আরও গুরুতর কোনও রোগের লক্ষণ। সিলিয়াক ডিজিজ নামের একটি অটোইমিউন ডিজিজের কারণে গ্লুটেনসমৃদ্ধ যে কোনো খাবার খেলেই এমন প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে শরীরে। তবে বাংলাদেশে এমনটা হবার সম্ভাবনা একটু কমই।
৪) বাথরুমের অভ্যাসে পরিবর্তন
বারবার ছোট বাথরুমে ছোটা হতে পারে টাইপ টু ডায়াবেটিস, ব্লাডার বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের একটি লক্ষণ। কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়ারিয়া হতে পারে কোলোন ক্যান্সার বা ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণ। এগুলোর পাশাপাশি থাকতে পারে পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা। এক সপ্তাহের বেশি সময় এসব সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
৫) হেমোরয়েড
গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যাকের একটি জটিলতা হলো ক্রন’স ডিজিজ। এর কারণে হেমোরয়েডের মতো বৃদ্ধি দেখা যায় পায়ুপথে। এতে বসতে কষ্ট হয় রোগীদের। কিন্তু হেমোরয়েডের চিকিৎসায় এতে কাজ না হলে ডাক্তারকে জানান। কিছু টেস্ট করে জানা যেতে পারে আপনার শরীর লুকানো কোনও রোগ আছে কিনা।
৬) হাতের লেখায় পরিবর্তন
পারকিনসন্স ডিজিজের কথা ভাবুন। আমরা এর উপসর্গ হিসেবে ধরে নেই হাত কাঁপা। কিন্তু এর আরেকটি উপসর্গ হলো হাতের লেখা ছোট হয়ে যাওয়া। এর পাশপাশি যদি ঘ্রাণের বোধ কমে আসে এবং খুব বিচিত্র স্বপ্ন দেখতে থাকেন, তাহলে সতর্ক হন এবং ডাক্তারকে জানান। কারণ এই দুইটিও পারকিনসন্স ডিজিজের বড় লক্ষণ।
৭) হুট করে রেগে আগুন হয়ে যাওয়া
ডিপ্রেশন মানে শুধু এই নয় যে মানুষটি সবসময় নিজের মাঝে গুটিয়ে থাকবেন, অথবা সবসময় মনমরা হয়ে থাকবেন। হুটহাট ছোট কারণে বা কারণ ছাড়াই প্রচন্ড রেগে যাওয়াটাও হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ডিপ্রেশনের একটি লক্ষণ।
৮) দীর্ঘদিন যাবত কাশি
কাশি নিজে তেমন কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কাশি না সারাটা বিপদ সংকেত বটে। আপনার যদি অ্যালার্জি, অ্যাজমা বা সাইনাসের সমস্যা না থাকে অথচ এমন কাশি থাকে, তাহলে ডাক্তারকে জানানো জরুরী। তা হতে পারে লাং ক্যান্সারের লক্ষণ অথবা ল্যারিংস বা গলার ক্যান্সারের লক্ষণ।
৯) স্মৃতিশক্তির অবনতি
নিজের খরচাপাতির খবর না রাখতে পারা, পরিচিত মানুষদের নাম ভুলে যাওয়া, কোনো চেনা জায়গায় যেতে রাস্তা ভুলে যাওয়া, রান্নার রেসিপি ভুল করা এগুলো হতে পারে আলঝেইমারের প্রাথমিক লক্ষণ। হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণেও এটা হতে পারে।
১০) নাক ডাকা
স্লিপ অ্যাপনিয়ার একটা পরিচিত লক্ষণ হলো নাক ডাকা, যার ফলে হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু যাদের নাক ডাকার সমস্যাটি আছে তাদের ক্যারোটিড আর্টারির দেয়াল পুরু হয়ে যাবার সমস্যাটাও দেখা যায়। স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের সূচনা করতে পারে এই সমস্যাটি।
১১) ইরেকটাইল ডিসফাংশন
ইরেকটাইল ডিসফাংশন হলে পুরুষেরা লজ্জায় কোনোমতে ডাক্তারের থেকে ওষুধ নিয়ে পালাতে পারলে বাঁচেন। কিন্তু এর পেছনে যে আরও বড় সমস্যা লুকিয়ে থাকতে পারে তা নির্ণয়ের সুযোগ দেন না ডাক্তারকে। পুরুষাঙ্গের ধমনিগুলো হয় সারা শরীরের অন্যান্য ধমনীর চাইতে পাতলা। একারণে শরীরের অন্য কোথাও হার্ট ডিজিজের লক্ষণ দেখা দেবার আগে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১২) অকারণে রক্তপাত
কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে রক্তপাত হচ্ছে এর পেছনে ভালো কোনো কারণ থাকতে পারে না। কাশির সাথে রক্ত যাওয়া হতে পারে লাং ক্যান্সারের লক্ষণ, ভ্যাজিনাল রক্তপাত হতে পারে সার্ভিক্যাল বা এন্ডোমেট্রিক্যাল ক্যান্সারের লক্ষণ, মলের সাথে রক্ত যাওয়া হতে পারে কোলোন বা রেক্টাল ক্যান্সারের লক্ষণ, মুত্রের সাথে রক্ত যাওয়া হতে পারে ব্লাডার বা কিডনি ক্যান্সারের লক্ষণ, এছাড়াও স্তন থেকে রক্তপাত হওয়াটা হতে পারে স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ। যে কোনটি দেখা দিলেই ডাক্তারকে জানান অতি সত্বর।
মন্তব্য চালু নেই