নিখোঁজের ১৪ দিন পরও সন্ধান মেলেনি বেরোবি’র শিক্ষার্থী মামুনের
এইচ.এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনের নিখোঁজের ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও সন্ধান মিলছে না এখনও। ডিবি পরিচয়ে প্রায় ১৫ সদস্যের একটি টিম ওই শিক্ষার্থীকে গত ১০ এপ্রিল সোমবার ভোর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সর্দার পাড়ার মোসলেমীন নামের একটি ছাত্রাবাস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে।
ঘটনার দু’দিন পর গত ১২ এপ্রিল রংপুর কোতয়ালী থানায় শিক্ষার্থীর ফুফাত ভাই আক্কাস আলী একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। যার জিডি নং ৭৯২ তাং-১২/৪/২০১৬। কিন্তু হদীস মিলছে না কোথাও।
নিখোঁজ শিক্ষার্থী রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার মহিষভাঙা গ্রামের বাসিন্দা জোমারত আলীর ছেলে। তারা তিন ভাই এক বোন। আবদুল্লাহ আল মামুন সবার ছোট। সে গ্রামের ইয়াকুব আলী বিদ্যাপীঠ স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পাশ করে এবং রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজ থেকে ২০১৫ সালে এইচএসসি পাশ করে। ২০১৬ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে উত্তীর্ণ হয়।
নিখোঁজের বড় ভাই হাসান আলী জানান, মামুন ছোট বেলা থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। খুবই ধার্মিক ছিলো। তবে নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলো কী না জানতে চাইলে বলেন, এ রকম তথ্য জানা নাই এবং আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আর এ রকম সংগঠনের কোনো বই তাকে আনতে বা কারো সাথে যোগাযোগ করতে দেখিনি।
নিখোঁজ শিক্ষার্থীর বড় ভাই আরো জানান, ছোট ভাইয়ের জন্য পরিবারের সবার মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বৃদ্ধ বাবা-মা শয্যাশায়ী হয়েছেন তাদের ছোট ছেলের জন্য। গত শুক্রবার কোতয়ালি থানায় যোগাযোগ করলে সেখান থেকে ( আমার ছোট ভাইকে) পাওয়া মাত্র জানানোর কথা জানিয়েছে তারা। ‘কী কারনে আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আমরা জানি না’ বলেন শিক্ষার্থীর বড় ভাই হাসান আলী।
জিডির দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির এসআই এরশাদ হোসেন কে জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় নিখোঁজের ব্যাপারে তলব করেছি। এখনও কোনো সন্ধান পাইনি।’ তিনি আরো জানান, ‘কেউ এ ব্যাপারে কোনো সঠিক তথ্য দিচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের প্রতিনিধি তানজিউল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে যতটুকু পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা নিয়েছি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি এবং খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে যতদুর জানা গেছে এখনও সন্ধান মেলে নি।
ছাত্রাবাস সূত্রে জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল সোমবার আনুমানিক ভোর সাড়ে চারটার দিকে সাদা পোশাকের প্রায় ১৫জন মানুষ মেসের দরজায় এসে শব্দ করে তালা খুলতে বলে। এ সময় ৩-৪ জন শিক্ষার্থী দরজার কাছে আসলে তাঁরা তাদের নাম বলতে বলে। পরে তারা প্রশাসনের লোক বলে পরিচয় দিলে তালা খুলে দেয় শিক্ষার্থীরা।এরপর ভিতরে ঢুকে রাজবাড়ির কেউ থাকে কি না জানতে চায় সাদা পোশাক পরিহিত ওই লোকগুলো। একই সাথে মোবাইল নাম্বার ট্রেকার দিয়ে সবগুলো কক্ষ পরীক্ষা করে তারা। একপর্যায়ে মামুন নামের কেউ থাকে কি না জানতে চায়। এমন সময় নাম্বার ট্রাকিংরত ব্যক্তি মামুনের অবস্থান সনাক্ত করে তার দরজা খুলতে বলে। মামুন দরজা খুলে দিলে সেই লোকগুলো তার কক্ষে তালাশ চালায় এবং তাকে আটক করে নিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা এসময় সাদা রঙ্গের একটি গাড়ি দেখতে পায় বলে জানায়।
ঘটনার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহীনুর রহমান (চলতি দায়িত্ব) জানিয়েছেন।
তবে নিখোঁজের ১৪ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও খুঁজে না পাওয়ায় জনমনে আতংক ও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।নিখোঁজের সন্ধান দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকদফা মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হলেও সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ শিক্ষার্থীর বড় ভাই এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মন্তব্য চালু নেই