অধ্যাপক রেজাউল সংস্কৃতিমনা ছিলেন, নামাজও পড়তেন

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) উপকমিশনার (ডিসি) নাহিদুল ইসলাম বলেছেন, দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী সংস্কৃতিমনা ছিলেন। আবার তিনি নামাজও পড়তেন। ফলে তাঁর হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে, এমনটি বলা যাচ্ছে না।

আজ শনিবার রাবি শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আরএমপির ডিসি।

নাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সাহেব অন্যান্য দিনের মতো আজকেও এখান থেকে ৭টা ৪০-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বাস, সেখান থেকে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন, সে অনুযায়ী আজকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আমরা অনুমান করি, বাসা থেকে বের হইছিলেন। বের হইলে পথিমধ্যেই উনাকে পিছন থেকে আঘাত করে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে। এরপরে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়।’

‘আমরা এ পর্যন্ত কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাইনি। তবে হত্যাকাণ্ডের ধরন এবং অপরাধপ্রক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে যে, ঢাকা বা বিভিন্ন স্থানে ব্লগারদেরকে যেভাবে পিছন দিক দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, সে ধরনেরই মডাস অপারেন্ডিতে (প্রক্রিয়া) ঘটনাটা ঘটেছে বলে আমরা ধারণা করছি।’

আরএমপি কমিশনার আরো বলেন, ‘সেই সাথে উনার ব্যক্তিগত জীবন তথা উনার কোনো সমস্যা আছে কি না, পেশাগত জীবনে বা পারিবারিকভাবে বা কারো সাথে দ্বন্দ্ব রয়েছে কি না। যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি, উনি সংস্কৃতিমনা। আবার নামাজ-টামাজও নিয়মিত পড়তেন। তো সেই হিসেবে উগ্র জঙ্গিবাদের শিকার হওয়াটা, আশঙ্কাটা সরাসরিও করা যাচ্ছে না। যেহেতু উনি সেক্যুলার হলেও ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন এবং নিয়মিত নামাজ-টামাজও পড়তেন।’

‘তবে উদার সংস্কৃতিমনা ছিলেন। লেখালেখিও উনি করতেন এবং যদ্দূর আমরা জানতে পেরেছি, উনার যে গ্রামের বাড়ি বাগমারা এলাকা, উনি একটা মিউজিক (সংগীত) স্কুল দিয়েছিলেন, সেখানকার ছেলেমেয়েদের গানটান শিখানোর জন্য। তো সেখানে জানেন তো, বাগমারা একটা জঙ্গি, কী বলা যায়, আক্রান্ত একটা এলাকা। তো সেখানেও কিছু লোকজন এটার জন্য উনার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন বলে আমরা জানতে পেরেছি এ পর্যন্ত। যাই হোক, আমরা সব দিকই খতিয়ে দেখছি। তবে প্রত্যক্ষদর্শী কেউ থাকলে হয়তো ভয়ে বা ঝামেলার জন্য হয়তো বলতেছে না। তবে আমরা পাব ইনশাল্লাহ। যে সময়ে ঘটনা, আশা করি প্রত্যক্ষদর্শী দু-একজন পাওয়া গেলে আমরা ঘটনাটা কীভাবে ঘটেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলে আমাদের জন্য মূল অপরাধীদের ধরা সহজ হবে। ধন্যবাদ।’

আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর শালবাগান এলাকায় পেছন থেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে শালবাগান মোড়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে উঠতেন। অন্যান্য দিনের মতো আজ সকালে নাস্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশে তিনি বাসা থেকে বের হন। মাত্র ১০০ গজ দূরে শালবাগান মোড়ের গলির মধ্যে দুর্বৃত্তরা তাঁকে পেছন থেকে কুপিয়ে হত্যা করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। তাঁর ঘাড়ের বাম পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে শিক্ষক হত্যার খবর পেয়ে রাবির শিক্ষার্থীরা রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের রাস্তা থেকে তুলে দিলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতর বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাবির সিনেট ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এনটিভি



মন্তব্য চালু নেই