নৌকার হাল ধরতে মরিয়া শিবির নেতা সোহেল
ঈদগাঁও সদরে সাবেক শিবির ক্যাডার সোহেল জাহানের রাতারাতি আওয়ামী লীগ নেতা বনে যাওয়া ও তাকে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের দৌড়ঝাপের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সোহেলকে ছাত্রলীগ নেতা হত্যাকারী দাবি করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বরাবরে অভিযোগ করেছেন।
তাদের মতে, নব্য আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল জাহান শুধু যে শিবির ক্যাডার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা বনেছেন তা নয়, তিনি ও তার বাবার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতা এরশাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে এরশাদ হত্যা মামলায় তাদের বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে চার্জসিটও দিয়েছিল পুলিশ। এমনকি চাঞ্চল্যকর জেলা যুবলীগ নেতা বাবর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও তার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
দলীয় নেতা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগের পাশাপাশি সোহেল জাহানের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান থাকাকালীন ভুয়া মাস্টার রোল জমা দিয়ে কর্মসৃজন প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত, গত সংসদ নির্বাচনসহ যে কোনো নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তার মরহুম বাবাও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সোহেল জাহান নিজেও শিবিরের রাজনীতি করতেন।
তার হাতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন। অথচ আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাকে নৌকা প্রতীকের দলীয় প্রার্থী করতে তৎপর রয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক। নৌকা প্রতীক পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাখার জন্য বিতর্কিত সোহেল জাহানকে ইতোপূর্বে ঈদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও করা হয়েছে বলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন।
এদিকে যেকোনো মূল্যে নৌকা প্রতীক হাতে পেতে দৌড়ঝাপ অব্যাহত রেখেছেন সাবেক শিবির ক্যাডার ও নব্য আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল জাহান। সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদককে মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ করে বিশাল অঙ্কের বাজেট নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ঈদগাঁও ইউনিয়ন আ.লীগের প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
তাদের মতে, সাবেক শিবির ক্যাডার সোহেল জাহান ও তার মরহুম বাবা শাহাজাহান চৌধুরী ছাত্রলীগ নেতা এরশাদ হত্যা মামলার চার্জসিটভূক্ত আসামি ছিলেন। জেলা যুবলীগ নেতা বাবর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়ও সোহেল জাহান চৌধুরীর পরোক্ষ ইন্ধন রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অর্থের বিনিময়ে সোহেলকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করছেন আ.লীগের জনবিচ্ছিন্ন কয়েকজন নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আ.লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী জানান, ধুর্ত এবং সুযোগসন্ধানী সোহেল এলাকায় আওয়ামী লীগ বিরোধী হিসাবে পরিচিত।
তারা আরও জানান, আদর্শচ্যুত ও নীতিহীন সোহেল জাহান বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে আ.লীগ দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকে আ.লীগ ও আ.লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করতেন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হুমায়ুন কবির হিমু জানান, সোহেল জাহান অতীতে কখনও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের জন্য তার দলে আসা। তিনি একজন বির্তকিত ব্যক্তি। তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে। তাছাড়া দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিষয়টি কোনোভাবে মেনে নেবেনা। তিনি দলের নিবেদিত, সৎ ও পরিচ্ছন্ন নেতাদের দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নিকট জোর দাবি জানান।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, এ অভিযোগ আমরা শুনেছি। যাচাই বাছাই করে দেখছি।
কিছু কিছু সত্যতাও পেয়েছেন জানিয়ে এ দুই নেতা বলেন, সংগঠনের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত জেলা আওয়ামী লীগ নেবে না।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য সোহেল জাহানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।জাগো নিউজ।
মন্তব্য চালু নেই