৫ টি উপায়ে চিনুন “কন্ট্রোল ফ্রিক” মানুষকে
“কন্ট্রোল ফ্রিক” টার্মটি কোন ক্লিনিক্যাল টার্ম নয়, তবে এটি অর্থবহ। কারণ শব্দটির মাঝেই এর অর্থ বোঝা যায় এবং এধরণের মানুষদের নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়ি আমরা প্রায়ই। যেসব মানুষের মাঝে অন্যদের আকর্ষণ করার মানসিকতা থাকে তারা অনেক সময় অতিরিক্ত মাত্রায় যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার আগ্রহ একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার আর তাকে আপনি “ফ্রিক” বলতেই পারেন।
অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণপ্রিয় মানুষদের অনেক সমস্যা থাকে। যেমন, তারা প্রায়ই ভীষণ আবেগী হয়, দ্রুত রেগে যায়, স্থান-কাল-পাত্র না বুঝে আচরণ করে বসে, সন্দেহপ্রবণ হয়। এদের সমস্যা হল “মুড ডিসঅর্ডার”। আসলে তারা অনেক বেশী সন্দেহে ভোগে নিজের যোগ্যতা নিয়ে। তাদের মাঝে ভীতি কাজ করে যে হয়ত তাদের সমস্যাগুলো জেনে যাবে আর কেউ। তাই নিজেরাই নানান ভাবে নিজেদের তুলে ধরে, সবার মাঝে একটি বিজ্ঞ ভাব মূর্তি তৈরি করতে চায়।
ভুল শুধরে দেওয়া
নিয়ন্ত্রণপ্রিয় মানুষেরা ঘুরছে আপনার আশেপাশেই। কখনো কি খেয়াল করেছেন যে, আপনি হয়ত একটা সাধারণ আলাপ করছেন আপনার সহকর্মীর সাথে আর পাশ থেকে কেউ অপ্রাসঙ্গিকভাবে আপনার উচ্চারণ শুধরে দিতে চাইছে! আপনি হয়ত নিতান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটা টেক্সট করেছেন, কিন্তু যাকে করেছেন সে মূল বিষয়টি নিয়ে কথা না বলে, আপনার বানান বা গ্রামারের ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে? এধরণের মানুষ সবসময়ই অন্যের ভুল ধরতে থাকে এবং বোঝাতে চায় যে সে খুবই জ্ঞানী বা সঠিক।
সবসময় তর্কে জিততে চায়
এধরণের মানুষের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা খুবই কঠিন। এরা সবসময়ই তর্কে জিততে চায়। হয়ত খুব ছোট কোন বিষয়, তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। কিন্তু সামনের মানুষটি অযথাই সেটা নিয়ে তর্ক জুড়ে দিল এবং আপনি ভুল করেছেন সেটা না স্বীকার করা পর্যন্ত তর্ক চালিয়ে যেতে থাকলো। এই ধরনের মানুষেরা অনুদের সামনে নিজেদের একটি ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চায়, বলতে চায় তারা অনেক বাস্তববাদী, যুক্তিবাদী এবং বুদ্ধিমান। কিন্তু তারা যে ক্রমশই অন্যের বিরক্তির কারণ হচ্ছে সেটা খেয়াল করে না। ভীড়ের মধ্যমণি নয়, এভাবে তারা হারিয়ে যেতে থাকে ভীড় থেকে, হয়ে যায় একা। কারণ এ ধরনের মানুষকে এক সময় সবাই এড়িয়ে চলতে শুরু করে।
নিজের ভুল কখনোই স্বীকার করে না
নিয়ন্ত্রণপ্রিয় এধরণের মানুষেরা কিন্তু কখনোই নিজের ভুল স্বীকার করে না। বিষয়টি খুবই বিরক্তিকর। আপনার বন্ধু, সহকর্মী বা প্রিয় সঙ্গীটি যখন সব ঘটনার দোষ আপনার উপর চাপায় এবং নিজে কোন ভুল স্বীকার করে না তখন আপনার উপর একটি মানসিক চাপ তৈরি হয়। কাজের ক্ষেত্রে এজন্য বড় কোন ঝামেলাও হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আপনার ভুল না থাকা স্বত্ত্বেও অপমানিত হতে পারেন আপনি। অফিস নাহয় চাকরি বদলে সামলানো গেল, কিন্তু আপনার প্রিয়জন যদি এমন হয়? সম্পর্কটি রূপ নেয় এবিউসিভ সম্পর্কে।
বিচার করা বা সমালোচনা করা
এমন কিছু অদ্ভুত মানুষের দেখা পাবেন আপনি যারা আপনাকে কাঁটা চামচ কিভাবে ধরতে হয় সেটাও শিখিয়ে দিতে চাইবে। অফিসে বা বন্ধুমহলে দেখা যায় এমন একজন না একজনের সাথে পরিচয় আপনার হবেই, যারা নিজেকে অতিমাত্রায় অভিজাত মনে করেন। এই ধরনের স্বঘোষিত বুদ্ধিমান ব্যাক্তিদের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর একেবারে ঠোঁটের গোড়ায় তৈরি থাকে।
ড্রাইভিং-এ ক্রোধ প্রকাশ
আবেগের অদ্ভুত সব প্রকাশ ঘটে এই মানুষদের দ্বারা। দেখা যায়, ড্রাইভিং এর সময় এদের হতাশা বেড়ে যায়। গাড়ি চালানোতেও যে তারা ভীষণ দক্ষ সেটি প্রকাশ করতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন তারা। ভীষণ গতিতে গাড়ি চালান এবং কোন কিছু সামনে আসলে ক্ষেপে যান। যাদের গাড়ি নেই তাদের মাঝে এই হতাশা প্রকাশ পায় অন্যভাবে। তারা ড্রাভারদের ভুল ধরিয়ে দিতে থাকেন। অথবা রাস্তা পারাপারের সময় অযথাই ক্ষেপে যান ট্রাফিক পুলিশের উপর। অধৈর্য্য প্রকাশ পায় তাদের প্রতিটি আচরণে।
আমাদের চারপাশে এমন কন্ট্রোল ফ্রিক মানুষ আছে অনেক। কারও না কারও সাথে নিশ্চয়ই মিলে গেছে এই লক্ষণগুলো, তাই না? কিন্তু সেই মানুষটি কে? সে যদি আপনার বস হয়, বা সহকর্মী হয়, চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতে। যদি তাঁর সাথে কোন সম্পর্কে জড়াতে চান, তবে বুদ্ধিমানের কাজ হবে এখনি পিছিয়ে আসা। কারণ, তাঁর নিয়ন্ত্রণের মাঝে আপনি শান্তিমত শ্বাস নিতে পারবেন না। আর এধরণের মানুষকে বদলানো আপনার আমার কাজ নয়। তাদের প্রয়োজন একজন মনোরোগ বিষেষজ্ঞ।
মন্তব্য চালু নেই