দিতির জন্য মাজারে গিয়ে দোয়া করেছিলেন গুলজার
সকাল থেকেই নীল আকাশের ঘুমুটো মলিন চেহারা। এফডিসির পরিবেশটাও বেশ ভারি। যেন বিষাদের ছায়া বিরাজ করছে। আর সে বিষাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটল একটু পরেই, যখন আলোচনা সদ্য প্রয়াত দিতিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ শুরু হলো।
এর মাঝেই এক পলশা বৃষ্টি। ভিজিয়ে গেল এফডিসির পুরো আঙিনা। গত ২০ মার্চ মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে সবাইকে কাঁদিয়ে ওপারে পাড়ি জমানো দিতির স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে বৃষ্টি যেনো নতুন করে বিষাদের ছোঁয়া দিল। এফডিসিতে দিতিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার দিতিকে নিয়ে কথা বলছেন। অতীত স্মৃতিচারণ করছেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘১৯৯৬-৯৭ সালের ঘটনা এটি-একবার সোহেল চৌধুরীর সাথে দিতির এক ধরনের ছোটখাট মনো-মালিন্য হলো। এরপর থেকে দিতি সোহেল চৌধুরীর সাথে কথাবার্তা একেবারেই বন্ধ করে দিল। এরপর আমি দুজন’কে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করলাম। যাতে বিষয়টি ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু না ঠিক হয় নাই। এরপর কয়েকদিন পরেই আমার একটি ছবি মুক্তি পেল।’
‘আমি কি যেন একটি কাজে সিলেট গেলাম। তখন আমি সিলেট শাহজালাল (রহ:) মাজারে গেলাম। আমি সেখানে গিয়ে আমি দিতির জন্য দোয়া করলাম। এরপর আমি ঢাকায় এসে দিতির বাসায় গেলাম। তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম-দিতি তোর কি মন ভাল হইছে? আমি তো মাজারে গিয়ে তোর জন্য দোয়া করেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে সিটি ঠিক হয়ে যায়। তোমরা যেন সুখে সংসার করতে পার। তখন দিতি বললো- আপনি তো এটা চাইবেন, আপনি তো আমার ভাই। অন্যরা তো চাইতো আমদের মধ্যে আরও খারাপ সম্পর্ক তৈরি হোক। তখন আমি ভাবছিলাম দিতির তো একথা বলার কথা নয়। দিতি উল্টো কথা বলবে।’
দিতিকে খুব কাছ থেকে দেখা এই গুণীজন বলেন, ‘এরপর আমি দেখলাম না-ঠিকই বুঝলো। দিতির অভিমান কমে গেল। আবার ঠিকই তারা সংসার করা শুরু করলো। আর সোহেল চৌধুরী(দিতির স্বামী) কোন কিছু করলে আমার উপর চাপিয়ে দিত। আর সোহেল যদি দিতিকে আমার কথা বলত। তাহলে দিতি আর কিছু বলত না।’
‘কারণ দিতি জানে গুলজার ভাই সোহেলকে যেখানে নিয়ে যাক না কেন? খারাপ কোন জায়গায় নিয়ে যাবে না। অনেক সময় দেখা যেত আমি সোহেলের সাথে থাকতাম না। কিন্তু আমার কথা বলে দিত। আমার কথা বললে দিতি আর কোন কথা বলত না।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, হাসান ইমাম, নায়ক আলমগীর, মুশফিকুর রহমান গুলজার, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, খোরশেদ আলম খসরু, দিতির পুত্র দীপ্ত।
১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশিয় চলচ্চিত্রে দিতির সম্পৃক্ততা ঘটে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু ছবিটি শেষ পর্যন্ত আর মুক্তি পায় নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘আমিই ওস্তাদ’।
ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আজমল হুদা মিঠু। এরপর দিতি প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রী’ ছবিতে দিতি আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতেই অভিনয় করে দিতি প্রথম বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
দিতি অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘দুই জীবন’, ‘উছিলা’, ‘লেডি ইন্সপেক্টর’, ‘খুনের বদলা’, ‘আজকের হাঙ্গামা’, ‘স্নেহের প্রতিদান’, ‘শেষ উপহার’, ‘অপরাধী’, ‘কালিয়া’, ‘কাল সকালে’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার শেষ মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘সুইটহার্ট’।
মন্তব্য চালু নেই