যে মেশিনে বদলে যেতে পারে বইমেলার চিত্র!

বইমেলার আলাদা একটা ঘ্রাণ আছে। প্রতি বছর মেলা চত্বরে মানুষ যে শুধু বই কিনতেই যায়, তা নয়। মেলায় আসা নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেয়াও একটা উদ্দেশ্য। নতুন কাগজের গন্ধের সঙ্গে প্রেসের রঙের ঘ্রান মিশে এক মাতাল সুবাস মেলার বাতাসে ছড়িয়ে দেয় অন্যরকম রেনু।

কিন্তু মানুষ এখন মেলার ঘ্রাণ নেয়ার চেয়ে স্মার্টফোনের পর্দায় চোখ রাখতে বেশি পছন্দ করে। আর যদিওবা মুদ্রিত বইয়ের আবেগ থেকেও যায়, তবে তাতে প্রযুক্তির ছোঁয়া ঠেকানোর সাধ্য আছে কার? তবে ব্যাপারটায় হয়তো আসতে পারে আরও ভিন্নমাত্রা।

হুম, এতো দিন কফি শপে গিয়ে এসপ্রেশো কফি অর্ডার করেছেন। আর মুহূর্তেই পেয়ে গেছেন গরম গরম ধোঁয়া ওঠা কফি। এখন সময় এসেছে গরম কফির মতো গরম বই অর্ডার করার।

ভাবুন তো ব্যাপারটা কেমন হয়, যদি আপনি একটি ব্র্যান্ড নিউ বই ও এক মগ কফি একই সঙ্গে অর্ডার করেন এবং দুটো জিনিসই যদি একই সঙ্গে আপনার কাছে আসে একেবারে গরম গরম! কফি না হয় গরম আসবে। কিন্তু বই? হ্যাঁ, এখন বইও আসবে গরম। তাও একেবারে আপনার অর্ডারের সঙ্গে সঙ্গেই তা তৈরি হবে!

উন্নত বিশ্বে এখন খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ সুবিধার মেশিন। যার নাম ‘এসপ্রেশো বুক মেশিন’ বা ইবিএম। এটি এমন এক মেশিন, যা মাত্র কয়েক মিনিটে আপনার পছন্দের বই প্রিন্ট করে দেয়। আপনার চাহিদা মাফিক বই পেপার বুকে প্রিন্ট করে দেয় মাত্র কয়েক মিনিটে, একেবারে মলাট সহ। এই মেশিনে দুটো প্রিন্টার থাকে। একটির কাজ, বইয়ের পাতা প্রিন্ট করা। আরেকটি ব্যবহৃত হয় বইয়ের মলাট প্রিন্টের কাজে। ১০০ পাতার বই প্রিন্ট করতে সময় নেয় মাত্র ৮ মিনিট। আর এই মেশিন সর্বোচ্চ ৮০০ পাতার বই মুদ্রণ করতে পারে। যার জন্যে সময় প্রয়োজন মাত্র ১২ মিনিট।

এই মেশিনে শুধুমাত্র পছন্দের বইয়ের পাণ্ডুলিপি ও প্রচ্ছদ আগে থেকে আপলোড করতে হয়। এরপর একটি ক্লিকে বের হয়ে আসে গরম গরম বই। যা কিনা এক মগ গরম কফি তৈরির সময়ের প্রায় কাছাকাছি সময়েই তৈরি হয়ে যাবে।

আর এ প্রযুক্তি যদি আমাদের দেশেও চলে আসে তবে হয়তো আমাদের মেলার স্টলগুলোতে আর বইয়ের বাণ্ডিল দেখা যাবে না। দেখা যাবে একটিমাত্র মেশিন। স্টলে থাকবে শুধু কয়েকটি বই আর ক্যাটালগ। পাঠকরা সেই ক্যাটালগ দেখে অর্ডার করবেন আর মুহূর্তেই সেই বই ছেপে দেয়া হবে। হতে পারে বই মেলার বইয়ের স্টলে এরপর থেকে এসপ্রেশো কফিও রাখা হবে। কফির মগে চুমুক দিতে দিতে আপনি আপনার পছন্দের বইয়ের মুদ্রণের জন্যে অপেক্ষা করবেন।

আপনার গরম বই যখন প্রস্তুত হতে থাকবে আপনার কানে বাজবে তার মুদ্রণের আওয়াজ। নাকে এসে ধাক্কা দেবে তার মুদ্রণের ঘ্রাণ! হতে পারে আপনার কফির ঘ্রাণকেও টেক্কা দেবে! এমন অনেক কিছুই হতে পারে। হবে কী হবে না তা সময়ই বলে দেবে। তবে ডিজিটাল যুগে এমন অনেক কিছুই সম্ভব। শুধু অপেক্ষা আমরা কবে পাব।

হয়তো নিউমার্কেট বা শাহবাগের অভিজাত বইয়ের দোকানে দেখা যাবেনা আর বইয়ের স্তূপ। সেই স্তুপের বদলে মাত্র ৩২ বর্গফুট জায়গায় স্থান করে নেবে এই ইবিএম। আর আপনাকে কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রেখে আপনার চাহিদা মাফিক বই ছেপে দেবে। তখন কোনো এক চিত্র প্রদর্শনীতে গিয়ে হয়তো খুঁজবেন কেমন ছিল এককালের লাইব্রেরি? কিংবা খুঁজবেন ভিডিও ফুটেজ এখনকার বই মেলার!



মন্তব্য চালু নেই