ইসলামে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয়
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবন দেশগুলোর মধ্যে একটি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমবেশি কাজ করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাধারণত আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার জন্য সতর্কতামূলক বার্তা। আল্লাহ তাআলা কখনো কখনো তাঁর বিধানের সীমা লঙ্ঘনের কারণে মানুষের প্রতি দুর্যোগ চাপিয়ে দেন। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভয়ভীতির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষের ঈমানের পরীক্ষা নেন। এ ব্যাপারে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে।
আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে, সম্পদ, প্রাণ ও ফসলের হানি করে পরীক্ষা করব। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন, যাদের ওপর বিপদ আসলে তারা বলে, আমরা আল্লাহর জন্যই, আমরা তার দিকেই ফিরে যাব। তাদের ওপর তাদের রবের ক্ষমা ও রহমত অবতীর্ণ হয়। আর তারাই সঠিক পথপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৫৫-১৫৭)
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুমিনের জন্য আল্লাহর পরীক্ষা। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে তাঁর সাহায্য কামনা করা এবং ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি তার ইবাদাত-বন্দেগি করে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা থেকে মুক্তি লাভের প্রার্থনা করা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল। লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি নিজেও উম্মতের ওপর দুর্যোগের ব্যাপারে শঙ্কিত ছিলেন। তিনি দোয়া করেছেন যেন তার উম্মতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে এক সঙ্গে ধ্বংস না করা হয়। কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করতেন এবং অন্যদেরকেও তা করার নির্দেশ দিতেন। ঝড়-তুফান শুরু হলে তিনি মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ আমল দ্বারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুহূর্তে আমাদের করণীয় কী তা জানতে পারি।
হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনে, ‘মুমিনের বিষয়টি সত্যিই আশ্চর্যের! তার প্রতিটি কাজই কল্যাণকর। যদি তারা (মুমিন বান্দা) সুখে থাকে তবে শুকরিয়া আদায় করে, যার ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর সে বিপদে পড়লে ধৈর্য ধরে, তাও তার জন্য মঙ্গলজনক হয়।’ (মুসলিম)
মুমিন বান্দার উচিত, সব সময় আল্লাহর পথে অগ্রসর হওয়া, আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা, তাঁর নির্দেশিত বিধি-বিধান পালন করা। বিশেষ করে তাঁর নিষেধাজ্ঞাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করা। তবেই আল্লাহ তাআলা পার্থিব জীবনের কঠিন বিপদাপদ ও দুর্যোগ থেকে মুক্তি দিবেন এবং মৃত্যুর পরে উত্তম প্রতিদান দিবেন। আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য পথ (কল্যাণের ফয়সালা) তৈরি করে দেন। (সুরা তালাক : আয়াত ২)
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে তার করুণা চাও, কেননা আল্লাহ তার কাছে করুনা চাওয়াকে ভালোবাসেন। আর (বিপদাপদে) অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো তাঁর কাছে দুঃখ কষ্ট লাঘবের ধৈর্য ধারণ করা।’ (তিরমিজি)
কুরআনে আরো এসেছে, ‘গুরু শাস্তির পূর্বে আমি অবশ্যই তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।’ (সুরা সাজদা : ২১) এ আয়াতের তাফসিরে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘ছোট শাস্তি হলো দুনিয়ার বিপদাপদ, রোগব্যাধি, মৃত্যু এবং তাদের ওপর নেমে আসা অন্যান্য মুসিবত, যা দিয়ে আল্লাহ তার বান্দাকে পরীক্ষা করেন, যাতে বান্দা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।’
পরিশেষে…
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যেহেতু মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে, তাই তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসাও একটি মহৎ কাজ। যে কোনো দুর্যোগের মুহূর্তে প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী সাহায্যের হাত প্রসারিত করার পাশাপাশি ভয়াবহ দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় তাদের প্রতিপালকের প্রতি তাওবার মাধ্যমে ফিরে আসা। তাঁর নিকট আশ্রয় চাওয়া। কেননা যারাই বিপদাপদের মুহূর্তে তার কাছে আশ্রয় চেয়েছেন, তিনি তাকে আশ্রয় দিয়েছেন, তার দুঃখ-দুর্দশা দূর করেছেন।
সুতরাং দুর্যোগ মোকাবেলা নয়, বিপদ ও সংকটকালীন মুহূর্তে আল্লাহর উপর বিপদমুক্তির পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখা। যার নির্দেশনা রয়েছে কুরআন এবং হাদিসে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে দুর্যোগ মোকাবেলায় আল্লাহর নিকট খাঁটি তাওবা করার এবং তাঁর আশ্রয় লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
মন্তব্য চালু নেই