আইরিশ বধের লক্ষ্যে নামছে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক জায়ান্টদের বধ করে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আর আইসিসির মূল দেশগুলোর পর সহযোগী দেশগুলোর মাঝে সবচেয়ে ভয়ংকর ও কঠিন প্রতিপক্ষ মানা হয় আয়ারল্যান্ডকে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি এ দুই দেশ। আজ শুক্রবার রাত আটটায় হাই ভোল্টেজ এই ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড।

প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮ রানের জয়। কষ্টকর একটি জয় হলেও তা ছিল স্বস্তির। এশিয়া কাপে টানা খেলার পরের দিনই সম্পূর্ণ ভিন্ন কন্ডিশনে আসে টাইগাররা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চার হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাত্র এক সেশন অনুশীলন করেই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। তাই প্রতিপক্ষের পাশাপাশি সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করাই ছিল মাশরাফিদের বড় চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই উতরেছে তারা। তাই আইরিশদের সঙ্গে মোকাবেলার আগে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসী থাকবেন টাইগাররা।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রেকর্ড চোখে পরার মত। ওয়ানডেতে নিজেদের জায়ান্ট হিসাবে গড়েছেন আগেই। এবার টি-টোয়েন্টিতেও দারুণ সফলতা পাচ্ছে দলটি। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার মত দলগুলোকে হারিয়ে কিছুদিন আগেই এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি র্যাংককিংয়ে শীর্ষে থাকা ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে হারলেও দারুণ লড়াই করে জিতেছেন বিশ্ব মিডিয়ার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। তাই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে জয় কঠিন হওয়ার কথা নয় মাশরাফিদের।

অপরদিকে অঘটন ঘটন পটীয়সী আয়ারল্যান্ড এবারও নিজেদের প্রথম ম্যাচে অঘটন ঘটিয়েছে। তবে এবার কোন জায়ান্টদের ‘কিল’ করে নয়। নিজেরাই ‘কিল’ হয়েছেন প্রথমবার খেলতে আসা ওমানের কাছে। এবার কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও অতীত বলে আইসিসির টুর্নামেন্টে বরাবরই একটু বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠেন তারা। তাই দুঃস্বপ্নের মত এ হারকে পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে বদ্ধ পরিকর আইরিশরা।

এ দুই দলের মুখোমুখি মোকাবেলার পরিসংখ্যান অবশ্য ভিন্নধর্মী। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে তিনটিতেই জয়ের বিপক্ষে টাইগারদের হার একটি ম্যাচ। টি-টোয়েন্টির মত ওয়ানডেতেও দারুণ এগিয়ে বাংলাদেশ। এ সংস্করণে দুই দল মোকাবেলা করেছে মোট সাত বার। এর মধ্যে পাঁচটিতেই জয় পেয়েছে টাইগাররা। হেরেছে দুই বার।

তবে একদিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এই দুই দল নিরেপেক্ষ ভেন্যুতে খেলেছে দুইটি ম্যাচ। একটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি। এই দুইবারই জয় পেয়েছে আইরিশরা। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিজটাউনে প্রথমবার আইসিসির এ সহযোগী দেশটির মোকাবেলা করে বাংলাদেশ। সেবার ৭৪ রানে হারে টাইগাররা। এরপর ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৬ উইকেটের ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। এই দুই মোকাবেলা ছাড়া আরও একবার আইসিসির ইভেন্টে খেলেছে দলদুটি। ২০১১ বিশ্বকাপে ঢাকায় দারুণ প্রতিযোগিতা শেষে একমাত্র জয়টি আসে ২৭ রানের ব্যবধানে।

তাই এই পরিসংখ্যানে কিছুটা অস্বস্তিতে থাকতেই পারেন মাশরাফিরা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তাসকিন আহমেদের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে দুশ্চিন্তা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে আইসিসির দুই অনফিল্ড আম্পায়ার এস রবি এবং রড টাকার তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। শুধু তাসকিনই নয়, তার সঙ্গে দলের একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার আরাফাত সানির অ্যাকশনেও সন্দেহ প্রকাশ করেছে তারা। আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ দুই বোলারকে চেন্নাইতে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।

কালকের ম্যাচে খেলছেন তাসকিন ও আরাফাত সানি। তবে হঠাৎ এমন সংবাদ পাওয়ায় কিছুটা হলেও মানসিক চাপে থাকবেন তারা। যদিও দলের কোচ হাতুরুসিংহে জানিয়েছেন এ নিয়ে ভাবছেন না তারা। পাশাপাশি এ ম্যাচেও টাইগাররা পাচ্ছে না তাদের সেরা পেস তারকা মুস্তাফিজুর রহমানকে। তাই বোলিং লাইনআপ নিয়ে আলাদা দুশ্চিন্তার ছাপ স্বাভাবিকভাবেই পড়ছে কোচ-অধিনায়কের কপালে।

বোলিং নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও ধীরে ধীরে ফর্মে ফিরতে শুরু করেছে ব্যাটসম্যানরা। বিপিএল ও পিএসএল থেকেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচেই নামের প্রতি সুবিচার করে তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশত। আর ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির আহমেদ। ফর্মে ফেরা শুরু করেছেন সৌম্য সরকার। এখন শুধু ফর্মে ফেরার অপেক্ষায় সাকিব-মুশফিকের।



মন্তব্য চালু নেই