ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ
‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’র দায়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে’র রাজধানী শিলংয়ে অবস্থানরত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হচ্ছে।
দলের জন্য অপরিসীম ত্যাগ, অবর্ণনীয়-অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার এবং ঝুঁকি নিয়ে সংগঠনের দায়িত্ব পালনের পুরস্কার হিসেবে তাকে এ পদ দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ও আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলের মহা কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে কাঙ্ক্ষিত পদের জন্য বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা শীর্ষ নেতাদের কাছে ধর্ণা দিলেও সালাহ উদ্দিন আহমেদের জন্য তার পরিবার বা অনুসারীদের কেউ কোনো পর্যায়ে দেন-দরবার করছেন না।
বরং পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন আপতত ঝামেলা চুকিয়ে ‘সুস্থ’ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি।
কিন্তু দলের নিবেদিত এই কর্মীর অবদানের কথা বিস্মৃত হননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শিলংয়ে অবস্থানরত সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে খালেদা জিয়া নিজেই তার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপও করেছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, কাউন্সিল সামনে রেখে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত পদের জন্য দেন-দরবার করছেন। শেষ পর্যন্ত তাদের সবাইকে পছন্দের পদ দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিষয়টি যেহেতু দলের চেয়ারপারসন নিজেই তুলেছেন, সেহেতু এটি মিস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরাও আশা করছি, আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঝামেলা মিট-মাট করে খুব শিগগিরই শিলং থেকে দেশে ফিরবেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ এবং দলাপির্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
সূত্রমতে, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা না থাকায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সব সিদ্ধান্তই মাথা পেতে নেন বিএনপি নেতারা। কোনো সিদ্ধান্ত দলের স্বার্থ বিরোধী হলেও প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস দেখান না কেউ। তবে আড়ালে-আবডালে ঠিকই সমালোচনার ঝড় তোলেন তারা।
কিন্তু সালাহ উদ্দিন আহমেদের মত তরুণ নেতাকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছেন। গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিককালের বৈঠকগুলোতে খালেদা জিয়ার এ সিদ্ধান্তে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন শীর্ষ নেতারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যোগ্যতা, সততা, দলের প্রতি আনুগত্য ও বিগত আন্দোলন-সংগ্রামের ভূমিকার ওপরই পদগুলো বণ্টন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সে বিবেচনায় সালাহ উদ্দিন আহমেদ বড় পদ পেতেই পারেন। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তের খবর এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই।
বর্তমান সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খালেদা জিয়ার ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে গত বছর ১০ মার্চ আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় উত্তরার একটি বাসা থেকে নিখোঁজ হন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
এর দুই মাস ২ দিন পর গত বছর ১২ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে সন্ধান মেলে তার।
কয়েক দফা বিভিন্ন হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা শেষে শিলংয়ের আদালতে তোলা হয় তাকে। পরে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জামিনে মুক্ত হন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
তবে জামিনে মুক্তি পেলেও পুলিশ নজরদারিতে শিলংয়েই অবস্থান করতে হচ্ছে তাকে। মামলা নিশ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালতের নির্দেশ ছাড়া শিলং ত্যাগ করতে পারবে না তিনি।
সম্প্রতি সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার চিকিৎসকরা।
বিএনপি নেতাদের প্রত্যাশা, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার সালাহ উদ্দিন আহমেদের মানবিক দিকটা বিবেচনায় নেবেন শিলংয়ের আদালত এবং তাকে বেকসুর খালাস দিয়ে দেশে ফেরার সুযোগ করে দেবেন। বাংলানিউজ
মন্তব্য চালু নেই