কী অপরাধে প্যানেল শিক্ষক মার্জিয়াদের এই শাস্তি ?
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার প্যানেল শিক্ষক মার্জিয়া নুহা। বয়স ত্রিশের বেশি এবং ৮ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তানের জননী। স্বামী প্রবাসী তবে বর্তমানে অসুস্থ থাকায়, তার আয়ের উৎস নেই বললেই চলে। এদিকে শুধু স্বামীর পাঠানো অর্থের ওপরই মার্জিয়া ও তার কন্যা সন্তানের ভরন-পোষণ নির্ভরশীল।
বর্তমানে স্বামী অসুস্থ থাকায় গত ২-৩ মাস টাকা পাঠাতে পারছে না। মার্জিয়া স্বামীকে টাকা পাঠাতে অনুরোধ করলে, তার স্বামী আজ, কাল বা পরশু পাঠাবো বলে আশস্ত করলেও কোন টাকাই পাঠাতে পারছে না।
তাই মার্জিয়া ও তার কন্যা সন্তান অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। আর স্বামীর পাঠানো টাকার আশায় প্রতিক্ষা করছে। কিন্তু সেই প্রতিক্ষার আর শেষ হচ্ছে না।
তাই মার্জিয়া কোন উপায়ন্তর না দেখে, ঢাকা গিয়ে প্রাইভেট কোন জব করবে বলে অনেকবার সিদ্ধান্ত নিলেও, তা করতে সাহস পাচ্ছে না। কারন তিনি এতোদিন গ্রামেই জীবন যাপন করেছেন। একজন মেয়ে মানুষ হিসাবে একাকি ঢাকার মতো এত বড় শহরে জব করতে একদিকে যেমন ভয় পাচ্ছেন অন্যদিকে ভাবছেন তার জবটাই বা দিবে কে? ঢাকাতে তো তার পরিচিত কেউ নেই।
এমতাবস্থায় চরম হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে তার।
সরকারী চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পার হওয়ায়, আর কোন সরকারি চাকুরিতে আবেদনও করতে পারছেন না।
তার ইচ্ছা ছিল শিক্ষকতার মতো মহান কোন পেশায়, নিজেকে নিয়োজিত করবেন।তাই এখন প্যানেলের নিয়োগই তার শেষ ভরসা।
আশায় আছেন কবে প্যানেলের নিয়োগটা হবে, সেদিন তিনি এই দুঃখ-দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
কিন্তু একের পর এক হাইকোর্টের রায়, আপিলের রায়, রিভিউ এর রায় পক্ষে পাওয়ার পরও, সেই কাংখিত নিয়োগের দেখা মিলছে না।
তাই এখন তিনি জীবন নিয়ে কোন স্বপ্নই আর দেখেন না এবং বেঁচে থাকতেও আর ইচ্ছা করেনা তার।
নেহায়েত সন্তানের মুখের পানে চেয়েই আজও বেঁচে আছেন তিনি।
বর্তমানে এই নিয়োগটার জন্য এক একটা দিন অপেক্ষা করা, তার কাছে এক একটা বছরের মতো মনে হয়।
কবে শেষ হবে তার এই প্রতিক্ষার? কর্তৃপক্ষ কি কখনো উপলব্ধি করতে পারবেন তার এই কষ্ট?
এই মার্জিয়া নুহার মতো বা তার চেয়েও অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন হাজারো প্যানেল শিক্ষক-শিক্ষিকা।
জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন, কি অপরাধ এই প্যানেল শিক্ষকদের? এদেরকে কোন অপরাধের শাস্তি দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ?
লেখক: জিয়াউল হক, বরগুনা
মন্তব্য চালু নেই