ইউপি নির্বাচনঃ দ্বিতীয় দফায় ৩০ ইউপির সুপারিশ পায়নি বিএনপি!

চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য প্রার্থীর সুপারিশ না পাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংখ্যা প্রথম দফাকে ছাপিয়ে গেছে দ্বিতীয় দফা। এবার প্রায় ৩০টিতে কোনো প্রার্থীর নামে সুপারিশ পায়নি বিএনপি।

তবে ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় এই দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ৬৫৭টির মধ্যে ৬৪২টিতে প্রার্থী দেয়ার দাবি করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

প্রথম দফার মতো এবারও প্রার্থী সুপারিশ করতে না পারার জন্য সরকারি দলের চাপ ও হুমকি-ধমকিকে দায়ী করা হচ্ছে। একই কারণে প্রথম দফায় ২০টিতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী সুপারিশ করতে পারেনি দলের তৃণমূল।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩১ মার্চ ৬৭২টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে সীমানা জটিলতাসহ নানা কারণে বেশ কয়েকটি ইউপিতে এই দফায় নির্বাচন হচ্ছে না। দ্বিতীয় দফায় রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল আজ বুধবার (২ মার্চ)। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৫ ও ৬ মার্চ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ মার্চ।

একই দিনে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম দফা নির্বাচনে ৭৩৯ ইউপিতে ভোট নেয়া হবে ২২ মার্চ। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে লড়ছেন বিএনপির প্রার্থীরা।

দলের মনোনয়ন দিতে কেন্দ্রীয় বিএনপি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন, উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক এমপি বা এমপি প্রার্থীদের সুপারিশ-সংবলিত তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেয়। পরে তৃণমূলের সুপারিশ করা প্রার্থীকে প্রত্যয়ন দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির দাবি অনুযায়ী, প্রথম দফায় ১১৪টিতে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমাদানে সরকারি দলের বাধার কারণে ৮৩টিতে প্রার্থী দেয়া যায়নি। আর বেশ কিছু ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়পত্র বাতিল হয়ে গেছে। ২০টিতে কোনো প্রার্থী সুপারিশই করতে পারেনি তৃণমূল বিএনপি।

যদিও নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, প্রথম দফায় ৭০ ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী নেই।

প্রথম দফায় খুলনা,বাগেরহাট, মাদারীপর জেলাসহ বেশ কিছু এলাকায় কোনো প্রার্থীর নাম সুপারিশ করতে পারেনি বিএনপি। দ্বিতীয় দফায় মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় প্রার্থী সুপারিশ করা যায়নি বলে জানা গেছে।

প্রথম দফায় নির্বাচনে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ১৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে বিএনপি প্রার্থী দিতে পারেনি। এবার মাদারীপুর সদর উপজেলার ১৫ ইউপির মধ্যে সাতটিতে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করতে পারেনি।

মাদারীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন,“দ্বিতীয় দফায় মাদারীপুর সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টিতে প্রার্থী সুপারিশ করে কেন্দ্র পাঠানো হলেও ৭টিতে দেয়া যায়নি। সরকারি দলের লোকজন আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে। তাই এসব ইউনিয়নে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।”

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেলা গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ৩১ মার্চ নির্বাচন। এ জেলার প্রায় সব ইউনিয়নে প্রার্থী নেই বিএনপির। তবে তফসিল ঘোষণার পর অনেকেই নির্বাচনে আগ্রহী হলেও পরে সরকারি দলের প্রার্থী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হুমকির কারণে তারা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন।

গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মনছুর আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “এখন পর‌্যন্ত দুই কি তিনটি ইউপিতে আমাদের প্রার্থী আছে। কিন্তু শেষ পর‌্যন্ত তাও থাকে কি না সন্দেহ। কারণ শুধু সরকারি দলের লোকজনই নয়, পুলিশও হুমকি দিচ্ছে। যে কারণে প্রথমে আগ্রহ থাকলেও শেষ পর‌্যন্ত ভয়ে কেউ নির্বাচনের মাঠে থাকতে চাচ্ছেন না।”

বিএনপির প্রার্থী তালিকা মনোনয়ন তত্ত্বাবধনের দায়িত্বে থাকা দলটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“এখন পর‌্যন্ত প্রায় ৩০টির মতো ইউনিয়নে প্রার্থীর সুপারিশ পাওয়া যায়নি। এটা বাড়তেও পারে। কারণ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য অনেক জায়গায় চাপের আশঙ্কা করা হচ্ছে।” ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই