বিএনপিতে আসছে নতুন মুখ, বাড়ছে শঙ্কা
আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে আসছে একঝাঁক নতুন মুখ। ব্যবসায়ী, বিতর্কিত, নিষ্ক্রিয়দের ভিড়ে ত্যাগী নেতাদের যথার্থ মূল্যায়ন নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
কাউন্সিলে সুবিধাবাদী, তোষামোদকারী হিসেবে পরিচিত নেতারা নিজ পদেই থাকবেন না কি ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হবে তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
নেতৃত্ব নিয়ে দলের মাঠপর্যায়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। তাদের আশা, কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে। নতুন কমিটিতে ফের বেগম খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন এবং তারেক রহমান কো-চেয়ারম্যান হবেন বলেই তারা আশা করছেন। তারা ভাবছেন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ পাবেন বিচারপতি টিএইচ খান।
মহাসচিব পদে একাধিক নেতার নাম আলোচনায় থাকলেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দিকেই হাইকমান্ডের দৃষ্টি। তবে দলে দুই মহাসচিব থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। মহাসচিব পদে অন্য যারা আলোচনায় আছেন তাদের বেশিরভাগ নেতাই স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছেন।
দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে কয়েকজনকে উপদেষ্টা কমিটিতে নেয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বেগম সরোয়ারি রহমান ও এম শামসুল ইসলাম।
স্থায়ী কমিটির নতুন মুখের আলোচনায় আছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, বেগম সেলিমা রহমান, সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, সাদেক হোসেন খোকা, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, এম ওসমান ফারুক, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও গিয়াস কাদের চৌধুরী।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে নতুন আসতে পারেন মো. শাজাহান, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, অধ্যাপক এম এ মান্নান, রুহুল আলম চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, জয়নুল আবেদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, বরকত উল্লাহ বুলু, আ ন ম এহাসনুল হক মিলন, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, বেগম খালেদা রব্বানী, নূরে আরা সাফা, কাজী আসাদুজ্জামান, কবির মুরাদ, মনিরুল হক চৌধুরী, হাবিুবুল ইসলাম হাবিব, অ্যাডভোকেট নিতাই রায়, অ্যাডভোকেট, অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট তৈমুল আলম খন্দকার ।
নতুন কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে আলোচনায় আছেন অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম।
মহাসচিব, স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ আলোচনায় থাকলেও অনেকে মনে করছেন শেষ পর্যন্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ পাবেন রিজভী।
তৃণমূলের দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন উকিল আব্দুস সাত্তার, মাহামুদুল হাসান, মোশাররফ হোসেন, মুশফিকুর রহমান, এ এস এম আব্দুল হালিম, জহুরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মুহাম্মাদ হায়দার আলী, খন্দকার শহিদুল ইসলাম, সুজা উদ্দিন, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, লুৎফর রহমান খান আজাদ, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, আফজাল এইচ খান, এম এ আব্দুল লতিফ খান, ডা. মো. শাজাহান মিলন, ডা. মুহাম্মদ রেজাউল হক, বেগম রোজী কবির, এস এ কে একরামুজ্জামান, শরীফ শাহ কামাল তাজ, রায়হান আমিন রনি, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, ফজলুর রহমান পটল ও শাকিল ওয়াহেদ সুমন।
তবে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন অলি আহমেদ, জেড এ খান, প্রকৌশলী ফজলুল আজিম, মোফাজ্জল করীম, আশরাফ হোসেন, আলমগীর, আনোয়ার তালুকদার, শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, সৈয়দ শহীদুল হক জামাল, আবু হেনা, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, জহির উদ্দিন স্বপন, নজির হোসেন, এম এইচ খান মঞ্জু, সাখাওয়াত হোসেন বকুল, এস এ সুলতান টিটু, নুরুল ইসলাম মণি, শামীম কায়সার লিঙ্কন, ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও এজিএম সিরাজ, এম এম শাহীন, খলিলুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন দুলু, শহীদুজ্জামান, আখতারুজ্জামান, আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান, সাবেক আব্দুল আব্বাসী, আব্দুল গনি, আব্দুল হাকিম, আতাউর রহমান আঙ্গুর, সুরঞ্জন ঘোষ, মনির হোসেন।
যুগ্ম মহাসচিব পদে আলোচনায় রয়েছেন শিরিন সুলতানা, ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খোন্দকার, নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী, মজিবুর রহমান সরোয়ার, আসাদুল হাবিব দুলু, খায়রুল কবীর খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব ও হাবিব উন নবী খান সোহেল।
সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছেন নাদিম মোস্তফা, নাজিম উদ্দিন আলম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রুহুল কুদ্দুস তালকুদার দুলু, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন, ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন।
কমিটিতে স্থান পেতে পারেন নেতাদের স্ত্রী-পুত্র-আত্মীয়রাও। তাদের মধ্যে রয়েছেন তাহসীনা রুশদি লুনা, আফরোজা আব্বাস, তাবিথ এম আউয়াল, ড. খন্দকার মারুফ হোসেন, হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
নতুন নির্বাহী কমিটিতে স্থান পেতে পারেন ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরু, কামরুজ্জামান রতন, নুরুল ইসলাম নয়ন, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ওবায়দুল হক নাসির, হাসান মামুন, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, হায়দার আলী লেলিন, আব্দুল মতিন, ওমর ফারুক শাহীন, আবু বকর, দুলাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম রাসেল, শেখ মোহাম্মদ শামীম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, কামাল আনোয়ার আহমেদ, আনোয়ার হোসেন টিপু, মনিরা আক্তার রিক্তা ও সেলিনা সুলতানা নিশিতা।
এ ছাড়া যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, কৃষক দলের বেশ কয়েকজন নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আলাপ করে এ ধারণা পাওয়া গেছে।
অভিনেতা শাহারিয়া ইসলাম শায়লা, রিনা খান, শামসুদ্দিন দিদার, হেলাল খান, বাবুল আহমেদ, জাহাঙ্গীর শিকদার, সাবেক ফুটবলার আমিনুল ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী শিল্পী বেবী নাজনীন, রুমানা ইসলাম কনকচাঁপা, ন্যান্সি, ভাষাশহীদ অলি আহাদের কন্যা ব্যারিস্টার রুবিন ফারহানের নামও আলোচনায় রয়েছে।
বিএনপির সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা জানান, ‘মহিলা দল থেকে ১৫/২০ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদক পদে যোগ্য রয়েছে।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘বাস্তবতার কারণে কমিটির আকার কেমন হবে তা বলা মুশকিল। কেউ এটা বলতেও পারবে না।’
নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে মিলন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো দল যেখানে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে সেখানে কেবলমাত্র কমিটি গঠন কেন, সব ক্ষেত্রেই বিএনপির চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’
দলের ৩টি পদে আলোচনায় থাকা রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমি কোনো পদের জন্য আগ্রহী নই, হাইকমান্ড যা করে সেটা আমি মেনে নেব।’
নতুন কমিটির আকার কেমন হতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে রিজভী জানান, ‘বর্তমানের চেয়ে কমতে পারে। আমি মনে করি ২৫০ হওয়া উচিত।’
কাউন্সিল প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘যথা সময়ে বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে।’
তবে কাউন্সিলের জন্য এখনও স্থান চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা। প্রতিকূল পরিবেশ হলেও যে কোনোভাবে কাউন্সিল করার চেষ্টায় আছেন দলের নেতারা। নির্বাচন ও আন্দোলন উভয় দিক বিবেচনা করে কমিটি পুনর্গঠিত হবে।
মন্তব্য চালু নেই