‘আম্মু আমাকে মাফ করে দিও’ শান্তার শেষ চিঠি

আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের আগে এক প্রেমিকার আত্মহত্যা দেখল দেশবাসী। মায়ের কারণে নিজের ভালোবাসার মানুষকে কখনও আপন করে পাবে না, আবার বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করতেও চায় না। এ উভয় সংকট থেকে বাঁচতে শুক্রবার সকালে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসদর হামজার টিলা এলাকার আজমা পারভীন শান্তা (২২)। আত্মহত্যার আগে মাকে হৃদয়স্পর্শী চিঠি লিখে যায় সে। পরে পুলিশ এসে লাশ, কিছু টাকা ও চিঠিটি উদ্ধার করে।

চিঠিতে লেখা-‘আম্মু আমাকে মাফ করে দিও, আমি এগুলো কিছু করতে চাইনি। আমি শুধু আমার ভালবাসার মানুষটাকে কাছে পেতে চেয়েছি। আব্বুকে বল, আমাকে মাফ করে দিও। সবাইকে বলু (বল) আমাকে মাফ করে দিতে। আমি যানি (জানি) কখনও আমার ভালবাসার মানুষটাকে আমি পাব না। কারণ, তুমি মেনে নিবে না। আর তোমার মনেও আমি কষ্ট দিতে পারব না। আগেও দিতে পারি নি। আমার কথা ভেবে মন খারাপ করো না। তোমার আরও দুটা সন্তান আছে। তাদের কথা ও তোমাকে ভাবতে হবে। আমার ভালবাসার মানুষটাকে কষ্ট দিও না। প্লিজ টাকা গুলো মসজিদে দিও।’

এদিকে এই আত্মহত্যার নেপথ্যে শান্তা যেমন তার মায়ের কড়া মনোভাবকে দায়ী করেছে ঠিক তেমনিভাবে স্বজনরাও শান্তার মায়ের কারণে পারিবারিক অশান্তিকে দায়ী করেছে।

থানা ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের হরিনাদিঘী গ্রামের জনৈক গোলাম রহমান ১৯৯৪ সালের দিকে একই উপজেলার দক্ষিণ রাঙ্গামাটিয়া মাহলিয়া ঠিলা এলাকার জনৈক হাজী ইদ্রিছের মেয়ে মমতাজ বেগমকে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে প্রবাসী গোলাম পৌর সদর করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে ও থানার পূর্ব দিকে হামজার টিলায় জায়গা কিনে পাঁচ তলা ভবন করে শান্তিতে বসবাস করে আসছিলেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তাদের। বড় মেয়ে শান্তাকে ৮ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ৫/৬ বছর আগে বিয়ে দেয় এবং সে সংসার ভেঙে যায়। এ বিয়ে ভেঙে যাবার নেপথ্যে শান্তার মায়ের ভূমিকা ছিল বলে পারিবারিক অশান্তি নিয়ে এক সালিশি বৈঠকে কথা উঠে ছিল। এরপর হতে শান্তা মায়ের সাথে ওই ভবনে বসবাস করে আসছিল।

ইতোমধ্যে শান্তার বাবা গোলাপ প্রবাস হতে বাড়ি এলে শান্তার মা মমতাজ বেগমের বেপরোয়া জীবন যাপনের কারণে কয়েক বার ঝগড়া হয়। এ নিয়ে সালিশ বসে কয়েক বার।

তাছাড়াও স্বামীর জায়গা সম্পদ হাতিয়ে নিতে শান্তার মা ষড়যন্ত্র করতে থাকে বলে স্বজনরা জানান। এমনকি গোলাপকে মারধর করে পা ভেঙে দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখে বলে অভিযোগ করেন গোলাফের ছোট ভাই মো. শফি। এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি লেগেই ছিল। এমনকি মমতাজ থানায় স্বামী গোলাপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। যা পরে সালিশের মাধ্যমে শেষ হয়। অশান্তিতে ঘেরা এ পরিবারে শান্তা আরেক ছেলেকে ভালোবাসে। ভালোবাসার ছেলেটিকে পেতে শান্তা মরিয়া হলেও তার মা মমতাজ বেগমের কারণে ভালোবাসার মানুষকে পাবে না এবং পেলে মেনে নেবে না বলে শান্তা আত্মহত্যা করার আগে ওই চিঠিতে উল্লেখ করে। চিঠির সাথে রাখা কিছু টাকা মসজিদে দান করতে উল্লেখ করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল হতে চিঠি ও টাকাগুলো উদ্ধার করে।

থানার ওসি (তদন্ত) বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে ফটিকছড়ি করোনেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে হামজার টিলার ছাদেক ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিজ শয়ন কক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেছিয়ে আজমা পারভীন শান্তা (২২) আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল হতে ওড়না কেটে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে শান্তার বাবা গোলাফ রহমান বাদী হয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। লাশ সুরতহাল রিপোর্টের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

এ দিকে শান্তার আপন চাচা মো. শফি ও মঞ্জুর মোর্শেদ থাদের ভাতিজির এমন মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বড় ভাইকে তার স্ত্রী ও শাশুড়িসহ বিভিন্ন লোক দিয়ে সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এমনকি আমার ভাইয়ের করা ভবনে ভাইয়ের শ্বশুর ও শাশুড়ি বসবাস করে আসছে। আমরা সেই ভবনে ভাইকে দেখতে পর্যন্ত যাইতে পারি না। আমার ভাইকে পা ভেঙে গৃহবন্দী করে রেখেছে প্রায় ছয় মাস ধরে। আমার ভাবী মমতাজের কারণে আমাদের ভাতিজি শান্তা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই