মিমির স্বপ্ন সালমানের নায়িকা হওয়া

ফিল্ম বা টেলিভিশন জগতে কাজ করলেই রোজ বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজের খোঁজে ফোন করে, মেল-এ ছবি পাঠায়, ফেসবুক মারফত অনুরোধ পাঠায়৷ এদের মধ্যে কারও সাথে যোগাযোগ করে অডিশনও করেছি মাঝে মাঝে৷ কেউ কেউ সেই অডিশনে উত্তীর্ণ হয়েছে, কেউ আবার এত সাংঘাতিক অভিনয় করেছে যে আমরা ভয়ে পিছিয়ে গিয়েছি৷আসলে অধিকাংশ মানুষই ভাবেন, ও যদি অ্যাকটিং করতে পারে, আমি পারব না কেন!

একটা সময় ছিল যখন আমরা সদ্য কাজ করছি টেলিভিশনের জন্য৷ সেই সময় নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রী খোঁজা হত নানাভাবে৷ একটা প্রোগ্রাম ছিল ‘পুলিশ ফাইলস’ নামে, তাতে কেবল নতুনদের নিয়ে কাজ করতে হত৷ একরাশ ছবি দেখে আমরা গল্পের চরিত্র অনুযায়ী কাস্টিং করতাম, অনেকটা রাশিয়ান রুলে খেলার মতো৷ এর মধ্যে কেউ কেউ খুব ভালো কাজ করত, আবার কেউ আমাদের চোখের জলে, নাকের জলে হাবুডুবু খাওয়াতো৷ তাই এই অনুষ্ঠানটা করা মানেই ছিল কিছুটা পানিশমেন্ট পোস্টিংয়ের মতো৷ কিন্তু এই অনুষ্ঠান মারফতই আমরা পাই কিছু অসাধারণ অভিনেতা-অভিনেত্রী এমনকী আজকের তারকাদেরও৷ যেমন পায়েল সরকার, বিশ্বনাথ, তথাগত…৷

কিন্তু পুলিশ ফাইলস ছাড়াও আমরা প্রায়ই নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রী নিয়ে কাজ করেছি৷ মিমি চক্রবর্তী তার মধ্যে অন্যতম৷ বছর তিনেক কি বড় জোর চার বছর আগে মিমিকে প্রথম দেখি আমাদের প্রাক্তন সহকারী, বর্তমানের সফল টেলিভিশন পরিচালক প্রযোজক সুশান্ত দাসের একটি সিরিয়ালে৷ ওকে দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিল৷ তখন মিমি সবে এসেছে উত্তরবঙ্গ থেকে, তার আগে ছিল অরুণাচল প্রদেশে৷ তাই তেমন ভালো বাংলা জানত না, একটু বেশি অ্যাংলিসাইজড বলা চলে ওকে৷ কিন্তু মিমির মধ্যে ছিল স্মার্টনেস ও শেখার ইচ্ছে৷

সুশান্তর সিরিয়াল শেষ হওয়ার পর আমাদের হঠাত্‍ করে বলা হয় রবীন্দ্রনাথ এবং তার কাজকে ভিত্তি করে একটি ধারাবাহিক হবে৷ তখন আমরা ‘প্রেম বাই চান্স’ ছবি করছি৷ শুনলাম ধারাবাহিকটি লিখবেন ঋতুপর্ণ ঘোষ৷ আমরা একটু স্ক্রিপ্ট শুনে কাস্টিং শুরু করি৷ এবং সেখানে নায়িকা পুপের চরিত্রে প্রথমেই যার নাম আসে, সে হল মিমি৷ ওকে অবশ্য প্রথমেই জিন্স আর টি-র্শাট পরে দেখে ঋতুপর্ণ অল্প সন্দিহান ছিল৷

তার ওপর যখন শুনলাম মিমি বাংলা পড়তে জানে না, তখন তো চক্ষু চড়ক গাছ! কিন্তু আমি একমত ছিলাম না৷ আর সঙ্গে ছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থন৷ ঋতুপর্ণর পাঠানো শাড়ি, সঙ্গে প্রিন্টেড ব্লাউজ, খোঁপা, কাজল আর ছোট্ট টিপ পরিয়ে যখন মিমির ছবি তোলা হল, কোথায় সেই মেমসাহেব? দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে বেরুল৷ ওর লুক এতোটাই ঋতুপর্ণর পছন্দ হয়েছিল, যে ওর বাংলা পড়তে না জানা মকুব করে দেওয়া হয়৷

আমরা যদিও এই ধারাবাহিকে আর কাজ করিনি, কিন্ত্ত ‘গানের ওপারে’তে পুপের চরিত্র করে মিমি আর সঙ্গে অর্জুন চক্রবর্তী হয়ে উঠেছিল আপামর বাঙালির সুইটহার্ট৷ তাই ২০১২ সালে এই ধারাবাহিক বন্ধ হওয়ার পর, প্রসেনজিত্‍ ঠিক করেন নতুনদের নিয়ে একটা ছবি করবেন, আর সেই ছবিতে থাকবে অর্জুন ও মিমি৷ এবার মিমি হবে আজকের কন্যা, যা একেবারেই পুপে চরিত্রের বিপরীত৷ মিমিও খুব খুশি৷

মিমি স্কাট পড়বে, আধুনিকা সাজবে ভেবে৷ কিন্তু মিমিকে এতটা স্লিম মনে হত না, স্কার্টে পা দেখা ঢাকা থাকায় ও যে অল্প বিস্তর সুস্বাস্থ্যের অধিকারিনী হয়েছে, বোঝা যেত না৷ মিমির কোনও চিন্তা নেই, বলল ঠিক হয়ে যাবো রোগা৷ মিমি স্কার্ট-এর আকর্ষণে কমিয়ে ফেলল ওজন, চলল ওয়ার্কশপ, অর্জুন ও আরও চারজন নবীন অভিনেতার সঙ্গে৷ সালমান খানের ফ্যান মিমি চক্রবর্তী অভিনয় করতে-করতে, সাজতে-সাজতে স্বপ্ন দেখত কবে ও সালমানের সঙ্গে অভিনয় করবে৷

‘বাপি বাড়ি যা’র পর সলমনের কাছে পৌঁছনোর দিকে মিমি কতটা এগিয়েছে জানি না৷ কিন্তু, প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত টলিগঞ্জে ভালোই এগিয়েছে মিমি৷ প্রথমে রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ৷ হিরো সোহম, তারপর বিরসা দাশগুপ্ত, রবি কিনাগি আর সম্প্রতি আবার রাজের ছবিতে দেব-এর নায়িকা মিমি৷ প্রিমিয়ারে মিমিই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল প্রথম, গিয়ে দেখি, সেই প্রথম দিন শ্যুটিংয়ে যেমন হাত ঠাণ্ডা হয়ে ছিল, ডাকাবুকো মিমি সেরকমই ভীত!

এত বড় প্রোডাকশনের হিরোইন বলে কথা! কিন্ত্ত মিমি সাহসী, খুবই সাহসী৷ ‘বাপি বাড়ি যা’র শেষে গড়িয়াহাটের মোড়ে অর্জুন আর মিমির দুঃসাহসিক সিন খুব কম অভিনেত্রীই এত সাবলীল ভাবে করতে পারে৷ পরে মিমি বলেছে ওটা প্রথম ছবি, তাই নাকি ঘোরে হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আমরা মনে হয় ও মধ্যে আছে বড় হওয়ার, তারকা হওয়ার সাহস ও ট্যালেন্ট৷ কেবল ঠিকঠাক পা ফেলতে হবে৷



মন্তব্য চালু নেই