দিনাজপুরের টুকরো খবর (১০/১০/১৪)

বিরামপুরে গুম নাটকের যুবক আটক:
অপহরণ ও গুম নাটকের ভিকটিম দু’বছর লুকিয়ে থাকার পর অবশেষে বুধবার বিকেলে (৮ অক্টোবর) বিরামপুর থানা পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়েছে। এঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে এবং আসামীপক্ষ হয়রানী থেকে স্বস্তির নিঃস্বাষ ফেলেছে।
জানা গেছে, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার দক্ষিণ হরিরামপুর (ডাঙ্গাপাড়া) গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের পুত্র জিকরুল (২৫) একই গ্রামের শ্যামল চন্দ্রের বাড়িতে কামলার কাজ করতো। জিকরুল ২০১২ সালের জুন মাসে পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু জিকরুলকে শ্যামল চন্দ্রসহ ৯ ব্যাক্তি হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ ও গুম করেছে দাবী করে জিকরুলের পিতা ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর আদালতে মামলা করেন।
এঘটনায় পিতার কুমন্ত্রনায় পুত্র জিকরুল ২ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল। এদিকে আসামী পক্ষ জিকরুলকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিরামপুর আসতে বলে এবং পুলিশকে সংবাদ দেয়। বুধবার বিকেলে বিরামপুর চকপাড়া এলাকায় থানার সেকেণ্ড অফিসার শাহ আলম ও এসআই মমতাজুর রহমান ছদ্মবেশে অবস্থান নেন। জিকরুল তার কথিত মোবাইল প্রেমিকার সাথে দেখা করতে এলে পুলিশ তাকে পাকড়াও করে।
আটক জিকরুল অকপটে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পার্বতীপুর থানার এসআই মেহেদী হাসান জানান, এই সাজানো মামলা নিয়ে পুলিশ ও আসামীপক্ষকে অনেক হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে।

নবাবগঞ্জে ব্যক্তির মৃত্যু:
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত মিলন (২৫) নাসে এক ব্যাক্তির মৃত্যু ঘটেছে। সে উপজেলার শালখুরিয়া গ্রামের আঃ ছালামের ছেলে। জানা যায়, মিলন গত কয়েকদিন পূর্বে উপজেলার চড়ারহাটের পূর্ব পার্শ্বে নছিমন ভটভটিতে করে যাওয়ার পথে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কয়েক দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার পর বুধবার সকালে তার মৃত্যু ঘটে বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

ড্যাব মহাসচিবের মতবিনিময় ও ঈদ পুনর্মিলনী:
দিনাজপুরের বিএনপি-র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ড্যাবের মহাসচিব ডা: এ.জেএম জাহিদ হোসেন বুধবার বেলা ১১টার দিকে তার নিজ গ্রাম নবাবগঞ্জের মতিহারায় এক ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
এতে অংশগ্রহণ করেন জেলা বিএনপি-র সাধারণ সম্পাদক মুকুর চৌধুরী, জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের আহবায়ক সায়হান আশরাফ আল মুতী, জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোকছেদুল ইসলাম, বিরামপুর পৌরমেয়র ও পৌর বিএনপি-র সভাপতি আজাদুল ইসলাম আজাদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি-র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মোল্লা, হাকিমপুর পৌর মেয়র সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী, ঘোড়াঘাট পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন, নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকীসহ চার উপজেলার ছাত্রদল, যুবদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল ও ২০দলীয় জোটের কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
সভায় দিনাজপুর-৬ আসনের নেতাকর্মী ছাড়াও জেলা থেকেও নেকৃবৃন্দগন এসেছিলেন। সভায় মূলত আসন্ন সরকার বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে আলোচনা করা হয়।

মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত শিশু ১৪ ঘন্টা পর উদ্ধার: আটক-২
বিরামপুর থেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত শিশুকে পুলিশ ১৪ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার ভোরে উদ্ধার ও ২জনকে আটক করেছে।
জানা গেছে, বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের বিপ¬ব দাসের পুত্র ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র বাপ্পী দাসকে (১১) বুধবার দুপুরে মামা পক্ষের আত্মীয়র পরিচয় দিয়ে জনৈক মুক্তার হোসেন (২৯) অপহরণ করে নিয়ে যায়।
বিকেলে মোবাইল ফোনে অপহরণকারী মুক্তার হোসেন বাপ্পীর পিতার নিকট ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিপ¬ব দাস পুত্রকে ফিরে পাওয়ার আশায় ২৯ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠান এবং বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পারভেজ কবীরের নেতৃত্বে দলীয় নেতৃবৃন্দ ও থানার ওসি মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গভীর রাত পর্যন্ত কৌশল নির্ধারণের পর শিশু উদ্ধারে নামেন।
অপহরণকারীরা প্রতিক্সণে অবস্থান পরিবর্তন করে পুলিশকে ধোকা দেয়। শেষে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ তাদের অবস্থান নির্ণয় করেন।
ওসি মমিনুল ইসলামের প্রত্যক্ষ নির্দেশে রাত ৩টার দিকে অন্ধকারের মধ্যে মোটরসাইকেলের হেডলাইট বন্ধ করে এসআই মমতাজুল হক, এসআই গোলাম রব্বানী চিশতী, মতিয়ার রহমান ও রিজু আহম্মেদ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দলারদর্গা থেকে কাকড়াপালি রাস্তায় যেতে থাকেন। এসময় অপহরণকারীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহৃত শিশুকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়।
শিশুটি তাকে বন্দি করে রাখার বাড়ি চিনিয়ে দেয় এবং ২ অপহরণকারীকে সনাক্ত করে। পুলিশ বাড়ি থেকে অপহরণকারী ওমেদ আলী (৪৫) ও মামুনুর রশিদকে (৩৮) আটক করে। তারা হাকিমপুর উপজেলার কাকড়াপালি গ্রামের বাসিন্দা। শিশু উদ্ধারের পর (বৃহস্পতিবার দুপুরে ) বিরামপুর থানায় মামলা হয়েছে।

১০ অক্টোবর,১৯৭১ সাল-দিনাজপুরের চড়ারহাটের গণহত্যা ট্রাজেটি দিবস:
দিনাজপুরের বিরামপুরের পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার আঞ্চলিক সড়ক সংলগ্ন প্রাণকৃঞ্চপুর (চড়ারহাট) ও আন্দলগ্রাম (সারাইপাড়া) পাশাপাশি ছায়া সুনিবিড় শান্ত গ্রাম দুটি অশান্ত হয়ে উঠেছিল ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর ভোরবেলা। তখন মসজিদে ফজরের আযান দিচ্ছেন মোয়াজ্জিম। ঘুম ভাঙ্গা চোখে গ্রামবাসীর প্রথম দৃষ্টি পড়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর উপর। শত শত হানাদার গোটা গ্রাম ঘেরাও করে মেশিনগান এসএমজি তাক করে রাখলে গ্রামবাসীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও পালিয়ে যাবার কোন পথ ছিল না। প্রাণে বাঁচার শেষ আশ্রয় হিসেবে প্রায় সবাই ছুটে যান গ্রামের একমাত্র মসজিদে।
অন্যদিকে, একদল পাকহানাদার বাড়ী বাড়ী গিয়ে বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর ও মহিলাদের ধরে এনে গ্রামের উত্তর পূর্ব কোনের মাঠে সমবেত করে। পাকবাহিনী রাস্তায় মাটি কাটার কথা বলে মসজিদের লোকজনকে একই স্থানে নিয়ে আসে। এর পর নির্দেশ দেয় সবাইকে কলমা পড়ার জন্য। আতঙ্কিত গ্রামবাসী কলেমা পড়ার সাথে সাথে তাদের উপর শুরু হয় মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ার। ভোরের নিস্তব্ধতাকে ভেদ করে এক সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নিরীহ বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর ও মহিলারা।
এনারকীয় হত্যাযজ্ঞে প্রাণকৃঞ্চপুর (চড়ারহাট) ৫৭ জন, আন্দলগ্রাম (সারাইপাড়া) ৩১ জন, বেড়ামলিয়া ১জন, আহম্মদ নগর ৩জন, নওদা পাড়া ১জন, শিবরামপুর ১জন, চৌঘরিয়া ১ জন, আমতলা ১জন সহ দুই জন মহিলা সহ নাম ও ঠিকানা বিহীন অনেক নিরীহ মানুষ শহীদ হন। এ সব শহীদের মধ্যে ৯৮ জনের লাশ সনাক্ত করা যায়। বাকী লাশগুলি সনাক্ত করন ছাড়াই দাফন করা হয়। তাদের ভাগ্যে জোটেনি এক টুকরো কাফনের কাপড় । শুধু মশারী, কাঁথা ও শাড়ী-লুঙ্গি দিয়ে একই কবরে ৪-৫ টি করে লাশ দাফন করা হয়। হানাদারদের হাত থেকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ডাঃ এহিয়া মন্ডল, আঃ হামিদ, মোজাম্মেল হক মাষ্টার, ডাঃ আবুল কালাম, আঃ রশিদ সহ ১১জন এখনও সেই ভয়াল নারকীয়তার স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছেন।
যে কারনে এই হত্যাযজ্ঞঃ- ৭১ এর ৩ অক্টেবর চড়ার হাটের পথ ধরে গরুর গাড়ীতে করে ৮ জন পাকসেনা বিরামপুরের দিকে আসার পথে বিরামপুর থানার বিজুল ও দিওড় গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে মুক্তিবাহিনী ৭ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ১জন পালিয়ে গিয়ে পাক সেনাদের ক্যাম্পে খবর দিলে পাক সেনারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
পালিয়ে যাওয়া ঐ পাকসেনার ভুল নিশানার কারনে দিওড় গ্রামের পরিবর্তে আন্দোলগ্রাম-চড়ারহাট গ্রাম দুটিতে পাক হানাদাররা গণহত্যা চালিয়ে ১৫৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। চড়ারহাটের গণকবরটির সিমানা বেষ্টনী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সেই হত্যাযজ্ঞের দু’মাস পর দেশ স্বাধীন হয়। শহীদদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এলাকাবাসী চড়ারহাটে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় ও শহীদ স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে।
স্বাধীনতার ৪০ বছরের মাথায় পার্শ্ববর্তী হাকিমপুর থানার মুক্তিযোদ্ধা অজিত কুমার রায় নিজের বসতবাড়ী বিক্রি করে চড়ারহাটের বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তার এই মহানুভবতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সে সময়ের নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান এমপি শিবলী সাদিক, বিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রাজু, হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ও চড়ারহাটের বিশিষ্ট ডাঃ আবুল কালাম ইট, সিমেন্ট ও অর্থ দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে এগিয়ে আসেন। কৃষক নওশের আলী মণ্ডলের দানকৃত জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে চড়ারহাট শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ।
শুক্রবার ১০ অক্টবোর বেলা ১০ টায় চড়ারহাটের ১৯৭১ সালে গনহত্যার স্মৃতিসৌধে উপজেলা প্রশাসন, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও বিরামপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডের পক্ষ্যে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া এবং ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হবে। বাদ যোহর চড়ারহাটসহ আশপাশের গ্রামের শহীদ পরিবারের সদস্য ও গনহত্যার বেচে যাওয়া আহতরাসহ সর্বস্তরের এলাকাবাসী নিহতদের স্বরনে বিশেষ দোয়া করবেন।
১৯৭১ সালের ১০ অক্টবোর ভোরে হানাদারদের হাত থেকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ডাঃ এহিয়া মন্ডল (৭৬) আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, সরকার এ গনহত্যায় নিহতদেরকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃৃতি প্রদান ও যথাযথ পূনর্বাসন করা, আহতদের যুদ্ধাহত হিসেবে স্বীকৃৃতি প্রদান করা এবং অত্র এলাকায় শহীদদের স্মরনে চড়ারহাটে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়কে জাতীয় করন করার জোর দাবি জানায়।



মন্তব্য চালু নেই