লতিফ সিদ্দিকী ‘ফের নিউ ইয়র্কে’
হজ নিয়ে মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারাতে বসা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মেক্সিকো থেকে আবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে এসেছেন।
এ ব্যাপারে সরকারিভাবে কেউ মুখ না খুললেও একাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি তাকে একটি ভাড়া গাড়িতে চড়ে বিমানবন্দর থেকে নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স এলাকায় যেতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল সমিতির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গত দুদিন ধরে নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। এ কারণে তিনি ফেরার পরও তার অবস্থান সম্পর্কে কাউকে কিছু জানানো হচ্ছে না।
একজন প্রবাসী বাংলাদেশি জানান, স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে মেক্সিকো থেকে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে নামেন লতিফ সিদ্দিকী, দেশে যার বিরুদ্ধে অন্তত দুই ডজন মামলা হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে।
এক সপ্তাহ আগেও মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করা এই আওয়ামী লীগ নেতাকে অভ্যর্থনা জানাতে কেউ বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন না। সরকারি কোনো গাড়িও যায়নি।
ভাড়া করা একটি গাড়িতে করে তাকে নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স এলাকায় যেতে দেখা গেছে বলে একাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে মোমেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন না। এজন্যে তার সফর সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।”
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “মন্ত্রী মহোদয় ২৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক থেকে মেক্সিকো গেছেন। এরপর সরকারিভাবে আমাকে আর কিছু জানানো হয়নি। তিনি নিউ ইয়র্কে ফিরলেও তা আমার জানা নেই।”
জাতিসংঘের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত মাসের শেষ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর পরপরই মেক্সিকোয় তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক এক বিশ্ব সম্মেলনে পুরস্কার নিতে যাওয়ার পথে নিউ ইয়র্কে যাত্রাবিরতি নেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে আসা লতিফ।
এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী।”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রম শক্তির ‘অপচয়’হয়। উৎপাদনে প্রভাব পড়ে।
২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির সেই অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী।
২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির সেই অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী।
তার ওই বক্তব্যের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিএনপি এবং কয়েকটি ইসলামী সংগঠন তাকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানায়।
ওই মন্তব্যের পর সরকারের পক্ষে পুরস্কার নিতে মেক্সিকোর গুয়াদালাহারা শহরে যান মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক যান।
তবে শেষ পর্যন্ত বুধবার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক ওই বিশ্ব সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী পলকই সরকারের পক্ষ থেকে ‘গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ নেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
লতিফ সিদ্দিকীর মেক্সিকো থেকে নিউ ইয়র্কে ফিরে আসার ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান খান আপেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘কিছুই জানেন না’ দাবি করেন।
তবে টাঙ্গাইল সমিতিরই আরেক সদস্য বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী নিউ ইয়র্কে এসেছেন। তার মেয়ে কানাডায় থাকেন। তবে আপাতত তিনি সেখানে যাচ্ছেন না।
এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর নিউ ইয়র্কে ফেরার খবরের সঙ্গে সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার কথা ভাবছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
তাকে যে মন্ত্রিসভার পাশাপাশি দলও ছাড়তে হবে- সে বিষয়টি নিশ্চিত করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “আমি নির্দেশ দিলে রিজাইন (পদত্যাগ) করতে হবে। নইলে বিদায় করে দিতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বর্তমানে হজে থাকায় তার ফেরা পর্যন্ত বিষয়টি ঝুলে থাকছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
নিউ ইয়র্কে গুঞ্জন- মন্ত্রিত্ব থেকে বরখাস্তের সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পরই তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারেন। তবে লতিফ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ট কারো মাধ্যমে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য চালু নেই