লতিফ সিদ্দীকীর একমাত্র সহায় হলেন তসলিমা নাসরিন

হযরত মোহাম্মদ (সা.), হজ, তাবলীগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে কেউ না দাঁড়ালেও বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাকে সমর্থন দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক, টুইটারে) তিনি লতিফ সিদ্দিকীকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সরকারের সমালোচনাও করেন।

লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য তুলে ধরে তিনি ফেসবুকে লেখেন-

বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন : ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ খুব বুদ্ধিমান ছিল। সে চিন্তা করল এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কিভাবে চলবে। তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করলো যে আমার অনুসারীরা প্রতিবছর একবার একসাথে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।গড়ে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায়; প্রত্যেকের পাঁচ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়। তাবলিগ জামাত প্রতিবছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদের তো কোনো কাজ নেই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।’

Nasreen Taslima 1

ব্রাভো লতিফ সিদ্দিকী!
এতদিনে বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রীর মুখে কিছু সত্যভাষণ শুনলাম। আরো মন্ত্রী যেন শেখেন সত্য কথা বলা। এতকাল তো মন্ত্রিকুলের মুখে মিথ্যেই শুনেছি, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি শুনেছি, ধর্মের মিথ্যে স্তুতি শুনেছি। এবার সত্য কিছু কথা শুনে প্রাণ জুড়োলো।

এরপর সন্ধ্যায় লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে এমন খবরে আবারো ক্ষুদ্ধ হন ‘বিতর্কিত’ লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আবার প্রমাণ করলো এ কোনও গণতান্ত্রিক দেশ নয়। কোনও সভ্য দেশ নয় এই দেশ। এই দেশ পৃথিবীর অন্যতম বর্বর দেশ। প্রমাণ করলো এই দেশ ইসলামী সন্ত্রাসীদের দেশ। কিছু সত্য কথা বলেছেন বলে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের লক্ষ লক্ষ অশিক্ষিত ধর্মান্ধ বর্বর তাঁকে দেশে ঢুকতে দেবে না বলে চিৎকার করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি দল আর বিরোধী দলের মধ্যে কে কত ধর্মান্ধ বর্বর, তার প্রতিযোগিতা চলে। লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণ করে ধর্মান্ধ সরকার বুঝিয়ে দিতে চাইছে, তারাও দেশের অশিক্ষিত ইসলামী সন্ত্রাসীদের মতো অশিক্ষিত, তারাও তাদের মতো ধর্মান্ধ, তারাও বর্বর, তারাও কোনও ভিন্ন মতকে বরদাস্ত করে না, তারাও সত্যিকার গণতন্ত্রে এবং মুক্তচিন্তায় বিশ্বাস করে না।’

ধর্মান্ধ বর্বরদের দেশটায় আমার জন্ম হয়েছিল, ভাবতেই লজ্জা হয় আমার- এমন কথাও ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন এই লেখিকা।

এরপরও একের পর এক তার পক্ষে ও ধর্মের বিপক্ষে ফেসবুকে লিখেই চলেছেন তিনি। গতকাল বুধবার তিনি লেখেন

‘মুসলমানরা লতিফ সিদ্দিকীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে, তাঁর ফাঁসি চাইছে। যারা নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করে, তারাও তাঁর বিরুদ্ধে বলছে। যারা নিজেদের নাস্তিক বলে প্রচার করে, তাদের বেশির ভাগই ইনিয়ে বিনিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর ভুল ধরছে। মন্ত্রী হলে নাকি ধর্মের নিন্দা করা উচিত নয়।

Nasreen Taslima

ইসলামকে প্রটেকশন দিচ্ছে মূলত সবাই। মুসলমানের রক্ত অত সহজে নাস্তিক হতে চায় না, নারীবাদী বা মানববাদী হওয়ার তো প্রশ্ন ওঠে না। দু’একটা ধর্মের সমালোচনামূলক প্রবন্ধ পড়ে নাস্তিক হয়ে গেছি বলে রব তুললেই যে নাস্তিক হওয়া হয় না, তা লতিফ সিদ্দিকীর মতো ঘটনা সামনে এলেই প্রমাণ হয় ।

লতিফ সিদ্দিকী এমন কিছু অসাধারণ কথা বলেননি। যা বলেছেন, মাথায় সামান্য পদার্থ থাকলে যে কেউ বুঝবে, ঠিক বলেছেন। আমি তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছি,কারণ তিনি ইসলামের সমালোচনা করেছেন মন্ত্রী হয়ে, বাংলাদেশের মতো মুসলিম মৌলবাদী দেশের মন্ত্রী হয়ে। মন্ত্রী হলে ধর্মের সমালোচনা করা পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট । তিনি অত্যন্ত জরুরী সেই সো কল্ড ইনকারেক্ট কাজটিই করেছেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে কিছু নকল প্রগতিশীল কাঁদছেন। এই জিনিসেরই কিন্তু দরকার, ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগানো। এ না হলে নষ্ট সমাজটা বদলাবে না। রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করতে গেলে, নারীবিরোধী আইন দূর করতে গেলে, মূর্খদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে। ওই ধর্মানুভূতিতে আঘাত না দিয়ে কোনও সমাজে কোনও ভালো কাজ আজ অবধি হয়নি।

পাওয়ারলেস লোকেরা ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিলে অতটা কাজ হয় না। পাওয়ারফুল লোকেরা দিলে কাজ হয়। লতিফ সিদ্দিকীকে হয়ত ভুগতে হবে আপাতত, কিন্তু ইসলামের সমালোচনা করার এই ট্রেন্ডটা যদি পাওয়ারফুল লোকদের মধ্যে আলটিমেটলি তৈরী হয়ে যায়, তবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। থ্রি চিয়ার্স!’



মন্তব্য চালু নেই