মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিটিআরসির লাইসেন্স লাগবে
মোবাইলভিত্তিক আর্থিক সেবার (এমএফএস) জন্য অপারটেরদের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) লাইসেন্স নিতে হবে। একই সঙ্গে অর্জিত রাজস্বের একটি অংশ বিটিআরসিকে দিতে হবে। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে। সংশোধন প্রক্রিয়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বিটিআরসিকে এক মাস সময় দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন প্রায় তিন কোটি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে দিনে ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি লেনদেন হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণের চাঁদা আদায়, জঙ্গি অর্থায়নসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাই সরকার এ খাতকে একটি নীতিমালার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়।
মোবাইল কোম্পানিগুলো এ ব্যবসার জন্য সহযোগিতা করলেও এতদিন নিজেরা এ ব্যবসায়ে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারতেন না। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায় সেলফোন কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ রেখে নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় চাইছে মোবাইল কোম্পানিগুলো এ ব্যবসায়ে যুক্ত হওয়ার আগে তাদের অনুমোদন নিক।
এ প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এ খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি রয়েছে। কিন্তু পুরো বিষয়টি আরো স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে হবে। মোবাইল কোম্পানিগুলোকেও তদারকির আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে আমাদের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। অর্জিত মুনাফার একটি বাস্তবসম্মত অংশ আমদেরকে দিতে হবে।
টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শওকত মোস্তফা বলেন, ‘বিটিআরসি এ বিষয়ে কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদন পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
২০০৯ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়। বর্তমানে একটি ব্যাংক নিজস্ব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনা করে থাকে। এতে শতভাগ মালিকানা থাকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটির। সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী গ্রাহকদের এ সেবা দিয়ে থাকে ব্যাংকের ওই সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এ পদ্ধতিটি ‘ব্যাংক-লেড’ মডেল নামে পরিচিত।
সূত্র জানায়, এ সেবা চালুর পর থেকে ফোন কোম্পানিগুলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিজেদের অংশীদারিত্ব চেয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন তাদের আবেদনে সম্মতি দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে নীতিমালায় সংশোধনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে গত জুলাইয়ে একটি খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতিমালা অনুযায়ী মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশ শেয়ার ব্যাংক নিজ মালিকানায় রাখতে পারবে। বাকি অংশীদারিত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর, অন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোকেও আগামী তিন বছরের মধ্যে নতুন নীতি অনুযায়ী শেয়ার ছেড়ে দিতে হবে।
খসড়া নীতিমালা অনুসারে, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে একাধিক মোবাইল ফোন অপারেটর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার থাকবে। তবে একটি মোবাইল অপারেটর এক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক হতে পারবে। প্রস্তাবিত মডেলটিকে ‘মাল্টি ব্যাংক মডেল’ বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ২৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পরিচালনার লাইসেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে ২০টি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। চার ব্যাংকের সেবা চালুর উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর প্রাইম, সোনালী, জনতা ও বিদেশি মালিকানার সিটিএনএর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
এ সেবার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নামটি হলো ব্রাক ব্যাংকের বিকাশ ও ডাচ বাংলা ব্যাংক। দেশের মোট তিন কোটি মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে শুধু বিকাশেরই এক কোটি ৭০ লাখ অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই