বাংলাদেশে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার সহায়তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের নতুন ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার গ্রান্ড হায়াত হোটেলে মার্কিন চেম্বার ও ইউএস বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত এক মধ্যাহ্ন ভোজসভায় ভাষণকালে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যমআয়ের দেশে পরিণত করা। এজন্য আমি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে মার্কিন উদ্যোক্তাদের নতুন ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ হচেছ সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম ৩৩১ মিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ছাড়াও আমাদের অর্থনৈতিক খাতে ধীরে হলেও কিছু বিনিয়োগ হচেছ। বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রের নানা খাতের বিনিয়োগকারীরা আরো গ্রহণ করুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য উদার আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কর রেয়াত, কম শুল্কে যন্ত্রপাতি আমদানি, রেমিটেন্স রয়্যালিটি, শতভাগ বিদেশী ইকুইটি, অনিয়ন্ত্রিত এক্সিট পলিসি, মুনাফার পূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং পুঁজি নিয়ে যাওয়াসহ আরো বহু সুযোগ-সুবিধা।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সাতটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করেছে। এসব অঞ্চলে বিদেশী বেসরকারি কোম্পানিগুলো শিল্প-কারখানার জন্য জমি লিজ নিতে পারে।
তিনি বলেন, শিল্প কারখানায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োগের জন্য আমাদের প্রায় ৮ কোটি তরুণ শ্রমশক্তি রয়েছে। এছাড়া আমাদের রয়েছে ১৬ কোটি ভোক্তার একটি বিশাল বাজার।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে শুরু করে আমাদের উদীয়মান জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও রিসাইক্লিং খাত, রাসায়নিক সার, অটোমোবাইল ও হালকা প্রকৌশল যন্ত্রপাতি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, ওষুধ, সিরামিক, প্লাষ্টিক ও পাটজাত পণ্য, আইসিটি, সমুদ্রের সম্পদ অনুসন্ধান, পর্যটন, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও টেলিকমিউনিকেশন খাতেও সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, আমরা জ্ঞানভিত্তিক হাই-টেক শিল্প স্থাপনে মনোযোগ দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য হচেছ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি শিল্প সমৃদ্ধ ও ডিজিটালাইজড মধ্যমআয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করা। এরফলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক অভিন্ন মূল্যবোধ, স্বার্থ ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে গভীরভাবে প্রোথিত।
তিনি বলেন, শান্তি, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা আওয়ামী লীগ সরকার ও মার্কিন সরকারের অভিন্ন মূল্যবোধ। আমরা উভয় দেশ স্বাধীনতা ও মানবাধিকার, অবাধ মত প্রকাশ, ধর্মীয় স্বাধীনতা, স্বাধীন গণমাধ্যম, বৈচিত্রময় সমাজ, সহনশীলতা, নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মুল ও মৌলবাদকে কোনঠাসা করার ক্ষেত্রে একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরে এসেছি তখনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমাকে বলেছেন এখানকার ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করার। আমার সময়ের স্বল্পতা থাকে। তা সত্ত্বেও আমি এব্যাপারে সবসময় আমার সম্মতি দিয়েছি। এর কারণ তিনটি। প্রথমত: বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক, দ্বিতীয়ত: যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারী খাতে বাণিজ্য বিনিয়োগ সুবিধার উপর আমার সরকার গুরুত্ব দেয়।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০০১ সালে যখণ আমরা ক্ষমতা ছেড়ে যাই, তখন মার্কিন বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বেসরকারি বিদেশী বিনিয়োগের অগ্রপথিক এইএস-এর মতো কোম্পানিকে সরকার সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। তারা হরিপুর ও মেঘনা ঘাটে বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন শুরু করে এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সাত বছর পর ২০০৯ সালে আমার সরকার আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে তখন বাংলাদেশের মার্কিন বিনিয়োগের পরিমাণ ৪ কোটি ডলারে নেমে আসে। গত পাঁচ বছরে তাঁর সরকার বাংলাদেশে সরাসরি মার্কিন বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সম্ভাব্য সব পথ কাজে লাগিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থানে অবস্থান করছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই বাংলাদেশের মার্কিন বিনিয়োগ এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে যাক।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে আমরা সাফল্যের সঙ্গে মায়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্র সীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছি। এখন আমরা সমুদ্রে জ্বালানি ও সম্পদ অনুসন্ধানে পুরোপুরি স্বাধীন।
শেখ হাসিনা বলেন,যদি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর দিয়ে ডিউটি ফ্রি কোটায় পন্য রফতানির সুযোগ পায়,তাহলে রফতানি বৃদ্ধি পাবে এবং টাগেটের চেয়েও মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত রফতানি করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক বছর তাঁর সরকার পোশাক শ্রমিকদের বেতন, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেছে। গত চার বছরে আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকবার তাদের নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধি করেছি। ২০০৯ সালে যেখানে তাদের নূন্যতম মজুরি ছিল ১ হাজার ৬শ’ টাকা, সেখানে ২০১৩ সালে তাদের নূন্যতম মজুরি দাঁড়ায় ৫ হাজার ৩শ’ টাকা।
তিনি বলেন, গত বছর আইএলও-এর সঙ্গে আমরা পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করি এবং ২০০৬ সালের শ্রম আইন সংশোধন করি।
শেখ হাসিনা বলেন, কারখানা পরিদর্শনে সরকার এক হাজার পরিদর্শক নিয়োগ করে। আইএলও-আইএফসি-এর কর্মসূচির আওতায় ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ১০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৩০-এ দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিআইসিএফএ) স্বাক্ষর করেছে, যা দু’দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এতে করে আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা সম্প্রসারণ কৌশল ‘সংলাপ অংশীদার’ ফ্রেমওয়ার্কে আওতায় আমরা প্রথমবার প্রবেশ করলাম।
মন্তব্য চালু নেই