দুঃস্বপ্নে বাড়ে আত্মহত্যার প্রবণতা

ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। অবাস্তব আর উদ্ভট অনেক কিছুই হাজির হয় সে স্বপ্নজুড়ে। অনেক আশা মুহূর্তেই পূরণ হয় আবার ভয়ঙ্কর অনেক কিছুই ঘটে যায়। কেউ আকাশে ওড়ে, কেউ রাজা হয়, কেউ দারুণ সব জায়গায় ভ্রমণ করে আবার কেউ স্বপ্নের মধ্যেই গাড়ি বাড়ির মালিক হন। এসবই আপনার সুস্বপ্ন বলা চলে। ঘুম ভাঙার পর বাস্তবে না পেলে মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়। তবে সারাদিনের কাজে তেমন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু আপনার ঘুমের মাঝে যদি বাসা বাধে ভয়ঙ্কর সব স্বপ্ন। কুৎসিত কিছু আপনাকে গ্রাস করছে, পৃথিবীর জঘন্যতম কাজ আপনি স্বপ্নের মধ্যে করছেন, অথচ আপনি কখনো এসব কল্পনাও করেননি।

সুইডেনের শাহগ্রেন্সকা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের মতে, এমন স্বপ্ন দেখা অব্যাহত থাকলে আপনার বাস্তব জীবনে তার কুপ্রভাব পড়বে। জেগে থাকা সময়ে বারবারই আপনার চোখের সামনে সেসব খারাপ দৃশ্য গুলো ভেসে উঠবে। মনের ভেতর বেড়ে যাবে অস্থিরতা। ক্লান্তি আর অবসাদ একটু একটু করে গিলে খাবে আপনাকে। একসময় আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে।

শাহগ্রেন্সকা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ওই হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে ভর্তি হওয়া ১৬৫ জন রোগীর ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছেন। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৬৮ বছরের ভেতর। এসব রোগী মূলত আত্মহত্যা করার প্রবণতায় ভুগছিলেন। আশ্চর্যের বিষয় হল তাদের মধ্যে ৮৯ জনই দুঃস্বপ্ন দেখার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল।

এদের মধ্যে ৭৩ শতাংশের ছিলে ঘুমের প্রথমেই সমস্যা, ৬৯ শতাংশের ছিল পুরো ঘুম জুড়েই সমস্যা, ৬৬ শতাংশের ছিল দুঃস্বপ্ন দেখার বাতিক এবং ৫৮ শতাংশের ছিল অতিরিক্ত সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস। মূলত সব সমস্যার ভাঁজেই লুকিয়ে ছিল একটাই বিষয়, আর তাহল দুঃস্বপ্নের কালো থাবা।

গবেষকদের একজন এসজে স্ট্রম বলেন, ‘আমারা গবেষণায় দেখেছি, রাতে দেখা দুঃস্বপ্ন সরাসরি আত্মহত্যার জন্য দায়ি না হলেও, আত্মহত্যার প্রধান কারণগুলোকে ক্রমাগত উদ্বুদ্ধ করে’।

তিনি আরও বলেন, ‘রাতে দেখা দুঃস্বপ্ন আমাদের ঘুমকে যেমন ক্ষতি করে, সকালে জেগে ওঠার পর তেমনি আবার ঘুমানো পর্যন্ত স্বপ্নের ভয় তাড়িয়ে বেড়ায়’।

এ ব্যপারে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহীদ বলেন, ‘স্বপ্নের পরে আর কিছুই নেই। মানুষ সারাদিন তার চেতন বা অবচেতন মনে যা ভাবে বা করে- স্বপ্নে মূলত তাই দেখে। অনেকেই না বুঝে ভয় পান, ভাবেন এই স্বপ্নই বুঝি খারাপ কিছুকে ইঙ্গিত করছে। আবার অনেকেই আছেন, যাদের কোনো বিষয়ে চরম ভয় কাজ করে। সেই বিষয় গুলো স্বপ্নের মধ্যে হানা দেয়। আর তখনি আমরা নানা ধরণের দুঃশ্চিন্তায় ভুগতে শুরু করে। আসলে মনের মধ্যে সাহস আনলে এই ভয় আর খারাপ প্রভার ফেলতে পারে না’।

তিনি পরামর্শ দেন, ‘যদি কারো দুঃস্বপ্ন দেখার সমস্যা থাকে, অবশ্যই সে কাছের কারো সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। মনের মধ্যে একদমই প্রশ্রয় দেবে না। তাহলেই বড় কোনো ধরণের সমস্যা এড়ানো সম্ভব। কারণ মনের মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তা জমা করে রাখলে এক সময় তা চরম আকারে বিষ্ফোরণ ঘটাতে পারে’।



মন্তব্য চালু নেই