মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ ভারতের প্রথম উপগ্রহ
উৎক্ষেপণের একবছরেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের মঙ্গলযান বুধবার সকালে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। প্রথমবারের চেষ্টাতেই মঙ্গলের মাটিতে পা দিয়ে ইতিহাস গড়েছে ভারতের মহাশূন্য গবেষণা সংস্থার (ইসরো) এই মঙ্গল যান। দেশবাসীকে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ভারতের মঙ্গলযান মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশের পরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইসরোর বিজ্ঞানী ও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘ভারত সফলভাবে মঙ্গলে প্রবেশ করে আজ ইতিহাস তৈরি করেছে।’
উপগ্রহটি খুব শীঘ্রই মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে তথ্য পাঠাতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি ছয় মাস ধরে মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করে সংগ্রহ করা তথ্য ভূমিতে স্থাপিত কেন্দ্রে পাঠাবে।
বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮ টা ২ মিনিটে মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে ভারতের মহাশূন্য যান। ভারতের এই মাহেন্দ্রক্ষণের স্বাক্ষী হতে ইসরোর দপ্তরে স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি ছাড়াও রেল মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া, বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জি এম সিদ্ধেশ্বরী, ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান ড. কে রাধাকৃষ্ণ ও শীর্ষ বৈজ্ঞানিক ইউ আর রাও উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ভারত সফলভাবে মঙ্গলে পৌঁছেছে। সবাইকে অভিনন্দন। অভিনন্দন পুরো দেশকে। আজ ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে।’
মোদি উল্লেখ করেন, প্রায় অসম্ভবকে অর্জন করেছে ভারত। বিশ্বে ৫১টি অভিযানের মধ্যে মাত্র ২১টি সফল হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভারত প্রথমবারেই সফলতা পেয়েছে।
মোদি বলেছেন, এই উৎক্ষেপণের ফলে ভারত অসাধ্য সাধন করল।
বিশ্বের চতুর্থ দেশ আর এশিয়ার প্রথম দেশ হিসাবে ভারত মঙ্গলগ্রহে উপগ্রহ পাঠালো।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও রাশিয়া মঙ্গলগ্রহে উপগ্রহ পাঠিয়েছে। তবে ভারতই একমাত্র দেশ, যারা মাত্র একবারের চেষ্টায় এবং সর্বনিম্ন খরচে উপগ্রহ পাঠালো।
ভারতের স্পেস এন্ড রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) বুধবার ভোরে ব্যাঙ্গালোরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে অভিযানটি পরিচালনা করে।
পুরোপুরি দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি উপগ্রহটি পাঠাতে খরচ হয়েছে চুয়াত্তর মিলিয়ন ডলার। সময় লেগেছে ১৫ মাস।
গত বছরের ৫ নভেম্বর ব্যাঙ্গালোরের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পিএসএলভি-সি ২৫ রকেটে চেপে মঙ্গলগ্রহে পাড়ি জমায় মঙ্গলযান। এর পরে বেশ কিছু দিন পৃথিবীর চার পাশে পাক খেতে খেতে নিজের গতি বাড়াতে থাকে এ মহাশূন্য যান। সবশেষে ১ ডিসেম্বর লালগ্রহের দিকে ছুটতে শুরু করে এটি। দশ মাস ধরে প্রায় ৬৬ কোটি ৬০ লাখ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কাছাকাছি পৌঁছে যায় মঙ্গলযান।
ইসরো জানিয়েছিল, বুধবার সকালেই মঙ্গলের অভিকর্ষের বলয়ে ঢুকবে মঙ্গলযান। পৃথিবীর চারপাশের গ্রহের প্রবল টান মোকাবেলা করে মঙ্গলযানকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে বসিয়ে দেয়ার দায়িত্ব সামলাবে মহাকাশযানের ল্যাম ইঞ্জিন।
তারপর আশা আর আশঙ্কার দোলাচলে প্রতিটা মুহূর্ত কেটেছে ইসরোর বিজ্ঞানীদের। অবশেষে বুধবার সকালে আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মঙ্গলের চার পাশে নির্দিষ্ট কক্ষে বসল মঙ্গলযান। ইতিহাসে নাম উঠল ইসরোর।
মন্তব্য চালু নেই