৭ নভেম্বরকে ঘিরে দ্বন্দ্ব আ.লীগ-বিএনপি-জাসদের
১৯৭৫ থেকেই ৭ নভেম্বরকে ঘিরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ ও তাহের সংসদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিরোধ লেগেই আছে। এ দ্বন্দ্বের কারণে দেশের প্রধান বৃহত্তর দু’টি রাজনৈতিক দল ছাড়াও জাসদ ও তাহের সংসদ এই দিনটিকে ভিন্ন ভিন্ন নামে উদযাপন করছে। ফলে পচাত্তরের পর থেকেই ৭ নভেম্বরকে ঘিরে জনগণের মনে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তেমনি ৭ নভেম্বর নিয়ে রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবীসহ পেশাজীবীদেরও যুক্তি ও তর্কের শেষ নেই।
১৯৭৫ সালের পর থেকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ৭ নভেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে। জাসদ পালন করছে, ‘সৈনিক-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে। কর্নেল তাহের সংসদ দিনটি পালন করছে ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে এবং বিএনপি দিবসটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে।
৭ নভেম্বর প্রসঙ্গে বিএনপির ভাষ্য, ১৯৭৫ সালের এই দিনে আধিপত্যবাদী শক্তির নীলনকশা প্রতিহত করে সিপাহী-জনতা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল। বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জাসদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ক্ষমতালিপ্সু অফিসারদের ক্ষমতা দখল-পুনর্দখলের জন্য পরস্পরবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের এ দিনে সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান ঘটেছিল।
ঘটনাবহুল এ দিনে জড়িয়ে আছে রক্তপাতের ইতিহাস। কাউকে ঝুলতে হয়েছে ফাঁসিতে। প্রাণ দিতে হয়েছে হাজারো সৈনিককে। ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার মাত্র ৭৮ দিন পর সেই অশুভ শক্তিই ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার নেতাকে। এ প্রেক্ষাপটে ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর সামরিক বাহিনীর মধ্যে একাধিকবার অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটে। একপর্যায়ে জিয়াউর রহমান গৃহবন্দি হন। ওইসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ানের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।
৬ ও ৭ নভেম্বর সংঘটিত অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহের। বন্দিদশা থেকে জিয়াকে মুক্ত করেছিলেন তিনি। এরপর অতিদ্রুত নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে আবার সেনাপ্রধানের পদে আসীন হন জিয়াউর রহমান। প্রথমে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ দখল করেন তিনি। এক পর্যায়ে বিচারপতি আবু সা’দত মোহাম্মদ আবু সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি হন তিনি। অন্যদিকে বন্দিদশা থেকে জিয়াকে মুক্ত করেও বাঁচতে পারেননি কর্নেল তাহের। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে কোর্ট মার্শালের বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দেয়া হয় তাকে।
এই দিনে ৭৬ থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা বাতিল করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আবারো ছুটি বহাল করে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে ছুটি আবার বাতিল করে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সে সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নানা কমূসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে দলটি শনিবার সকালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। তবে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এ দিবসটিতে থাকছেন না দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। লন্ডনে অবস্থান করায় তিনি এবার উপস্থিত থাকতে পারছেন না।
বিএনপির দপ্তর থেকে পাঠানো বিবৃতি জানা যায়, শনিবার বিকেল ৩টায় সুপ্রিম কোর্টে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ। এছাড়া সারাদেশে বিএনপি এই দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগ ৭ নভেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিলেও তারা এদিন কোনো কর্মসূচি পালন করবে না। অবশ্য দলের নেতারা সমমনা সংগঠনের আলোচনা সভায় অংশ নেবেন।
অপরদিকে জাসদ ও তাহের সংসদ প্রতি বছরের মতোই আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করবে।
মন্তব্য চালু নেই