আবারো জাতীয় সংলাপের দাবি খালেদার

দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন দলীয় প্রধানের বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশা করবো সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে দেশের এই ক্রান্তিকালে সঙ্কট উত্তরণে গণতন্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রকে সংকোচন না করে কতৃত্ববাদী মনোভাব থেকে সরে এসে জাতীয় সংলাপের সূচনার পরিবেশ উন্মুক্ত করবে, দেশ ও জাতির স্বার্থেই।’

খালেদা জিয়া তার বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণ। সরকার নিজেই এই সঙ্কট সৃষ্টি করেছে- যা ক্রমেই গভীর থেকে গভীরতর হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে অবাধ-নিরপেক্ষ ও সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের সূচনা। এ সঙ্কট উত্তরণে সরকারকে সময় থাকতেই এর উপায় বের করতে হবে। আমাদের দল মনে করে নির্বাচনকালে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনতিবিলম্বে একটি নির্বাচনের আয়োজন এখন জরুরি।’

বিএনপির দাবি দলীয় নয় উল্লেখ করে খালেদা জিয়া তার প্রতিশ্রুতির পুর্নব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের এই দাবিগুলো কোনো দলীয় দাবি নয়, আমাদের এই দাবি জনগণেরও। আমি এর আগেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছি- ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আমরা কোনো হিংসাশ্রয়ী-অসহিষ্ণু রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেব না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয় রাজনীতির প্রভাবের বাইরে কাজ করতে পারবেন।’

এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে- তাদের বিরুদ্ধে আনা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান বিএনপি প্রধান।

সামনে ঘোর অন্ধকার: খালেদা জিয়া

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘ঘরে বাইরে এখন কেউই নিরাপদ বোধ করছেন না। চারদিকে আতঙ্ক, উৎকন্ঠা ও উদ্বেগ গোটা জাতিকে গ্রাস করেছে, যেন সামনে ঘোর অন্ধকার!’

লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপি চেয়ারপারসন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বিবৃতিতে বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সরকার প্রধান অচিরেই আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার পর দেশে আজ এক সর্বগ্রাসী কতৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থায় বিপর্যস্ত। যার ফলশ্রুতিতে শাসকদলের ক্ষমতা নির্ভর দম্ভ উল্লাষিকতা আর প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে মিলে মিশে একনায়কতান্ত্রিক আচরণে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।’

তিনি বলেন, ‘সবাই এখন উপলব্ধি করতে পারছেন, এমনি ধরনের একটি পরিস্থিতিতে দেশ আজ গভীর সঙ্কটেও নিপতিত। এখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দু’জন সদস্য মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছেন। অতি সম্প্রতি দু’জন বিদেশির দুঃখজনক ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর একজন প্রকাশকও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আমি এসব ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করি।’

অসুস্থ ফখরুল কারাগারে বিস্মিত খালেদা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

খালেদা-ফখরুল

লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপি চেয়ারপারসন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সরকার অবনতিশীল আইন পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরার পর তাকে পুনরায় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়ায় আমি বিস্মিত।’

তিনি বলেন, ‘এমন একজন অসুস্থ রাজনীতিককে কারাগারে পাঠানো সরকারের চরম অমানবিক ও অসহিঞ্চু দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়। ইতোমধ্যে আমাদের দলের পক্ষ থেকে তার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং এ মাসের ২৪ তারিখে বিদেশি ডাক্তারের পরামর্শে তার আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারটিও নির্ধারিত ছিল। কারাগারে মির্জা ফখরুলের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাই স্বাভাবিক এবং সরকার জেনে বুঝে একজন অসুস্থ মানুষকে পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করার মধ্য দিয়ে তার জীবনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলেছে।’

খালেদা বলেন, ‘আদালতে হাজিরা দিতে গেলে দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কেও কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরকে এভাবে একের পর এক কারাগারে বন্দি রাখার মধ্য দিয়ে সরকারের দুরভিসন্ধি রয়েছে। আমরা যখন সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে কাউন্সিল করে দলকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি, তার পরপরই সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সরকারের এ ধরনের দমন নিপীড়ন থেকে দলের বয়োজেষ্ঠ্য নেতারাও বাদ পড়ছেন না। আজ বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলা, চার্জশিট, কারাজীবন আর সরকারের দমননীতির শিকারে পরিণত হয়েছেন।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘জনগণের ভোটাধিকার বঞ্চিত করে পাতানো তথাকথিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আজ সরকার জনগণের কাঁধের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। তারা তাদের অপশাসনকে প্রলম্বিত করার আকাঙ্খায় দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতি দেশ-জনগণ-গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির চর্চা করে সরকার দেশের সকল বিরুদ্ধমতকে দমনে আজ বেপরোয়া। তারা শুধু বিএনপিই নয়- নাগরিক সমাজ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান- ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বিরুদ্ধেও সরকারের সমালোচনা করায় ক্ষুব্ধ। এমনকি সরকারী রোষানলের বাইরে গণমাধ্যমও নয়। যারাই সরকারের অপশাসন, দুঃশাসন, দুর্নীতির সমালোচনা করছে- সরকার তাদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত।’



মন্তব্য চালু নেই