ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন, হুমকীর মূখে দ্বীপজেলা
ভোলার মেঘনা- তেতুলিয়া নদীতে চলছে বালু উত্তোলন । ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন নদী থেকে ৪/৫ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে প্রভাবাশালী একটি মহল। উত্তোলিত বালু শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুকুর-নিচু জমি ভরাট, ভবন নির্মাণসহ নানা কাজে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অবাধে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন নদীতে জেলেদের জাল ফেলে মাছ ধরতে অসুবিধা হচ্ছে। অন্যদিকে ভাঙনের কবলে হুমকীর মুখে পড়েছে দ্বীপজেলা ভোলা। ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনার সিসি ব্লক ও বেড়িবাঁধ প্রকল্প। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বহুবার আলোচিত হলেও এ বিষয়ে প্রশাসন তেমন কোন কর্নপাত করছে না। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান করে ড্রেজারসহ কয়েক শ্রমিককে আটক করে দু-এক হাজার টাকা জরিমানার মাধ্যমে তা আবার ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
অপরদিকে স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালী একটি মহল বালু উত্তোলনের কাজে জড়িত থাকার কারণে প্রশাসন তাদেরকে কিছু বলছেনা। সম্পতি বর্ষা মৌসুমে মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে ইলিশা ফেরিঘাট ও ঘাটের সংযোগ সড়কের সাড়ে তিন কিলোমিটার সহ ওই অঞ্চলের প্রায় ৫ কিলোমিটার একালা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জিও ব্যাগ আর বালির বস্তা দিয়ে শত চেষ্টার পরও ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি এলাকাবাসী। বর্তমানে ভাঙ্গনের তীব্রতা কমতে না কমতেই শুরু হয়েছে ওই অঞ্চলে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের মেঘনা নদীর মাঝে রাকিব ড্রেজার-৩, এমবি ভাই ভাই, সোনারগাঁও সহ বেশ কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে মেঘনা নদীর মধ্য থেকে বালু তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি ড্রেজারের মাধ্যমে উত্তোলিত বালু নদী থেকে বেশ কয়েকটি (বালুবাহী কার্গো) দিয়ে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। সোনারগাঁও ড্রেজারের সুপারভাইজার নুর হোসনে জানান, লক্ষ্মীপুর জেলার মজু চৌধুরীর হাট এলাকার আলমগীর মেম্বারসহ ভোলার একটি প্রভাবশালী মহল নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর-নিচু জমি ভরাট ভবন নির্মাণসহ নানা কাজে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছেন। তিনি আরো জানান, ১০-১৫ দিন হয়েছে তারা এখানে বালু তুলছে। নদী থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ লাখ ফুট বালু তুলছেন। চুক্তির ভিত্তিতে তারা ভোলার মেঘনা নদী থেকে ড্রেজিং দিয়ে বালু তুলছেন। প্রতি ফুট বালুর মূল্য ৫০ পয়সা হিসেব নির্ধারণ করে যে বালু উত্তোলিত হয় তার অর্ধেক বালুর মূল্য তাদেরকে দিতে হবে। তবে প্রশাসনেরস পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনের কোন অনুমতি পত্র তাদের কাছে নেই বলেও জানান তারা। একই ভাবেই ভোলার তেতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে বালু উত্তোলনের কাজ। স্থানীয় একটি সূত্র জানান, নদী থেকে বালু উত্তোলন করে প্রতি ফুট বালু বিক্রি করছে ৪-৫ টাকা মল্যে। সে হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন ভোলার চারপাশের মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে ৮-১০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে। যার বিক্রি মূল্য ৪ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। আনোয়ার হোসনে নামের ভোলার এক বালু ব্যবসায়ী বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন করে যে বালু পুকুর ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হয় সেই বালুর নাম ভিডি বালু। এ বালুর মূল্য প্রতি ফুট ৫ টাকা। নদীর উত্তোলিত যে বালু নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয় সেই বালুর নাম টোক বালু। এ বালুর মূল্য প্রতি ফুট ১৪ টাকা। রাকিব ড্রেজার-৩ এর ম্যানজোর মতিউর রহমান, বাবুল মেম্বার ও শরিফ মোল্লা তাদেরকে ভোলায় বালু তোলার জন্য এনেছেন। বর্ষা শেষ হতেই তারা এখানে নদী থেকে বালু তুলছেন। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল হেকিম জানান, ভোলার মেঘনা থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে বরাবরের মতো বালু উত্তোলনের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নখদর্পনে নির্বাহী ম্যাজিট্রেটের মাধ্যমে সরেজামিনে অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে জারিমান ও সাজা দেয়ার কথা বললেন জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা। তিনি বলেন, মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন অবৈধ। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য চালু নেই