‘ইনকিলাব’ থেকে ‘অমিতাভ’ হয়ে ওঠার গল্প

অমিতাভ বচ্চন। ভারতীয় উপহমহাদেশে একটি জনপ্রিয় নাম, এবং শ্রদ্ধারও। একজন মেইনস্ট্রিম সিনেমার নায়ক হয়েও তিনি সকলের কাছে ব্যক্তিত্ববান একজন মানুষ হিসেবে স্বীকৃত। শুধু সিনেমা সম্পর্কিত বিষয়েই নয়, অমিতাভ আজ সমানভাবে সরব ভারতীয় শিল্প, সাহিত্য, আর সংস্কৃতির জগতেও। আর থাকবেইনই বা না কেন্, অমিতাভ মানেই যে ‘যেখানে আঁধার, সেখানেই আলো জ্বালিয়ে দেয়া’! অথচ তার নাম প্রথমে অমিতাভই ছিল না!

১৯৪২ সাল। পুরো উপমহাদেশ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। দফায় দফায় ব্রিটিশ শাসকদের সাথে চলছে ভারত আর পাকিস্তানি নেতাদের চলছে বৈঠক। সাম্রাজ্যবাদের কড়াল থাবা থেকে নেতাদের বৈঠকে কোনো আশা না দেখে আগেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে মাস্টার দ্য সূর্য সেন, প্রীতিলতা, খুদিরাম, প্রফুল্ল রায়ের মত তরুণ দেশ নেতারা। তারা পুরো ভারতে নিজেদের জীবনের বিনিমেয়ে ইতিমধ্যে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ জারি করে দিয়েছেন। আর এই যুদ্ধে শারিরিক, মানসিকভাবে যুক্ত হয়েছেন নিষ্পেষিত জনতা। শিক্ষক, ডাক্তার,কবি, শিল্পীরা দেশাত্মবোধের আহ্বানে যোগ দিয়েছেন সেইসব তরুণ নেতাদের জারি করে দেয়া দেশ উদ্ধারের যুদ্ধে। তাদের মধ্যে ভারতের উত্তর প্রদেশের এক কবি হরিবংশ বচ্চনও যুক্ত হন।

মনে প্রাণে আশা করেন, ব্রিটিশ বেনিয়াদের কবল থেকে নিজের দেশমাতাকে উদ্ধার করতে। কিন্তু তার যেহেতু সম্মুখ সমরে গিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে মাস্টার দ্য সূর্য সেন কিংবা প্রফুল্লর মত ব্রিটিশ বিরোধী যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার ক্ষমতা নেই, তাই তিনি কবিতার মধ্য দিয়েই দেশপ্রেমের কথা বলেন। তার লেখায় থাকে দেশমাতৃকার প্রতি পরম মমতা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই দাউ দাউ করে জ্বলে শোষণের প্রতি চরম ঘৃণা। এই সময়ে হরিবংশের স্ত্রী তেজির গর্ভে আসে ফুট ফুটে এক ছেলে সন্তান। দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে যে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হল, দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসা আর ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামকে সম্মান জানিয়ে হরিবংশ ছেলের নাম রাখেন ‘ইনকিলাব’।

সেসময় ‘ইনকিলাব’ শব্দটি ব্রিটিশ বিরোধী একটি প্রতিবাদী শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হত। যারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম জারি রেখেছিলেন, তাদেরকে সমর্থন দিতে বলা হত ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। যার অর্থ দাঁড়ায় ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হউক’। একজন কবির কাছে দেশমাতৃকার প্রতি প্রেম আর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতি ঘৃণা প্রকাশের মাধ্যম হয়ে ‘ইনকিলাব’ নাম দিয়ে বড় হতে থাকে পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশের এক বিখ্যাত মানুষ, অমিতাভ বচ্চন।

কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে হরিবংশ রাই আরেক কবি বন্ধু সুমিত্রনন্দের কথায় নাম পরিবর্তন করেন, কারণ সুমিত্রকে খুব ভালোবাসতেন হরিবংশ। ফলে কতার কথাকে সম্মান জানিয়ে ‘ইনকিলাব’-এর পরিবর্তে সুমিত্রনন্দনের কথায় হরিবংশ তার ছেলের নাম দেন ‘অমিতাভ’। অমিতাভ মানে যে আলো কখনো নিভে না। ১১ অক্টোবর বিগ বি অমিতাভ বচ্চন পা দিলেন ৭৩ বছরে, এই জীবনে তিনি যে কীর্তি গড়েছেন সত্যি সত্যি তা নিভে যাওয়ার মতো না। পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে, যতদিন ভারতীয় চলচ্চিত্র টিকে থাকবে ঠিক ততদিনই টিকে থাকবেন শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনের নাম!



মন্তব্য চালু নেই